Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

বাংলায় কংগ্রেসকে দু’টি আসন ছাড়বে তৃণমূল, তার মধ্যে একটি সিপিএম পেলে আপত্তি নেই মমতার

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই ধরনের প্রস্তাব কি রাজনৈতিক ঔদ্ধত্য নয়? তৃণমূল তা মানতে নারাজ। দলের এক শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রের কথায়, “আমরা নির্দিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে আসন রফা করতে চাইছি।’’

Mamata Banerjee.

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৭
Share: Save:

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র মুম্বই বৈঠকের পর তৃণমূলের পক্ষ থেকে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে তারা কাকে ‘বন্ধু’ হিসাবে বাছবে, সেটা সম্পূর্ণ তাদের উপর নির্ভর করবে। কংগ্রেসের উদ্দেশে তৃণমূল নেতৃত্বের বার্তা, এক দিকে সম্ভাব্য তিরিশটি আসন পাবে, এমন (তৃণমূলের দাবি কমপক্ষে তিরিশটি লোকসভা আসনে তারা জয়ী হবে) দল, অন্য দিকে কোনও আসন না পাওয়া বাম — এই দুইয়ের মধ্যে তারা বিবেচনা অনুযায়ী গাঁটছড়া বাঁধার সিদ্ধান্ত নিক।

তৃণমূল নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, যদি কংগ্রেস মনস্থ করে যে তারা তৃণমূলের হাত ধরবে, তবে দু’টি আসন তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার বেশি নয়। সেই দুইয়ের মধ্যে যদি কংগ্রেস একটি সিপিএম-কে দিতে চায়, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সমস্যা নেই।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই ধরনের প্রস্তাব কি রাজনৈতিক ঔদ্ধত্য নয়? তৃণমূল তা মানতে রাজি নয়। দলের এক শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রের কথায়, “আমরা নির্দিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে আসন রফা করতে চাইছি। সেটা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে অন্য দল গুলিকে। যে সব রাজ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে দরকষাকষির বিষয় রয়েছে, বা ইতিপূর্বে জোট নেই, সেই রাজ্যে তিনটি মানদণ্ড বিরোধী দলগুলির সামনে রয়েছে। এক, গত বারের লোকসভা ভোটের ফল, দুই, গত বারের বিধানসভা ভোটের ফল, তিন, গত বারের লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের ফল সমন্বয় করে দেখা।’’

তৃণমূলের দাবি, এই তিনটি মানদণ্ডের বিচারে এটাই স্বাভাবিক যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলই আসন রফার প্রশ্নে শেষ কথা বলবে। অন্য দিকে এই তিন ক্ষেত্রে বামেদের ফলাফলের যা হাল, তাতে ‘ইন্ডিয়া’র স্বার্থেও তাদের চব্বিশের লোকসভায় আসন ছাড়ার কোনও প্রশ্নই উঠছে না। ফলে কংগ্রেসকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোন দিকে যাবে।

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আমরা প্রথমে চেয়েছিলাম সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসন রফার বিষয়টি চুকিয়ে ফেলে ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তার পর বিষয়টি ১৫ অক্টোবর হয়ে অক্টোবরের শেষে পৌঁছেছে। কিন্তু এর পর আর দেরি করা যাবে না। যে রাজ্যগুলিতে জটিলতা রয়েছে, সেগুলিতে আসন ভাগের কাজ সেরে ফেলতেই হবে।’’

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী কমবেশি আড়াইশোটি লোকসভা আসনে সমঝোতা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। বিভিন্ন রাজ্যকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। প্রথমটি হল জম্মু কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড এবং বিহার। এই রাজ্যগুলিতে জোট হয়েই রয়েছে। সেগুলিকে এক বার ঝালিয়ে নিয়ে উনিশ-বিশ করা সমস্যা নয়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়, হিমাচল প্রদেশ। এই রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসেরই আধিপত্য, ফলে কংগ্রেসকে সামনে রেখেই বিরোধী জোট লড়বে।

তৃতীয় শ্রেণিতে রয়েছে কেরল, যাকে সমস্ত রফার বাইরে রাখা হচ্ছে। এখানে কংগ্রেস এবং সিপিএম যুযুধান, ফলে রফার হিসাবের বাইরে। চতুর্থ, পঞ্জাব, দিল্লি, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, গোয়া এবং পশ্চিমবঙ্গ। দিল্লি এবং পঞ্জাব মিলিয়ে কুড়িটা আসন, আর বাংলায় ৪২। প্রথম দু’টিতে কংগ্রেস এবং আপ-এর স্নায়ুর যুদ্ধ চলবে আসন রফা নিয়ে। সে ক্ষেত্রে জোটের পক্ষ থেকে কোনও তৃতীয় দলের প্রবীণ নেতা বা নেত্রী প্রয়োজনে সেতুবন্ধনের কাজ করতেও পারেন বলে ইঙ্গিত রয়েছে। আর বাংলায় তৃণমূল দু’টির বেশি আসন কোনও ভাবেই ছাড়বে না, এখনও পর্যন্ত এটাই দলের ঘোষিত অবস্থান। এর পরের শ্রেণিতে রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি, যেগুলি নিয়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে ভাবা হবে বলে স্থির হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC Congress West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE