Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বাবা-সহ খুন বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতাকে, আটক ৬

চাষ জমিতে জল দেওয়ার জন্য শনিবার রাতে বাবাকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা। সেই রাতেই জমি সংলগ্ন ডোবার পাড়ে খুন করা হল তৃণমূল নেতাকে। ডোবার জল থেকে উদ্ধার হল বৃদ্ধ বাবার ক্ষতবিক্ষত দেহ-ও। বাঁকুড়ার ইঁদপুর থানার হাটগ্রাম এলাকার ওই ঘটনায় নিহতেরা হলেন, বিকাশ দত্ত (৪৮) ও মুকুন্দ দত্ত (৭০)।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
ইঁদপুর (বাঁকুড়া) শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

চাষ জমিতে জল দেওয়ার জন্য শনিবার রাতে বাবাকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা। সেই রাতেই জমি সংলগ্ন ডোবার পাড়ে খুন করা হল তৃণমূল নেতাকে। ডোবার জল থেকে উদ্ধার হল বৃদ্ধ বাবার ক্ষতবিক্ষত দেহ-ও।

বাঁকুড়ার ইঁদপুর থানার হাটগ্রাম এলাকার ওই ঘটনায় নিহতেরা হলেন, বিকাশ দত্ত (৪৮) ও মুকুন্দ দত্ত (৭০)। বিকাশবাবু তৃণমূলের হাটগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি। নিহতেরা পেশায় শঙ্খশিল্পী। এই খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসাবে হাটগ্রামেরই বাসিন্দা বাপি প্রামাণিক-সহ বেশ কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “মৃতের পরিবারের তরফে সাত জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। আমরা ছ’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি।” এ দিন ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়।

মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার গ্রামের একটি পুজোর ভাসানে যাওয়ার কথা ছিল বিকাশবাবুর। তার আগে, রাত ৮টা নাগাদ তিনি বাবাকে নিয়ে যান বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরের চাষজমিতে। দু’জনে হেঁটেই গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল কুড়ুল ও টর্চ। অনেক রাত পর্যন্ত তাঁরা না ফেরায় বিকাশবাবুর দুই ভাইপো তাঁদের খোঁজে জমির দিকে যান। পথে শ্মশান পেরিয়ে একটি ডোবা সংলগ্ন পাথরে তাঁরা চাপ হয়ে থাকা রক্তের দাগ দেখতে পান। সেই দাগ অনুসরণ করে তাঁরা ডোবার পাড়ে গিয়ে বিকাশবাবুর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর গলায় ছিল ধারালো অস্ত্রের কোপ।

খবর যায় ইঁদপুর থানায়। পুলিশ তলাশি শুরু করলে ডোবার অদূরেই মুকুন্দবাবুর চশমা দেখতে পায়। এরই মধ্যে ডোবায় ভেসে ওঠে মুকুন্দবাবুর দেহ। তাঁরও গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপের দাগ ছিল। বিকাশবাবুর হাতে একটি লোহার ‘পাঞ্চ’ ছিল। তাঁর খুড়তুতো দাদা মলয় দত্ত বলেন, “বিকাশ আত্মরক্ষার জন্য সবসময় ওই ‘পাঞ্চ’ সঙ্গে রাখত। মনে হচ্ছে, খুনের আগে ও কিছুক্ষণ লড়াই করেছিল।”

খুনের কারণ নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। বিকাশবাবুর দাদা নীতীশ দত্তের দাবি, গ্রামেরই বাসিন্দা বাপি প্রামাণিকের সঙ্গে বিকাশের ঝামেলা ছিল। গ্রামে বাপির সেলুন আছে। কয়েক বছর আগে গ্রামের এক ব্যক্তি ও বাপির মধ্যে জমি নিয়ে বিবাদে মধ্যস্থতা করেছিলেন বিকাশবাবু। তার পর থেকেই বাপির রাগ ছিল ওই তৃণমূল নেতার উপরে। গত বছর ভাসানের দিন হওয়া ঝামেলায় বাপিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কয়েক মাস আগেও জামিনঅযোগ্য ধারায় বাপিকে ধরে পুলিশ। প্রায় তিন মাস জেল খেটে বাপি মুক্তি পান মাসখানেক আগে। নিহতদের পরিবার পুলিশকে জানিয়েছেন, জেল থেকে বেরিয়ে গ্রামে ফিরেই বিকাশবাবুকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন বাপি। গ্রামবাসীদের একাংশও জানাচ্ছেন, বাপি নানা অসামাদিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। নীতীশবাবু বলেন, “বাপি এক সময় তৃণমূল করত। বছর তিনেক হল সে দল ছেড়েছে। এখন সে কখনও সিপিএম কখনও বিজেপি-র লোকেদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে।” ইঁদপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি অসিত লায়েকেরও দাবি, বাপি পঞ্চায়েত ভোটের সময় সিপিএমের হয়ে প্রচার করেছে। আবার লোকসভায় বিজেপি-র হয়ে খেটেছে।

এ দিন গ্রামে গিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ ও সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, বিকাশবাবু এলাকায় দলের ভাল সংগঠক ছিলেন। সিপিএম-বিজেপি চক্রান্ত করে খুন করেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “হাটগ্রামে বাপি প্রামাণিক নামে আমাদের কোনও কর্মী নেই। যত দূর জানি, ও তৃণমূল করে। তদন্তকে ভুল পথে চালনা করতেই এই সব মিথ্যা কথা রটাচ্ছে শাসকদল।” বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকারের দাবি, “বিকাশ ও বাপি তৃণমূলের দু’টি আলাদা গোষ্ঠীর লোক। পুজোর কিছুদিন আগেও দুই গোষ্ঠীর ঝামেলা হয়েছিল। সেই বিবাদেই এই খুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE