Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

যুযুধান শিশির-অখিলকে সতর্ক করল তৃণমূল

দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় এ বার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বিবদমান দুই শিবিরের নেতাকেই সতর্ক করলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সংবাদমাধ্যমে নয়, প্রয়োজনে দলকে লিখিত ভাবে সমস্যা জানাতে বলা হল তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী এবং কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরিকে।

শিশির অধিকারী ও অখিল গিরি।—ফাইল চিত্র।

শিশির অধিকারী ও অখিল গিরি।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় এ বার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বিবদমান দুই শিবিরের নেতাকেই সতর্ক করলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সংবাদমাধ্যমে নয়, প্রয়োজনে দলকে লিখিত ভাবে সমস্যা জানাতে বলা হল তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী এবং কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরিকে।

সোমবার তৃণমূল ভবনে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরের দুই নেতা (শিশিরবাবু ও অখিলবাবু) পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। তাঁদের বলেছি, সংবাদমাধ্যমকে নয়, যা জানানোর তা দলকে জানান।” দলীয় সূত্রে খবর, দু’জনকেই সতর্ক করে চিঠি পাঠাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

ঘটনাচক্রে এ দিনই মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের প্রস্তুতি উপলক্ষে দুই মেদিনীপুরের নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠক করতে তমলুকে এসেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তিনি বলেন, “শিশিরবাবুর সঙ্গে দলের নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথা হয়েছে। দু’চার দিনের মধ্যেই কলকাতায় যাবেন শিশিরবাবু। সেখানে কথা হবে।”

শিশির ও অখিল অনুগামীদের বিরোধ জেলার রাজনীতিতে নতুন নয়। অখিলবাবু জেলা কার্যকরী সভাপতি হওয়ার পরে বিরোধের মাত্রা বেড়েছে। চলতি বছরে ২১ শে জুলাই শহিদ দিবসের প্রস্তুতি সভাতেও নন্দকুমারে জেলা তৃণমূলে ক্ষমতাসীন অধিকারী অনুগামীদের সঙ্গে অখিল গোষ্ঠীর প্রকাশ্যে আসে। জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর উপস্থিতিতেই শিশির-অনুগামীরা তাঁর বক্তৃতায় বাধা দিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সভা ছেড়ে বেরিয়েও যান অখিলবাবু। তাঁর সঙ্গেই সভাস্থল ছাড়েন তমলুকের বিধায়ক তথা জল সম্পদমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহা, চণ্ডীপুরের বিধায়ক অমিয় ভট্টাচার্য। তৃণমূলের অন্দরে এঁরা সকলেই শিশির বিরোধী গোষ্ঠীর লোক হিসেবে পরিচিত।

সেই বিরোধ ফের প্রকাশ্যে আসে সোমবার। চণ্ডীপুরে নিজের সাংসদ কার্যালয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় শিশিরবাবু সরাসরি অভিযোগ করেন, দলীয় নেতৃত্বের একাংশ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। প্রবীণ সাংসদ কারও নাম করেননি। তবে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর নিশানায় ছিলেন চণ্ডীপুরের বিধায়ক, দলে অখিল অনুগামী বলে পরিচিত অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য।

সোমবার সন্ধ্যায় চণ্ডীপুর বাজারের ওই অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই কাঁথির সাংসদ বলেছিলেন, “একটা টেন্ডার হলে ঠিকাদারকে ধরে এনে বলা হয় ৬ শতাংশ কমিশন দিতে হবে। ঠিকাদার ফোন করে বলে বাঁচান বাঁচান! একটা চাকরি হলে বলে ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকা দিতে হবে! কে নিল টাকা, এর মধ্যে কে আছে? ৫৮ বছর রাজনীতি করছি, এ সব শুনিনি।” এটা কি শুধু পঞ্চায়েত স্তরে হচ্ছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে শিশিরবাবুর জবাব ছিল, “শুধু পঞ্চায়েতকে দোষ দিচ্ছেন কেন? এমএলএরা, এমপিরা কি সাধু!”

প্রবীণ তৃণমূলের সাংসদের এই মন্তব্যে আলোড়ন পড়ে। এর পাল্টা হিসেবে অখিলবাবু আবার সংবাদমাধ্যমে বলে বসেন, “শিশিরবাবু দুর্নীতিগ্রস্ত।” এরপরই নড়েচড়ে বসেন শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন নবান্নে পার্থবাবু বলেন, “টিভিতে শিশিরবাবুর বক্তব্য দেখে আমি তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেন তিনি দলের নেতাদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে এই ধরনের মন্তব্য করলেন। আপনার কাছে যদি নির্দিষ্ট খবর থাকে তা হলে লিখিত ভাবে দলকে জানাতে বলা হয়েছে। দল ব্যবস্থা নেবে।”

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, নবান্ন থেকে ফিরে পার্থবাবু তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে যান। সেখানে টিভিতে দেখেন, শিশিরবাবুর বিরুদ্ধে মন্তব্য করছেন অখিলবাবু। ক্ষুব্ধ হন মহাসচিব। তিনি সরাসরি অখিলবাবুকে ফোন করে সতর্ক করেন। শিশিরবাবু ও অখিলবাবু দু’জনে ভায়রা ভাই। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “অখিলবাবুদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের দুই ভায়রা ভাইয়ের ঝগড়ায় দলকে যেন জড়ানো না হয়।”

শিশিরবাবুর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কটাক্ষ, “তৃণমূল যে ভাঙনের মুখে, তার প্রমাণ শিশিরবাবুর কথা। খুব শীঘ্রই তৃণমূলের আরও অনেক নেতার মুখেই শিশিরবাবুর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা যাবে।”

তবে এখন দেখার, জেলায় বিবাদমান এই দুই গোষ্ঠীর কোন্দলে রাশ টানতে শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে কাজের কাজ কতটা হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE