E-Paper

সন্দেশখালি: এখনও অধরা শেখ শাহজাহান, পুলিশের বিরুদ্ধে ‘কমজোরি ধারা’ দেওয়ার অভিযোগ ইডির

শাহজাহান কি সত্যিই এলাকায় রয়েছেন? বিরোধীরা ছাড়াও স্থানীয় লোকজনের একাংশেরও কিন্তু তেমনই দাবি। একটি সূত্রে এ-ও দাবি, ‘ট্র্যাক’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নিজের মোবাইল বন্ধ রেখেছেন শাহজাহান।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:২২
Shahjahan Sheikh

শেখ শাহজাহান। —ফাইল চিত্র।

রাজ্য পুলিশের ডিজি কড়া বার্তা দিয়েছেন। তার পরেও ২৪ ঘণ্টায় সন্দেশখালির ঘটনার অন্যতম মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে ধরতে পারল না পুলিশ। উল্টে, শুক্রবারের ঘটনায় যে সব ধারা এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে: গ্রেফতার করলেই বা কতক্ষণ তাঁকে ধরে রাখতে পারবে পুলিশ? ‘কমজোরি ধারা’ দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে ইডি-র তরফেও। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে অফিসারদের সঙ্গে ইডি-র ডিরেক্টর রাহুল নবীনের বৈঠকে উঠেছে শাহজাহানের প্রসঙ্গ। তাঁর খোঁজে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-এর প্রসঙ্গও উঠেছে বৈঠকে। ইডির এক কর্তা জানান, শাহজাহানের নানা ডেরা, বাংলাদেশ সীমান্তে তাঁর অবৈধ নানা ব্যবসার বিষয়েও খোঁজ নিয়েছেন রাহুল।

বিরোধীরা অবশ্য অভিযোগ করছেন, শাহজাহান এলাকাতেই রয়েছেন। ঘুরেও বেড়াচ্ছেন স্বচ্ছন্দে। এ দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, ‘‘শাহজাহান কোথায় আমি জানি। অথচ, পুলিশ জানে না।’’ জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘শুভেন্দুর সঙ্গে তো শাহজাহানের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে শাহজাহানের গতিবিধি সম্পর্কে উনি তো জানবেনই।’’

শাহজাহান কি সত্যিই এলাকায় রয়েছেন? বিরোধীরা ছাড়াও স্থানীয় লোকজনের একাংশেরও কিন্তু তেমনই দাবি। একটি সূত্রে এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, ‘ট্র্যাক’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নিজের মোবাইল বন্ধ রেখেছেন শাহজাহান। তবে তাঁর যে নিজস্ব বাইক-বাহিনী আছে, তাদের সাহায্যে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এলাকায় ঘোরার ক্ষেত্রেও তাঁকে বিশেষ বাধা পেতে হচ্ছে না বলেই একাংশের দাবি। যদিও শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগির মঙ্গলবারও টেলিফোনে বলেন, ‘‘শুক্রবারের পর থেকে দাদার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি।’’

যে নেতা এলাকায় ঘুরছেন বলে অনেকেরই দাবি, তাঁকে কেন ধরা যাচ্ছে না? বিশেষ করে সোমবার ডিজির কড়া বার্তা এবং মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট তলবের পরেও শাহজাহানের খোঁজ না মেলায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শাহজাহানকে ধরলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে, সে সব মাথায় রেখে ধাপে ধাপে এগোনো হচ্ছে।

এই সূত্রে প্রশ্ন উঠেছে শাহজাহানের বিরুদ্ধে দেওয়া আইনের ধারা নিয়েও। একটি সূত্রের খবর, ৫ তারিখ ন্যাজাট থানায় তিনটি এফআইআর রুজু হয়েছিল। একটি ইডির অভিযোগের ভিত্তিতে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আর একটি মামলা করে হামলার ঘটনায়। আর একটি মামলা হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। দায়ের
করেন শাহজাহানের বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক জন।

পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যে মামলা রুজু করেছে, সেখানে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯ (অবৈধ জমায়েত), ৪২৭ (ক্ষতি), ৩২৩ (ধাক্কা বা চড় মারা), ৫০৬ (খুনের হুমকি), ৩৪ (একই উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া) ধারাগুলি দেওয়া হয়। এ ছাড়া আছে ৩ পিডিপিপি আইন। সবগুলিই জামিনযোগ্য ধারা। জামিন অযোগ্য ধারা (৩৫৩) বলতে সরকারি কাজে বাধাদান। ইডির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির যে সব ধারায় মামলা রুজু করেছে, তা ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯ (অবৈধ জমায়েত), ১৮৬ (আইন অমান্য করা), ৩২৩ (ধাক্কা, চড় মারা), ৪২৭ (ক্ষতি করা), ৫০৬ (খুনের হুমকি), ৩৪ (একই উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া) ধারায় করা। এ ছাড়া ৩ পিডিপিপি আইনে সরকারি কাজে বাধাদানের ধারা। শাহজাহান ধরা পড়লেও এই ধারাগুলিতে তাঁকে কতটা বেগ দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আইনজীবী মহলের মতে, জামিন অযোগ্য ধারা হলেই যে জামিন হয় না, এমনটা নয়। বিষয়টি কিছুটা আদালতের বিবেচনার উপরে নির্ভর করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সব ধারা থাকলেও আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পাওয়া যায়।

তবে এ দিন সন্দেশখালির রাস্তায় প্রচুর পুলিশ চোখে পড়েছে। কলকাতা থেকে সুন্দরবনগামী বাসন্তী হাইওয়েতে নাকা চেকিং বেড়েছে। রাস্তার একাধিক যায়গায় পুলিশ মোটরবাইক, চার চাকা গাড়ি, অটো দাঁড় করিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। এই নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী কটাক্ষ, ‘‘ও সব নাটক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লোকদেরকে কি ডিজি গ্রেফতার করতে পারবেন?’’ এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি জেলা পুলিশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shahjahan Sheikh sandeshkhali TMC ED

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy