জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে গত ২২ এপ্রিল জঙ্গিহানায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার পর ৫৫ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও জঙ্গিরা অধরাই। অথচ, পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই এ কথা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি। বিজেপির এই কৌশলগত নীতিকে গোড়াতেই প্রতিহত করতে সচেষ্ট বাংলার শাসকদল।
সোমবার সকাল থেকে পহেলগাঁও কাণ্ডকে হাতিয়ার করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সকালে নিজের এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ৫৫ দিন পেরিয়ে গেলেও সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে বিরোধী দল— কাউকেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি তুলতে দেখা যায়নি। গণতন্ত্রের জন্য তা খুবই উদ্বেগজনক।’’ এর পরেই মোদী সরকারের উদ্দেশে পাঁচটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ।
অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, চার জঙ্গি কী ভাবে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছিল? জাতীয় নিরাপত্তায় এত বড় ফাঁক থেকে যাওয়ার কারণে যে ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হল, তার দায়ই বা কে নেবে? অভিষেকের দ্বিতীয় প্রশ্ন, এই ঘটনা নিঃসন্দেহে গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা। অথচ পহেলগাঁও কাণ্ডের মাত্র এক মাসের মাথায় আইবি-প্রধানের মেয়াদ এক বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হল। এ যেন ব্যর্থতার জন্য উল্টে ‘পুরস্কৃত’ করা হল তাঁকে! বিরোধী নেতাদের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য পেগাসাসের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তা হলে পহেলগাঁওয়ের হত্যাকারীদের ধরতে কেন তা ব্যবহার করা হল না? ওই চার জঙ্গি কোথায় পালালেন? সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার চুপ কেন? শুধু তা-ই নয়, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। লেখেন, ‘‘ভারত পাক-অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করবে কবে? যে সময় জাতি-ধর্ম ভুলে সমগ্র ভারতের মানুষ একজোট হয়ে দেশের সেনার সমর্থনে পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে সময় আমেরিকা দাবি করে ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে। আমেরিকার এই দাবি কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত সর্বসমক্ষে খণ্ডন করেনি কেন?’’
আরও পড়ুন:
অভিষেকের পঞ্চম ও শেষ প্রশ্ন, ভারত যদি সত্যিই বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়, তা হলে পহেলগাঁও হামলার পর পরই কেন আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্ক পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন এবং ৪০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অনুমোদন করল? সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত একটি দেশ কী ভাবে আন্তর্জাতিক তদন্ত এড়িয়ে গেল? তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের সফরের পর কতগুলি দেশ ভারতকে সমর্থন করেছে?’’ উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার পর ৩৩টি দেশে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে এ বিষয়ে বার্তা দিয়েছিল ভারত সরকার। সেই প্রতিনিধিদলে তৃণমূলের তরফে অভিষেক ছিলেন। তার আগে পহেলগাঁও হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ অধিবেশন চেয়ে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধীরা। কিন্তু সে সবে কর্ণপাত করেনি কেন্দ্র। সেই আবহেই মোদী সরকারকে নিশানা করে পঞ্চবাণ ছুড়লেন অভিষেক। অভিষেকের টুইটের পরেই কীর্তি আজ়াদ, কুণাল ঘোষ, সাকেত গোখলে, সুস্মিতা দেব, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, শশী পাঁজা, ব্রাত্য বসু প্রমুখ একই প্রশ্ন তুলে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন।