Advertisement
E-Paper

গুরুঙ্গের খাসতালুকে ঘাসফুল ফোটালেন মমতা

দার্জিলিং: রাজভবনে যাতায়াতের দু’ধারে প্রতিটি পাইন গাছকে চেনেন তিনি। সেখান থেকে জলাপাহাড় ধরে হিলকার্ট রোড প্রায় সাত কিলোমিটার। সেই পথে কোথায় কার মোমোর দোকান, কোন ফুটপাথে কোন মহিলার শাল-সোয়েটার ভাল, কার নিজের ঘর নেই— এ সব বলে দেওয়া তাঁর কাছে জলভাত।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০৩:৩৬

রাজভবনে যাতায়াতের দু’ধারে প্রতিটি পাইন গাছকে চেনেন তিনি। সেখান থেকে জলাপাহাড় ধরে হিলকার্ট রোড প্রায় সাত কিলোমিটার। সেই পথে কোথায় কার মোমোর দোকান, কোন ফুটপাথে কোন মহিলার শাল-সোয়েটার ভাল, কার নিজের ঘর নেই— এ সব বলে দেওয়া তাঁর কাছে জলভাত।

আলাদা রাজ্যের দাবিতে যেখানে লোকে এক সময় পেটে কিল মেরে ঘরে বসে থাকতে রাজি ছিলেন, সেখানে এ ভাবে মিশে গিয়ে কি এক জন সমতলের মানুষ ওদের মন জয় করে ফেলতে পারবেন? দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বিমল গুরুঙ্গ। অথচ বুধবার পাহাড়ের পুরভোটের ফল বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছের লোক ভাবতে শুরু করেছে পাহাড়। মিরিকের জয়ই শুধু নয়, কার্শিয়াঙে তৃণমূল পেয়েছে সাড়ে ৩৯ শতাংশ, দার্জিলিঙে জিএনএলএফের সঙ্গে জোট করে প্রায় ২৭ শতাংশ ভোট। আর কালিম্পং? সেখানে হরকা বাহাদুরের সঙ্গে হাত মেলালে বোর্ড গড়ে ফেলত তৃণমূল।

মিরিকের জয়কে পাহাড়ে বহু বছর পরে গণতন্ত্রের প্রবেশ বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘কয়েক দশক পরে আমরা পাহাড়ে নতুন যুগ শুরু করলাম। পাহাড়বাসীকে অভিনন্দন। বিশেষ অভিনন্দন মিরিককে।’’ বলেন,
‘‘পাহাড় কেম ছো? পাহাড় উন্নয়ন চাওছো!’’

পরিস্থিতি দেখে ঢোক গিলতে বাধ্য হয়েছেন গুরুঙ্গও। তাঁকে বলতে হয়েছে, ‘‘বিরোধীরা ভোট পেয়েছেন মানে পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে।’’ তবে মিরিক পুরবোর্ড হাতছাড়া হওয়া নিয়ে অভিযোগও তুলেছেন, ‘‘গণনা আধ ঘণ্টায় শেষ হওয়াটা রহস্যজনক। পুনর্গণনা চেয়েছি আমরা।’’ একই অভিযোগ দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। রাজ্য বিজেপির প্রশ্ন, মিরিকের উন্নয়নে দেওয়া ১১০ কোটি টাকা কি ভোট কিনতে ব্যবহার হল?

নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা গুরুঙ্গের অভিযোগ মানতে নারাজ। সরকারি সূত্রের খবর, গণনার সময়ে মোর্চার প্রতিনিধিরা ঠায় বসে থেকে সব দেখেছেন। তাই এমন অভিযোগ টিঁকবে না। গুরুঙ্গের গলায় মমতাকে কটাক্ষও, ‘‘উনি এত ঘনঘন পাহাড়ে এসেছেন। গাদাগাদা নেতা-মন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ বাক্সে পুরে আমাদের পাহাড় ছাড়া করবেন বলেছেন। তার পরেও দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পঙে এমন ফল কেন হল?’’

পাহাড়ের অনেকেরই মত, বাস্তবটা বরং উল্টো। মিরিক দিয়ে শুরু করল তৃণমূল। অন্য তিন পুরসভাতেও তারা খুব কম ভোট পায়নি।

আরও পড়ুন: সমতলে জয়রথ, পা পাহাড়েও

এর পিছনে যেমন রয়েছে মমতার ঘনঘন পাহাড় সফর, একাধিক উন্নয়ন বোর্ড গঠন, তেমনই উল্টো দিকে রয়েছে মোর্চা নেতাদের একাংশের চূড়ান্ত দাপট, যথেচ্ছাচার। পাহাড়ে তৃণমূলের পরিদর্শক অরূপ বিশ্বাস, মিরিকের দায়িত্বে থাকা সৌরভ চক্রবর্তীরা বলছেন, ‘‘এর পাশাপাশি পাহাড়বাসী দেখেছেন ক্রমাগত পর্যটনের প্রসার, কার্শিয়াঙে প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাস, মিরিকে মহকুমা, কালিম্পঙে জেলা।’’

সামনে জিটিএ ভোট। বর্ষা আর পুজোর জন্য যদি সেই ভোট কয়েক মাস পিছিয়ে যায়, তার মধ্যে যদি প্রশাসক বসিয়ে সরাসরি উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত করে রাজ্য সরকার, তা হলে গুরুঙ্গের চিন্তার কারণ রয়েছে, মানছেন পাহাড়ের অনেকেই। রাজ্য ‘ডেস্টিনেশন মিরিক’ স্লোগান দিয়ে এর মধ্যে কাজে নেমে পড়তে পারে। সেই ‘মিরিক এফেক্ট’-কে বাদ দেওয়া যাবে না।

ব্যাকফুটে থাকা তাই গুরুঙ্গ বলছেন, ‘‘আমরা উন্নয়নে গতি আনব।’’ একদা এই উন্নয়নের প্রতিযোগিতাই চেয়েছিলেন মমতা। গুরুঙ্গের মুখে সেই সুর শুনে নিশ্চয়ই এখন মৃদু হাসি তাঁর মুখে।

municipality election TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy