Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ইসলামপুরে রণক্ষেত্র কলেজ, সম্পত্তি ভাঙল তৃণমূল ছাত্ররাই

দলনেত্রী বলেছেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করতে হবে। তাঁর নির্দেশেই সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর রুখতে সদ্য বুধবার বিল পাশ করেছে রাজ্য সরকার। তার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না, ইসলামপুর কলেজে তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূলের দুই নেতার অনুগামী ছাত্রগোষ্ঠী।

ইসলামপুর কলেজে সংঘর্ষে আহত পড়ুয়ারা।বৃহস্পতিবার অভিজিৎ পালের তোলা ছবি।

ইসলামপুর কলেজে সংঘর্ষে আহত পড়ুয়ারা।বৃহস্পতিবার অভিজিৎ পালের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৩
Share: Save:

দলনেত্রী বলেছেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করতে হবে। তাঁর নির্দেশেই সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর রুখতে সদ্য বুধবার বিল পাশ করেছে রাজ্য সরকার। তার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না, ইসলামপুর কলেজে তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূলের দুই নেতার অনুগামী ছাত্রগোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন ঘণ্টা ধরে টিএমসিপি-র সেই মারামারি চলে। সেই সময়ে কলেজের চেয়ার-টেবিল তো বটেই, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও। যুযুধান দুই গোষ্ঠীকে থামাতে এক সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, এর পরে শূন্যে গুলিও ছোড়ে পুলিশ। যদিও জেলার পুলিশ সুপার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সংঘর্ষে দু’পক্ষের ২০ জন জখম হয়েছেন। পাঁচ পুলিশও আহত।

আরও পড়ুন: সংঘর্ষের জেরে উদ্বেগ পড়াশোনা নিয়েই

গোলমাল নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ।বৃহস্পতিবার অভিজিৎ পালের তোলা ছবি।

পার্থবাবুর এই কথা শোনার পরে তৃণমূলের একটি অংশের বক্তব্য, ওঁরই বা কী করার আছে! সবে দুই ছাত্র নেতা জয়া দত্ত আর অশোক রুদ্রের ঝামেলা সামলেছেন। তার পরেই আবার কলেজে মারামারি! তবে এটাকে নিছক কলেজ নির্বাচনে আটকে রাখতে চাইছেন না অনেকেই। শাসকদলের কেউ কেউ বলছেন, রাজ্যে এখন তৃণমূলের বিরোধী তৃণমূলই। ফলে কখনও দক্ষিণ দিনাজপুরে বিপ্লব মিত্রের সঙ্গে শঙ্কর চক্রবর্তী, কখনও মালদহে নীহার ঘোষের সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর মধ্যে ঠোকাঠুকি লেগেই রয়েছে। তৃণমূল নেত্রী যতই ঝগড়া থামাতে বলুন না কেন, উল্টে জায়গায় জায়গায় নতুন করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে।

যেমন হয়েছে কানাইয়ালাল অগ্রবাল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে। এই এলাকায় করিম চৌধুরীর সঙ্গে হামিদুল রহমানের গোলমাল ছিলই। এই বিধানসভা ভোটে হামিদুল জিতেছেন। উল্টো দিকে, করিম হেরেছিলেন কানাইয়ার কাছেই। তখন সিপিএম-কংগ্রেসের যৌথ প্রার্থী ছিলেন কানাইয়া। সম্প্রতি তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় প্রবল ক্ষুব্ধ করিম। একাধিক বার তিনি সে কথা বুঝিয়েও দিয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’পক্ষের মধ্যে ঠোকাঠুকি লাগতে শুরু করে। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, সেই দ্বন্দ্বেরই আর একটা ছবি এ দিন দেখা গেল ইসলামপুর কলেজে।

স্বাভাবিক ভাবে এই গোলমাল কলেজে আটকে থাকেনি। রাতে ইসলামপুরের অপ্সরা মোড়ে হামিদুল রহমানের জমিতে থাকা দোকানঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, এর পিছনেও রয়েছে করিমের লোকজন। হামিদুল বলেছেন, ‘‘করিম চৌধুরীর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থীকে কেন আমার ছেলেরা ভোট দিতে চাইছে না, সেটাই আমার অপরাধ। ছেলেরা ভোট না দিলে আমি কী করব? করিম চৌধুরী সে জন্য আমার দোকান জ্বালিয়ে দিলেন। আমার জামাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুর করালেন!’’ ক্ষুব্ধ হামিদুল বলেন, ‘‘সব ঘটনাটাই জেলা সভাপতিকে জানিয়েছি। দল এবং প্রশাসনকেও জানাব।’’ যদিও করিম জানিয়েছেন, এই দুই ঘটনার সঙ্গেই তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন: হঠাৎ পুড়ে ছাই ৩০ বাড়ি

চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের জমিতে থাকা দোকানে আগুন। ইসলামপুরের অপ্সরা মোড়ে।বৃহস্পতিবার অভিজিৎ পালের তোলা ছবি।

এ দিন ছিল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচন। তাতে অংশ নিতে দুই গোষ্ঠীর সদস্যরা বেলা ১১টা থেকে কলেজে জড়ো হতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কলেজে আসতে পারেননি করিম গোষ্ঠীর তিন জন সদস্য। ফলে ওই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২০-তে। ২১ সদস্যের কানাইয়া গোষ্ঠীর হাতেই যে জিএস পদটি যাচ্ছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। করিম অনুগামীরা তখন কানাইয়া অনুগামীদের বিরুদ্ধে ওই তিন সদস্যকে অপহরণের অভিযোগ তোলেন। তার পরেই শুরু হয় বচসা। কিছুক্ষণের মধ্যে তা লাঠিসোটা, বাঁশ, কাঠের বাটাম ও লোহার রড নিয়ে মারপিটে গড়ায়। পরে কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘দুই পক্ষই নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল করেছে। তাই কলেজের নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।’’

আলোচনার পরেও পরিস্থিতি কেন হাতের বাইরে চলে গেল? কানাইয়া বলেন, ‘‘জিএস পদটি দখলে থাকবে না বুঝতে পেরে বহিরাগত গুন্ডাদের কলেজে পাঠিয়ে নির্বাচন ভন্ডুল করতে চেয়েছিলেন করিম।’’ করিমের পাল্টা দাবি, ‘‘ছাত্র সংসদের ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে রাখতে কানাইয়া ও তাঁর লোকজনেরা পরিকল্পনামাফিক এ সব করেছেন।’’

কিন্তু এই মারামারিতে যে কলেজের সম্পত্তির ক্ষতি হল, তার কী হবে— প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা। সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, ‘‘এখন কার কাছ থেকে সম্পত্তির দাম আদায় করা হবে? নাকি শাসক দল নিজেরাই দেবে!’’ একই সুর শোনা গিয়েছে কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সির গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ কি রাজ্য সরকার তুলে দিতে পারবে?’’

জেলার পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশের উপর হামলা ও কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশ কর্মীদের সরকারি কাজে বাধাদানের মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।’’ অন্য দিকে, জেলাশাসক আয়েশা রানি জানিয়েছেন, আজ, শুক্রবার দু’পক্ষকে নিয়ে শান্তি বৈঠক হবে। সেখানেই ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Islampur College TMCP Police Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE