রাজ্যে তাদের ‘শূন্য’ ঝুলি। ভোটে বার্তা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর। অথচ জঙ্গলমহলের একটি পঞ্চায়েতে অঙ্কটা একেবারে উল্টো। সিপিএম সেখানে লড়ছে ক্ষমতা ধরে রাখতে। আর তৃণমূলের লক্ষ্য পরিবর্তন।
১৯৭৭ থেকে ২০২৩, টানা ৪৬ বছর ধরে সুবর্ণরেখা তীরের সাতমা পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। এলাকাটি ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের অধীন। রাজ্যে পালাবদলের এত বছর পরেও সাতমার ‘রং’ বদলায়নি। তবে এ বার পঞ্চায়েতে প্রত্যয়ী তৃণমূল। কারণ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই পঞ্চায়েতে লিড পেয়েছিলেন জোড়াফুলের প্রার্থী। তবে টক্কর জোরদার। জেলার বিজেপি নেতা অবনী ঘোষের বাড়ি এই এলাকাতেও। লড়াইয়ে রয়েছেন তাঁরাও। তবে অবনীও মানছেন, ‘‘এই এলাকায় সিপিএমের সংগঠন রয়েছে।’’
গত বার সাতমা পঞ্চায়েতে আসন ছিল ৯টি। সিপিএম জেতে ৪টিতে, আর তৃণমূল ও বিজেপি ২টি করে আসন পায়। প্রধান গঠনের সময় সিপিএম পাশে পায় বিজেপিকে। এ বার আসন বেড়ে হয়েছে ১১টি। ২০১১ সালের আগে এই এলাকায় সিপিএম ৫৫-৬০ শতাংশ ভোট পেত। পরিবর্তনের বছরেও তারা ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তা কমে ৩৫ শতাংশ হয়। তবে ওই দুই বিধানসভা ভোটেই সার্বিক ভাবে এই পঞ্চায়েত এলাকায় এগিয়ে ছিল সিপিএম। তাল কাটে ২০২১-এ। সে বার এই অঞ্চলে ১১০১ ভোটে এগিয়ে যায় তৃণমূল।
শাসক দলের অন্দরের খবর, এলাকায় সাংগঠনিক রদবদল করে ও রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রচারেই সেই সাফল্য এসেছিলে। তার অন্যতম কারিগর ছিলেন গোপীবল্লভপুর ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হেমন্ত ঘোষ। ২০২০ সালে দায়িত্ব পাওয়া হেমন্ত বলছেন, ‘‘তুলনায় এই অঞ্চলে সিপিএমের সংগঠন অনেকটাই মজবুত। তবে এখন আমরা এলাকার মানুষকে রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুফল বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।’’
সিপিএমের অবশ্য দাবি, ২০২১ সালে বিজেপি-তৃণমূলের মুখোমুখি লড়াইয়ের জন্যই ওই ফল হয়েছিল। তা আর হবে না। ঝাড়গ্রামের দাপুটে সিপিএম নেতা প্রয়াত অর্ধেন্দু শতপথী ওই এলাকায় দলের সংগঠন গড়েছিলেন। তা মচকালেও ভাঙেনি। দলের আমরদা এরিয়া কমিটিতে মোট সদস্য ১১৮ জন। তার মধ্যে সাতমা, সারিয়া, শাসড়া ও আমরদা অঞ্চল রয়েছে। এই ১১৮ জনের ৬০ জনই সাতমা অঞ্চলের। পঞ্চায়েত ধরে রাখতে এ বার প্রার্থী বাছাইয়ে নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। ১১ জন প্রার্থীর সবার বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আমরদা এরিয়া কমিটির সম্পাদক শম্ভু বিন্ধানী বলছেন, ‘‘রাজ্যে আমাদের সংগঠনে ছাত্র-যুব ভাল ভূমিকা নিয়েছে। এখানেও নতুন মুখ এনেছি। তবে তৃণমূল টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে ব্লক তৃণমূল সভাপতি হেমন্তের পাল্টা দাবি, ‘‘সাতমার মানুষ এখন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। এ বার ওই পঞ্চায়েতে পরিবর্তন হবেই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)