Advertisement
E-Paper

‘কাল থেকে হোর্ডিং বদলে কেওড়াতলা অ্যাপোলো হাসপাতাল করে দেব?’

বেসরকারি হাসপাতালগুলির অনিয়ম নিয়ে দু’দিন আগেই কার্যত গণ শুনানি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সতর্ক করেছেন হাসপাতালগুলির কর্ণধারদের। আর শুক্রবার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে জনসমক্ষে শাসানি দিলেন শাসক দলের নেতা মদন মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৫

বেসরকারি হাসপাতালগুলির অনিয়ম নিয়ে দু’দিন আগেই কার্যত গণ শুনানি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সতর্ক করেছেন হাসপাতালগুলির কর্ণধারদের। আর শুক্রবার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে জনসমক্ষে শাসানি দিলেন শাসক দলের নেতা মদন মিত্র। হাসপাতালের মহিলা কর্ণধারকে ‘রক্তচোষা ড্রাকুলা’ বলতেও কসুর করলেন না। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের গাফিলতির সম্ভাবনা স্বীকার করেও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর এহেন ভূমিকা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত ডানকুনির বাসিন্দা সঞ্জয় রায়কে বহু বাগবিতণ্ডার পরে বৃহস্পতিবার রাতে অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে এনেছিলেন তাঁর আত্মীয়েরা। এ দিন সকালে তিনি মারা যান। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পরে এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে ক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁর নিকটজনেরা। সেই খবর পাওয়ামাত্র সেখানে পৌঁছন মদন। সব শুনে সটান ফোন করেন অ্যাপোলো হাসপাতালের কর্তা রাণা দাশগুপ্তকে।

সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে অ্যাপোলো-কর্তাকে রীতিমতো গলা চড়িয়ে মদন বলেন, ‘‘হাসপাতাল চালানোর নামে শ্মশান খুলে রেখেছেন আপনারা। আপনাদের সিইও বারবার হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। ওঁকে বলুন শ্মশান খুলে রাখার থেকে অন্য কোথাও চলে যান।’’ ফোনের ও-পার থেকে কী জবাব আসছিল তা বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু মদন বলে চলেন, ‘‘কাল থেকে হাসপাতালের সামনের হোর্ডিং বদলে কেওড়াতলা অ্যাপোলো হাসপাতাল করে দেব? দেখতে চান? অ্যাপোলো রোগীকে আটকে রাখার কে? ওই পরিবারের কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ যত টাকা নিয়েছেন, অবিলম্বে সেটা ফেরত দিন।’’

মদনের এই হুমকির কিছু ক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফের ফোন করে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মৃতের চিকিৎসার খরচ মকুব করা হয়েছে। তাতেও শান্ত হননি মদন। ওই হাসপাতালের মহিলা কর্ণধারের নাম করে তিনি বলেন, ‘‘ওরা চামার, রক্তচোষা ড্রাকুলা। টাকা ফেরত দিলেই পাপ ধুয়ে যায় না। আজ তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি হলে এত ক্ষণে অ্যাপোলো হাসপাতালের সামনে কবরখানা খুলে দিতাম।’’

আরও পড়ুন:

ব্লাড দিচ্ছি বেচুন মেয়েটাকে ছাড়ুন

এ রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ বিস্তর। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাদের সতর্ক করেছেন মমতা। অনিয়ম ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থার তোড়জোড় শুরু হয়েছে সরকারি মহলেও। কিন্তু মদনের এ দিনের হুমকির পরে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি এ সব বলার কে! কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে প্রশাসন তা খতিয়ে দেখবে। হাসপাতালের দোষ থাকলে তারাই ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু মদন তো এখন রাজ্যের মন্ত্রী নন। এমনকী বিধায়কও নন। বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এ দিন মদন যে পথ দেখালেন তাতে শাসক দলের ছোট-মাঝারি নেতারাও এ বার নানা ছুতোনাতায় তাঁদের হুমকি দিতে থাকবেন। ঠিকভুল বিচারের আগেই তাঁদের উস্কানিতে জনরোষের শিকার হওয়ার ভয়েও ভুগছে রাজ্যের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল।

কী বলছে শাসক দল?

তৃণমূলের তরফে প্রকাশ্যে এ দিন কোনও মন্তব্য করা হয়নি। আলাদা করে মদনকে কিছু বলা হয়েছে, এমন খবরও নেই। বস্তুত, মদন খোলাখুলিই দাবি করেছেন, ‘‘দিদি বা দলের কেউ আমাকে কিছু বলেননি।’’ সন্ধ্যার পরে মমতার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে এ দিন যা করেছেন, তা ফের করবেন। আর ঘরোয়া আলোচনায় মদনকে কার্যত সমর্থনই করেছেন তৃণমূলের এক শীর্ষ সারির নেতা। তাঁর মতে, রোগীর পরিবারের হয়ে কথা বলছিলেন মদন। আসলে কাউকে এ ভাবে মারা যেতে দেখে মাথার ঠিক থাকে না।

তৃণমূলের একাংশ অবশ্য বলছে, সহানুভূতি নয়, রাজনীতির অঙ্ক কষেই সরব হয়েছেন মদন। তিনি এক সময়ে এসএসকেএম হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির নেতা ছিলেন। তাঁর জেলযাত্রার পরে গোড়ায় ফিরহাদ হাকিম ও পরে অরূপ বিশ্বাসকে ওই সমিতির মাথায় বসানো হয়। শাসক দলের অনেকের মতে, এসএসকেএমে দাপট ফিরে পেতেই মদনের যাবতীয় হম্বিতম্বি!

Madan Mitra Threat Apollo Gleneagles Hospital tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy