Advertisement
০২ মে ২০২৪
Mamata Banerjee supports Congress

কংগ্রেসের ‘হাত’ ধরতে রাজি মমতা, মোদীকে হটাতে সমর্থন জানিয়েও সনিয়াদের শর্ত দিলেন তৃণমূলনেত্রী

কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের বদলে বিজেপির পরাজয়কেই ‘বড়’ করে তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার জেরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আবহে কংগ্রেসকে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

photo of PM Narendra modi, Mamata Banerjee, Sonia Gandhi

২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট গড়তে কংগ্রেসকে বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৩ ১৮:১০
Share: Save:

আগামী লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে গদিচ্যুত করতে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘হাত’ মেলাতে রাজি তৃণমূল। বিজেপি বিরোধী জোট প্রসঙ্গে সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কংগ্রেসকে সমর্থনের পাশাপাশি সে দলের ‘নীতি’ নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী, সেখানে ওদের সমর্থন করব। কোনও সমস্যা নেই। তবে ওদেরও অন্য দলকে সমর্থন করা উচিত।’’ এর পরেই কর্নাটকে কংগ্রেসের জয় এবং বিজেপির ভরাডুবি নিয়ে সরব হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘আমরা কর্নাটককে সমর্থন করব। অথচ, আপনারা রোজ এখানে (পশ্চিমবঙ্গ) আমাদের সঙ্গে লড়াই করবেন, এটা তো ঠিক নীতি নয়।’’

দেশের মসনদ থেকে বিজেপি সরকারকে হটাতে অতীতে বহুবারই সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃতীয় বার ক্ষমতা দখলের পর থেকে নতুন করে বিজেপি বিরোধী ঐক্যে শান দিতে উদ্যোগী হন মমতা। দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। সেই সময় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন মমতা। তবে সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। এর পর যত সময় এগিয়েছে, কংগ্রেস এবং‌ তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল দুই দলের লড়াই। মেঘালয়ে গিয়ে তৃণমূলের ‘ইতিহাস’ তুলে ধরে খোঁচা দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। ফলে সংঘাতের সুর আরও চড়া হয়। বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস ব্যর্থ। তৃণমূলই বিজেপির একমাত্র বিকল্প বলে প্রচার করছে ঘাসফুল শিবির। তার জেরেই বিজেপি বিরোধী জোট ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এর পর গত মার্চে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পর ‘ক্ষুব্ধ’ মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তৃণমূল আর মানুষের জোট হবে। একাই লড়বে তাঁর দল। কিন্তু এই ছবিটা সাম্প্রতিক সময়ে বদলেছে। মোদী পদবি নিয়ে মন্তব্যের জেরে কংগ্রেস নেতা রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হয়। এই প্রসঙ্গে রাহুলের নাম না করলেও টুইটারে সনিয়া-পুত্রের পাশে দাঁড়িয়েই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে গত শনিবার কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ‘বড়’ জয় নিয়েও মুখ খোলেন মমতা। তবে কংগ্রেসের জয় নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি। পরিবর্তে বিজেপির পরাজয়কেই বড় করে তুলে ধরেছিলেন। যার জেরে আরও এক বার কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক আলোচনায় এসেছে। কর্নাটক জয়ের ২ দিনের মাথাতেই সেই ‘দূরত্ব’ সরিয়ে বিজেপি বিরোধী জোট গড়তে কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতার সুসম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে মমতা এবং তৃণমূলের ‘অম্ল মধুর’ সম্পর্কের কথা রাজ্য রাজনীতিতে সকলেরই জানা। এই আবহে কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা জানিয়েও সে দলের নীতি নিয়ে যে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী, তা এই পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের উদ্দেশে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ভাল কিছু জিনিস পেতে গেলে, নিজের ক্ষেত্রে কিছুটা ত্যাগ করতে হয়।’’

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশের অনেক বিরোধী নেতাই আলোচনা চালাচ্ছেন। কিছু দিন আগেই মমতার সঙ্গে নবান্নে গিয়ে দেখা করেছেন জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। ওড়িশায় গিয়ে মমতা দেখা করেছিলেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে। যদিও সেই সাক্ষাৎপর্বে রাজনীতি নিয়ে কথা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক দিন আগেই, মমতা জানিয়েছিলেন যে, ‘‘সব বিরোধী দল এক হয়ে যান। ওয়ান টু ওয়ান ফাইট হোক। চেষ্টা করব এক সঙ্গে কাজ করার।’’

সোমবার বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে আবার বার্তা দিলেন মমতা। বললেন, ‘‘ভবিষ্যতে কী হবে তা বলতে পারি না। আমি কোনও জাদুকর নই। জ্যোতিষী নই। তবে এটা বলতে পারি যে, যেখানে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, সেখানে বিজেপি লড়াই করতে পারবে না। কর্নাটকে বিজেপির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মানুষ। তাই সকলকে এক সঙ্গে লড়াই করতে হবে।’’ বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে কী ভাবে লড়াই হবে, সেই কৌশলও বাতলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘বাংলায় যেমন আমরা লড়াই করব। দিল্লিতে আপ, বিহারে জেডিইউ, আরজেডি, কংগ্রেস। চেন্নাই, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা-সহ অন্য রাজ্যেও এই ভাবে হবে। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশরা (অখিলেশ যাদব) প্রাধান্য পাবে। বলছি না, কংগ্রেস সেখানে লড়াই করতে পারবে না। আলোচনা করে ঠিক হোক।’’ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলেই ‘কিছু না কিছু ভাবছেন’ বলেও জানান মমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Congress TMC loksabha election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE