Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

Abhishek Banerjee: ঠিকাদারি করলে তৃণমূলে নয়, দাদাদের জল বয়ে মিলবে না পঞ্চায়েতের টিকিট, বার্তা অভিষেকের

ঠিকাদারি করলে তৃণমূল করা যাবে না। সাফ জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

১২ জুলাইয়ের মঞ্চে বৃষ্টিতে ভিজে বক্তৃতা করছেন অভিষেক।

১২ জুলাইয়ের মঞ্চে বৃষ্টিতে ভিজে বক্তৃতা করছেন অভিষেক। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ১৬:০৯
Share: Save:

ঠিকাদারি করলে তৃণমূল করা যাবে না। ‘দাদা’-দের জল বইলে পাওয়া যাবে না পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে স্পষ্ট করে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই তৃণমূল ‘অন্য’ তৃণমূল।

দুপুরে ধর্মতলার সভামঞ্চে যখন অভিষেক পৌঁছন, তখন বক্তৃতা করছিলেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেককে মঞ্চে দেখে উপস্থিত কর্মীরা হাততালির ঝড় তোলেন। তার জেরে কিছুক্ষণের জন্য বক্তৃতা থামিয়ে দেন সুদীপ। কর্মী-সমর্থকদের দিকে হাত নেড়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন অভিষেক। তবে নিজের বক্তৃতায় বলেন, ‘‘আমি মঞ্চে আসার সময় আপনারা হাততালি দিলেন। কিন্তু ওই হাততালিটা আমরা যারা মঞ্চে আছি, তাদের জন্য নয়। ওই হাততালিটা আপনাদের প্রাপ্য! কারণ, আপনারাই লড়াই করে তৃণমূলকে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছেন।’’ পাশাপাশিই অভিষেক বলেন, ‘‘মাথায় রাখবেন, এই দলে নেতাদের চেয়ে কর্মীদের মান-মর্যাদা-সম্মান অনেক বেশি।’’

অভিষেকের বক্তৃতা শুরু সময়েই তুমুল বৃষ্টি নামে। ছাতা মাথায় পোডিয়ামের দিকে এগিয়ে যান অভিষেক। তার পর মাথায় ছাতা ধরে রেখেই জনতাকে বলেন, ‘‘আমি তো শুধু চারদিকে ছাতাই দেখছি! আপনাদের কারও মুখই তো দেখতে পাচ্ছি না! আপনারা কী চান? আমি ছাতা সরাব? আমি ছাতা সরালে কিন্তু আপনাদেরও ছাতা সরাতে হবে।’’ বলেই নিজের মাথার ছাতাটি সরিয়ে নেন অভিষেক। তার পর আগাগোড়া প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই বক্তৃতা করেন তিনি।

বক্তৃতায় প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপিকে কড়া আক্রমণ করেছেন অভিষেক। কিন্তু পাশাপাশিই নিজের দলের নেতা-কর্মীদেরও কড়া বার্তা দিয়েছেন। আরও একবার জানিয়ে দিয়েছেন, ঠিকাদারি করলে তৃণমূল করা যাবে না। অভিষেকের কথায়, ‘‘তৃণমূল করতে গেলে মানুষকে প্রাধান্য দিতে হবে। দৃপ্তকণ্ঠে বলছি, দলীয় অনুশাসন মানতে হবে। তৃণমূল কারও করে খাওয়ার জায়গা নয়। লড়াই, সংগ্রাম করে নেত্রীর আদর্শকে নিয়ে চলা। নির্ভয়ে, নির্লোভে তৃণমূল করতে হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজকের তৃণমূল অন্য তৃণমূল। এই তৃণমূলে মিরজাফর নেই, গদ্দার নেই, ধান্দাবাজরা নেই। এই তৃণমূল বিশুদ্ধ লোহার মতো। যত বেশি আঘাত করবেন, তত বেশি শক্ত হবে! যারা ভেবেছিল, কয়েকটা নকুলদানা নিয়ে গিয়ে তৃণমূলকে দুর্বল করবে, তারা ভুল ভেবেছিল!’’

এর পরেই দলের অন্যতম প্রধান সংগঠকের হুঁশিয়ারি, ‘‘যোগ্যতার নিরিখে পঞ্চায়েতের টিকিট পাবেন। আপনাকে মানুষ সার্টিফিকেট দিলে পঞ্চায়েতের টিকিট পাবেন। নইলে যত বড় নেতাই আপনার কথা বলুন, আপনি টিকিট পাবেন না। দাদার জল বয়ে টিকিট পাবেন না। যে কোনও দাদার ছত্রছায়ায় থাকুন না কেন, টিকিট পাওয়া যাবে না। মানুষের কাছে থাকলেই টিকিট পাওয়া যাবে। মানুষের হয়ে কাজ করলেই টিকিট পাওয়া যাবে।’’

এর পরেও আগে-বলা হুঁশিয়ারির পুনরাবৃত্তি করেন অভিষেক, ‘‘আমি আগেই বলেছি, ঠিকাদারি করলে তৃণমূল করা যাবে না!’’

তবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে যে লড়াই শুরু হল, তা শুধু পঞ্চায়েতের লড়াই নয়। অভিষেকের কথায়, ‘‘এটা দিল্লিতে একটা গণতান্ত্রিক এবং গঠনমূলক সরকার গঠনের লড়াই। এই সমাবেশ থেকে সেই লড়াই শুরু হল।’’

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই অভিষেকের বক্তৃতা শুনছেন কর্মা-সমর্থকেরা।

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই অভিষেকের বক্তৃতা শুনছেন কর্মা-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

সেই সূত্রেই অভিষেক বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল ভিন রাজ্যেও লড়াই করবে। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে মানুষকে জনসমর্থনকে পাথেয় করে জিততে হবে। তারপর লোকসভা। বাংলাতে তো লড়াই হবেই! বাইরের লোকসভাতেও লড়বে তৃণমূল। মেঘালয়া, ত্রিপুরা, গোয়ায় বুক চিতিয়ে লড়াই করব। যেখানে দরকার, আমি যাব। এক ছটাক জমি ছাড়ব না!’’

কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যের টাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার প্রাপ্র্য সাড়ে ন’হাজার কোটি আটকে রেখেছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, মোদীজিকে বলে টাকা বন্ধ করে দিয়েছি! আমি এটাই চেয়েছিলাম। বাংলার মানুষ দেখুন, কারা তাঁদের ভাল চায় না।’’ কিন্তু অভিষেক স্পষ্ট করে দেন, ‘‘দিল্লির কাছে হাত পাততে রাজি নই। বাংলার মানুষ বাংলার অর্থ পাবেন। আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের মত আত্মসমর্পণ করব না। মেরুদন্ড বিকিয়ে দেব না।’’ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘আপনাদের এলাকার রাস্তা, হাসপাতাল, পার্কের জন্য যিনি টাকা দিয়েছেন, সেগুলো তাঁর (সাংসদ বা বিধায়ক) নামে হওয়া উচিত, না এলাকাবাসীর নামে হওয়া উচিত? ওরা বলছে, ওদের প্রধানমন্ত্রীর নামে সড়ক যোজনা, আবাস যোজনা করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তো বাংলার নামে বাংলার রাস্তা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নামে করতে হবে কেন? জোরগলায় বলছি, প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রকল্প হবে না! প্রকল্প হলে বাংলার নামে হবে। না হলে আমাদের আপনাদের টাকার দরকার নেই।’’

অভিষেকের পরেই বক্তৃতা করার কথা ছিল মমতার। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বক্তৃতা শুরু করেন অভিষেক। বলেন ২০ মিনিটের কিছু বেশি। মমতা সভাস্থলে এসে পড়ার পর আর বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেননি অভিষেক। মমতা মঞ্চে ওঠার সময় তিনি স্লোগান দেন। সে সব স্লোগানের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিল, ‘‘জয় বাংলা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Abhishek Banerjee 21 July Rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE