E-Paper

পঞ্চায়েতে কোপ পড়ছে পুরনো মুখে, প্রায় ২৫ হাজার নতুন প্রার্থী আনার কথা ভাবছে তৃণমূল

প্রার্থী হিসেবে নতুনদের আনার ব্যাপারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহই বেশি। গত বিধানসভা নির্বাচনেও প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে বেশ কিছু আসনে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল।

রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫০
Representational image of TMC.

এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাংগঠনিক রাশ কার্যত অভিষেকের হাতে। প্রতীকী ছবি।

ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রার্থীতালিকায় এ বার হাজার পঁচিশ নতুন মুখ আনার কথা ভাবছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থী হবেন নবাগত। রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী কমবেশি ৬৩ হাজার। বাকি পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে প্রায় ১১ হাজার।

পাশাপাশি ভোটের কথা মাথায় রেখে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি আগে গ্রামে শুরু হলেও এ বারে তা পুর-এলাকাতেও শুরু করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

প্রার্থী হিসেবে নতুনদের আনার ব্যাপারে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহই বেশি। গত বিধানসভা নির্বাচনেও প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে বেশ কিছু আসনে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। তার পরে পুর নির্বাচনগুলিতেও মুখ বদলের এই চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কোথাও তা সম্ভব হয়েছে, কোথাও তা হয়নি। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাংগঠনিক রাশ কার্যত অভিষেকের হাতে।

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই নতুন মুখ খোঁজার কাজ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব চাইছেন, যাঁরা রাজনীতির পরিচিত মুখ, তাঁদের বাইরেও এলাকার সুপরিচিত ‘ভাল’ ভাবমূর্তির লোক বেছে নিয়ে প্রার্থী করা হবে। যেমন এলাকার স্কুল শিক্ষক, গ্রামীণ চিকিৎসক বা অন্য পরিচিতি-সম্পন্ন ব্যক্তি। গৃহকর্ত্রী, অপেক্ষাকৃত কমবয়সি ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে একেবারে পিছিয়ে পড়া স্তর থেকেও প্রার্থী তুলে আনার ভাবনা আছে দলের।

তৃণমূল মনে করছে, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাসের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। তার আগে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলোচনায় দলের পক্ষে একটি বড় সমস্যা ও একটি সুবিধা চিহ্নিত করেছে শাসক নেতৃত্ব। সমস্যাটি অবশ্যই দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম এবং নিষ্ক্রিয়তা। এ সংক্রান্ত অভিযোগ যাচাই করার কাজও চলছে। তার ভিত্তিতে বিদায়ী পঞ্চায়েতের তিন স্তরে দায়িত্বে থাকা পদাধিকারীদের একটা বড় অংশ বাদ যেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই কৌশলেই পঞ্চায়েতে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা কাটাতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

সাংগঠনিক শক্তির কারণেই পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তেমন চিন্তা নেই শাসক তৃণমূলের। তবে গোটা প্রক্রিয়াটিকে যতটা সম্ভব প্রশ্নহীন করে রাখতে না পারলে তার প্রভাব যে পরে লোকসভা ভোটে পড়তে পারে, তা অভিজ্ঞতায় বুঝেছে তারা। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে গা-জোয়ারি এবং তার আগে ২০১৩ সাল থেকে তৈরি প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা মিলে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল বড় ধাক্কা খেয়েছিল। এ বার সে সব থেকে দলকে খানিকটা আগলে রেখেই পঞ্চায়েত ভোট পার করতে চাইছেন ‘নতুন তৃণমূল’-এর শীর্ষ নেতৃত্ব। কয়েক মাস আগে থেকেই পঞ্চায়েত পরিচালনায় ও নির্বাচনে স্বচ্ছতার কথা বলে সেই আবহ তৈরির চেষ্টাও করেছেন অভিষেক।

তৃণমূলের বেশির ভাগ জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে প্রথম পর্যায়ের তালিকা চেয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই তালিকার নামগুলি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজও অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের বিধানসভা নির্বাচন শেষ করেই এই গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যালোচনায় বসবেন অভিষেক। এখনও পর্যন্ত প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া যতটুকু হয়েছে তা তাঁর দেওয়া পরামর্শ মতোই। সরকারি প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি আর পরিষেবা নিশ্চিত করতে নিষ্ক্রিয়তা— এই জোড়া প্রতিকূলতা এড়াতেই মুখবদলের এই কৌশল নিচ্ছে তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে ইতিবাচক বার্তা যাবে বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব।

এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে সুবিধাজনক দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পকে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে ওই ঘোষণায় মহিলা ভোটের বড় অংশের সমর্থন পেয়েছিলাম আমরা। এ বার সেই প্রকল্পের সুবিধা চালু হয়ে যাওয়ার পরে প্রথম নির্বাচনে তা স্বাভাবিক ভাবে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে।’’ তবে আবাস প্রকল্প ও ১০০ দিনের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিপুল অভিযোগ রয়েছে। যদিও সেই তালিকা শুদ্ধকরণে তার অনেকটা কেটে যাবে বলেও আশা করছে শাসক শিবির। এই দুই প্রকল্প রূপায়ণে তৈরি জটিলতার ‘দায়’ কেন্দ্রের—ইতিমধ্যেই তা প্রচারে নিয়ে আসতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Panchayat Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy