Advertisement
E-Paper

পবিত্র কেন পুলিশকে ফোন করেননি, বিস্মিত তৃণমূলও

পঞ্চায়েত সমিতির শাসকদলের সভাপতি কেন নিজের হাতে আইন তুলে নিলেন, তা নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না মালদহের বাসিন্দাদের। বিরোধীদের পাশাপাশি ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন তৃণমূলও। ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পবিত্র রায় শুধু যে শাসকদলের নেতা তাই নন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীরও ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:২৪
কংগ্রেসের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

কংগ্রেসের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েত সমিতির শাসকদলের সভাপতি কেন নিজের হাতে আইন তুলে নিলেন, তা নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না মালদহের বাসিন্দাদের।

বিরোধীদের পাশাপাশি ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন তৃণমূলও। ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পবিত্র রায় শুধু যে শাসকদলের নেতা তাই নন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীরও ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটে, সেই বাগবাড়ি এলাকাটি শহরের এক কিলোমিটারের মধ্যে। সেখানে পুলিশ পৌঁছতে ১৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। শাসকদলের সভাপতি আক্রান্ত হয়েছেন জেনে পুলিশও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এমনটাও সম্ভব নয়। কিন্তু তা না করে কেন গুলি চালালেন সভাপতি তা নিয়ে সরব বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, ক্ষমতার মোহেই এমন কাণ্ড হয়েছে। যে ভাবে একাধিক ঘটনায় তাঁর দলের নেতারা অন্যায় করেও পার পেয়ে গিয়েছেন, সেই ভাবে তিনিও পার পেয়ে যাবেন ভেবেই ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়েই ওই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ ইংরেজবাজারের বাগবাড়িতে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় জেলায় কংগ্রেস নেতৃত্ব। এদিনের বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন কংগ্রেসের দুই সাংসদ মৌসম নূর, আবু হাসেম খান চৌধুরী, জেলা পরিষদের সভাদিপতি তথা জেলা কংগ্রেস নেত্রী সরলা মুর্মু সহ একাধিক নেতৃত্বরা। এদিন প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে মালদহ-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ। কংগ্রেসের মতো গত সোমবার বিকেলে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে পথে নামে জেলা বিজেপিও। যুব মোর্চারর নেতৃত্বে প্রায় তিরিশ মিনিট ধরে ইংরেজবাজারের রথবাড়ি তে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। জাতীয় সড়ক অবরোধ থাকার জেরে শহরের যানযটের সৃষ্টি হয়। নিহত দুই কিশোরের মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল।

কিন্তু মৃতদের পরিবার থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন ধরনের নেতা-নেত্রীরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তবে মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না কেউই। দেহ নিয়ে রাজনীতি তাঁরা চান না। গুলিতে নিহত কিশোর অসীম মণ্ডলের বাবা রতনবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যখন আমার ছেলে লড়াই করছিল তখন তখন কোথায় ছিলেন নেতারা? অপরাধীদের গ্রেফতার করে তাদের প্রত্যেকের ফাঁসির দাবি
করছি আমরা।’’

রবিবার নিত্যানন্দপুরে একটি ভলিবল খেলার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ফিরছিলেন পবিত্রবাবু। পথে প্রথমে একটি গরু ও পরে এক বাইক আরোহী ও সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দিয়ে পালানোর সময় পিছনে ছুটে আসা বাইক চালকের চিত্কারে বাগবাড়ির কিছু যুবক ও কিশোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় হইচই। আচমকাই গাড়ির জানালা দিয়ে ছুটে আসে গুলি। ঘটনাস্থলেই এক কিশোরের মৃত্যু হয়। কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে আর এক কিশোরের
মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, পবিত্রবাবু বারবার দাবি করার চেষ্টা করেন যে, নিজেকে রক্ষা করতেই তাঁকে গুলি চালাতে হয়েছিল। যদিও প্রাথমিক তদন্তে ওখানে গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি বলে পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, তিনি পুলিশকে কেন জানাননি সেই প্রশ্নেরও সদুত্তর মেলেনি। তা ছাড়া, গাড়ির ধাক্কায় তেমন বড় কিছু ঘটেনি। ফলে ক্ষতিপূরণের দাবি জানানোটাই উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হচ্ছে। তারপরেও গুলি কেন করা হল, সেটাই বিস্ময়ের। বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রামউদয় রায়, নীরেশ মণ্ডলরা বলেন, যারা গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেছিল, তারা সবাই কমবয়সী ছেলে। গাড়িতে যে সভাপতি রয়েছেন, তা-ও ওরা জানত না। কিন্তু উনি যা করলেন, তাতে মনে হচ্ছে অন্য কিছু আড়াল করতেই তড়িঘড়ি পালানোর চেষ্টা করেছেন কি না, সেটাও পুলিশের খতিয়ে দেখা জরুরি।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘তাপস পাল, অনুব্রত মণ্ডল থেকে মনিরুল ইসলামের মতো নেতাদের হাতে গরম উদাহরণ তো দলের নেতাদের অজানা নয়। পবিত্রবাবুও হয়ত তেমন ভাবেই পার পেয়ে যাবেন ভেবেছিলেন।’’ সাংসদ তথা জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম বেনজির নুরের প্রশ্ন, ‘‘দুর্ঘটনার পর কোথায় কজনকে জনতা পিটিয়ে মেরেছে! আমার তো এখনও ভাবলেই অবাক লাগছে।’’ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা তো নিজেকে প্রশাসন ভাবেন। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই।’’

জেলার আর এক মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র প্রকাশ্যে ঘটনাটিকে মর্মান্তিক ছাড়া কিছু বলতে চাননি। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তিনিও হঠাৎ জনতার উপরে গুলি চালানোর ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

তবে পবিত্রবাবু যাঁর ঘনিষ্ঠ সেই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের সরকার কঠোর বলেই অন্যায় করলে নেতা, মন্ত্রী থেকে কাউন্সিলর গ্রেফতার হয়।’’ জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘পুলিশ তো পবিত্রবাবুকে ধরেছে। কেন গুলি চলল তা পুলিশই তদন্ত করে দেখুক।’’

এ দিন বিকেলে গুলিতে নিহত আরেক কিশোর রাহুল পাসওয়ানের দেহ ময়নাতদন্তের পরে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। দেহ নিয়ে শোক মিছিল করেন এলাকাবাসীরা। রাহুলের বাবা উকিলবাবু বলেন, ‘‘যারা আমার ছেলেকে মারল তাদের প্রত্যেকের যেন কঠোর শাস্তি দেয় পুলিশ।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত পবিত্র রায় গ্রেফতার হলেও এখনও তার দুই সঙ্গী ও চালক ফেরার রয়েছে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তাঁদের গ্রেফতার করা হবে।’’

state news pabitra roy panchayet savapati arrested
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy