Advertisement
E-Paper

অশোকের ইফতারে এ বার ইমরান, বিব্রত বামেরাই

সান্ধ্য আসরে অতিথিরা তখন এসে পৌঁছচ্ছেন এক এক করে। ছোট ছোট জটলায় চলছে প্রীতি বিনিময় এবং নিখাদ আড্ডা। উদ্যোক্তারা ব্যস্ত তদারকিতে। হঠাৎই বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য দফতর প্রাঙ্গনে প্রবেশ ঘটল রাজ্যসভার এক তৃণমূল সাংসদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৩
ইফতারের আসরে অশোক ঘোষের সঙ্গে ইমরান (বাঁ দিকে)। রয়েছেন রেজ্জাক মোল্লাও। রবিবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।

ইফতারের আসরে অশোক ঘোষের সঙ্গে ইমরান (বাঁ দিকে)। রয়েছেন রেজ্জাক মোল্লাও। রবিবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।

সান্ধ্য আসরে অতিথিরা তখন এসে পৌঁছচ্ছেন এক এক করে। ছোট ছোট জটলায় চলছে প্রীতি বিনিময় এবং নিখাদ আড্ডা। উদ্যোক্তারা ব্যস্ত তদারকিতে। হঠাৎই বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য দফতর প্রাঙ্গনে প্রবেশ ঘটল রাজ্যসভার এক তৃণমূল সাংসদের। মাথার টুপি হাতে নিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে তিনি এগিয়ে গেলেন অন্য অতিথিদের দিকে। কাষ্ঠহাসিতে শুভেচ্ছা ফিরিয়ে অতিথিরা তখন চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়তে পারলে বাঁচেন! আড়ষ্ট উদ্যোক্তা দলের নেতাদেরও দফতরের আনাচে-কানাচে অন্তর্ধান ঘটল দ্রুত!

নিজের দফতরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে তাঁর বন্দনা গেয়ে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ বাম শিবিরের অস্বস্তি ডেকে এনেছেন সদ্য। তার ৭২ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অশোকবাবুর ইফতার-আসরকে ঘিরে আরও বড় অস্বস্তি এসে হাজির হল ফ ব দফতরে! এবং সেই সঙ্গে বাম শিবিরেও। ফ ব-র প্রবীণ রাজ্য সম্পাদকের আয়োজিত ইফতারে রবিবার অতিথি হিসাবে দেখা গেল তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান (ইমরান)-কে। সারদা-কাণ্ডে যাঁর নাম জড়ানোয় বিতর্ক এখনও টাটকা। দেশদ্রোহিতার মতো গুরুতর অভিযোগেও যাঁর নাম জড়িয়ে চর্চা হয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলন, শাসক দলের সেই বিতর্কিত চরিত্রই কী ভাবে বামফ্রন্টের একটি শরিক দলের দফতরে তাঁদের সঙ্গে আমন্ত্রিত হলেন, ভেবে বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ বাম নেতারা। উপস্থিত প্রায় সব বাম নেতাকেই এ দিন সন্ধ্যায় দেখা গিয়েছে তৃণমূলের সাংসদের সঙ্গে ছবি উঠে যাওয়ার সুযোগ সন্তর্পণে এড়িয়ে চলতে! আর ফ ব-র নেতারাও কিংকর্তব্যবিমূঢ়!

বাম দলগুলির মধ্যে ফ ব-ই প্রতি বছর রমজানের সময়ে নিজেদের দফতরে ইফতারের আয়োজন করে থাকে। অশোকবাবুর আমন্ত্রণে বেশ কয়েক বছর ধরেই ইফতারে আসেন হাসিম আব্দুল হালিম, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বা কখনও বিমান বসুরা। এ বার অবশ্য আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও সিপিএম বা সিপিআইয়ের কেউ আসেননি। সিপিএমের সঙ্গে দলীয় সম্পর্ক চুকে গিয়ে নতুন দল গড়ে-ফেলা রেজ্জাক অবশ্য এসেছিলেন। ছিলেন আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ডিএসপি-র নজরুল ইসলাম, সংখ্যালঘু যুব ফে়ডারেশনের নেতা মহম্মদ কামারুজ্জামানেরাও। সহ-অতিথি হিসাবে ইমরানকে দেখে রেজ্জাক বা মনোজবাবুরাও চরম বিব্রত হয়েছেন! রেজ্জাক নিজেও কাল, মঙ্গলবার হজ হাউসে অনুমতি না পেয়ে সামনের রাস্তায় বসে ইফতার সারবেন। তিনিও সেখানে বিজেপি ছাড়া সব গণতান্ত্রিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু সচেতন ভাবেই রেজ্জাক তাঁর ইফতারে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তৃণমূলের ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে।

ইমরান-বির্তকে বিড়ম্বনায় পড়ে ফ ব নেতৃত্ব অবশ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তাঁরাও বিজেপি বাদে সব দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যদিও খোদ ইমরান দাবি করেছেন, তিনি দলের প্রতিনিধিত্ব করতে আসেননি। এসেছিলেন ‘ব্যক্তিগত ভাবে’ অশোকবাবুর আমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রবীণ রাজনীতিক হিসাবে অশোকবাবুকে শ্রদ্ধা করি। তিনি ফোন করে আমন্ত্রণ করেছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছি।’’ অশোকবাবু যে ইমরানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, ফ ব-র রাজ্য নেতৃত্বের অধিকাংশেরই অবশ্য তা জানা ছিল না! তবুও বিতর্কের মুখে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জয়ন্ত রায় বলছেন, ‘‘সাংসদ ইমরানকে কি সংসদে ঢুকতে নিষেধ করেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান? তা হলে এক জন সাংসদের একটা রাজনৈতিক দলের দফতরে আসতে বাধা কোথায়?’’ ইফতারে থেকেও মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন ফ ব-র সংখ্যালঘু নেতা হাফিজ আলম সৈরানি।

বামফ্রন্ট এবং ফ ব-র অন্দরে এখন জোর চর্চা, বয়সজনিত কারণেই কি কাজকর্মে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বারবার নিজেদের বিড়ম্বনা ডেকে আনছেন নবতিপর অশোকবাবু। মমতাকে পাশে বসিয়ে তিনি ‘ছোট বোন’ বলে উচ্ছ্বাস দেখানোর পরেই শনিবার বিকালে দিনহাটা-১ ব্লকে ফ ব-র একটি কর্মিসভা ঘিরে ফেলেছিল তৃণমূল। পুলিশের হস্তক্ষেপে কোনও ভাবে সভা করতে পেরে দিনহাটার বিধায়ক উদয়নবাবু দলের রাজ্য নেতৃত্বকে বার্তা পাঠিয়েছেন, ‘ছোট বোন’কে বলা হোক ভাইদের উপরে হামলাটা অন্তত বন্ধ করতে! এর পরেই ইমরান-পর্বের খবর পেয়ে এ দিন রাতেই সোস্যাল সাইটে উদয়নবাবুর পোস্ট— ‘অফ স্টাম্পটা কোথায়, এটা ভুলে যাওয়ার আগেই খেলা ছেড়ে দেওয়া উচিত! গাওস্কর, তেণ্ডুলকরেরা করেছিলেন’। তাঁর আরও সংযোজন, ‘সবাই জানেন না বা পারেন না বা চাটুকারের করতে দেন না’! দলের ভিতরে-বাইরে নিশানার লক্ষ্য হয়েই আজ, সোমবার চোখের চিকিৎসার জন্য চেন্নাই পাড়ি দিচ্ছেন অশোকবাবু। তাতে যদি বির্তকে সাময়িক ধামাচাপা পড়ে!

ahmed hasan imran iftar party ashok ghosh left front uneasy ashok ghsoh iftar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy