Advertisement
E-Paper

নতুন গ্যাস পেতে অপেক্ষার লাইনে বাংলা দ্বিতীয়

রান্নার গ্যাসের নতুন সংযোগ পেতে লম্বা লাইন পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এতই লম্বা লাইন যে উত্তরপ্রদেশকে বাদ দিলে দেশের অন্য সব রাজ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। দিল্লির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য এ কথা বললেও রাজ্যে নিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির কর্তারা এ কথা মানতে রাজি নন। তাঁদের যুক্তি, রাজ্যের কোথাও কোথাও নতুন গ্যাসের সংযোগ পেতে দেরি হলেও সার্বিক ভাবে কোনও সমস্যা নেই।

প্রেমাংশু চৌধুরী ও দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৫

রান্নার গ্যাসের নতুন সংযোগ পেতে লম্বা লাইন পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এতই লম্বা লাইন যে উত্তরপ্রদেশকে বাদ দিলে দেশের অন্য সব রাজ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। দিল্লির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য এ কথা বললেও রাজ্যে নিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির কর্তারা এ কথা মানতে রাজি নন। তাঁদের যুক্তি, রাজ্যের কোথাও কোথাও নতুন গ্যাসের সংযোগ পেতে দেরি হলেও সার্বিক ভাবে কোনও সমস্যা নেই।

কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের ১ মার্চের হিসেব বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ৫৪ হাজারেরও বেশি মানুষ রান্নার গ্যাসের নতুন সংযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। আয়তনে অনেক বড় উত্তরপ্রদেশকে বাদ দিলে দেশের আর কোনও রাজ্যে এত বেশি মানুষ গ্যাসের নতুন সংযোগের জন্য অপেক্ষা করে বসে নেই। বিহার, ওড়িশা বা ঝাড়খণ্ডের মতো পূর্ব ভারতের আর কোনও রাজ্যেও এত বেশি সংখ্যক আবেদনকারী অপেক্ষায় বসে নেই। পশ্চিমবঙ্গে যত জন নতুন সংযোগের আবেদন করে বসে রয়েছেন, ওড়িশার সংখ্যাটা তার অর্ধেকও নয়।

পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্যের বিরুদ্ধে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাই মুখ খুলতে রাজি নয়। কিন্তু ইন্ডেন, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম (এইচপি), ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপি)— তিন তেল সংস্থার কর্তাদেরই দাবি, রাজ্যের পরিস্থিতি এখন এতটা খারাপ নয়। তেল সংস্থার এক কর্তা বলেন, “তিন-চার মাস আগে একটু সমস্যা ছিল। যে পরিমাণ নতুন সংযোগের আবেদন আসছিল, তত সিলিন্ডার বা রেগুলেটরের জোগান ছিল না।” ইন্ডেন এবং এইচপি, দুই সংস্থাতেই এই সমস্যা ছিল। যদিও এখন আর সেই সমস্যা নেই বলেই তাঁদের দাবি।

তেল সংস্থার একটি সূত্র অবশ্য বলছে, শুধু সিলিন্ডার বা রেগুলেটর জোগানের সমস্যাই নয়। গত কয়েক মাস ধরেই তেল সংস্থার কর্মীরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গ্যাসের ভর্তুকি দেওয়া চালু করার কাজে ব্যস্ত। ১ এপ্রিল থেকে রান্নার গ্যাসের সব গ্রাহককেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। ডিস্ট্রিবিউটরদের উপরেও সেই কাজের চাপ ছিল। ফলে নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ কার্যত বন্ধ ছিল। তার ফলেই প্রতীক্ষার লাইন এত দীর্ঘ হয়ে গিয়েছে বলে ওই তেল সংস্থার ওই সূত্রের ব্যাখ্যা।

কিন্তু অন্য রাজ্যেও এই কাজ হয়েছে। সেখানে এই সমস্যা হল না কেন?

তেল সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, গ্রাহকরা অনেকেই শেষ মুহূর্তে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য তথ্য জমা দিয়েছেন। ফলে নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে এই কাজ শুরু হলেও চলেছে মার্চ পর্যন্ত। মার্চ মাসের শুরুতেও ২০ লক্ষের বেশি গ্রাহক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য জমা না দিয়ে বসেছিলেন। ফলে ৩১ মার্চের সময়সীমার চাপে ধাক্কা খেয়েছে নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ। গ্রাহকরা আবার পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, অনেক আগেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও আধার সংক্রান্ত তথ্য দিলেও তা নথিভুক্ত হয়নি। যাদের নিজেদের নামে গ্যাসের সংযোগ ছিল না, তাদেরও নাম বদল করতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। তেল সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকি দেওয়ার কাজ চালুর আগে কাদের নামে একাধিক গ্যাস সংযোগ রয়েছে, তা চিহ্নিত করার কাজ চলছিল। অনেকেই একটির বেশি সংযোগ বাতিল করেছেন বা ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে সমর্পণ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তেল সংস্থাগুলিকে একই ঠিকানায় বা একই ব্যক্তির নামে কোথায় একাধিক সংযোগ রয়েছে, তা চিহ্নিত করে সেই সংযোগ বাতিল করতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৪ লক্ষ ১২ হাজার এই ধরনের সংযোগ বাতিল হয়েছে। মাত্র ১৬,৩৯৫ জন নিজে থেকে একের বেশি সংযোগ বাতিল করিয়েছেন।

এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা দেওয়া চালু করার কাজ শেষ। ফের নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলেই দাবি করছেন তেল সংস্থার কর্তারা। তাঁদের দাবি— নিয়ম মাফিক আবেদন করলে এখন ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই রান্নার গ্যাসের সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের এক কর্তা অবশ্য বলছেন, গোটা রাজ্যে না হলেও রাজ্যের কিছু কিছু অঞ্চলে সমস্যা রয়েছে। যেমন উত্তর ২৪ পরগনার চটকল এলাকা। আর একটি সমস্যাও রয়েছে। তা হল, বিপিএল পরিবারকে নতুন গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে হয়। কিছু রাজ্যে যেখানে
মাসে ১৫-২০ হাজার বিপিএল পরিবারকে নতুন সংযোগ দেওয়া হয়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যাটা মাত্র হাজার দেড়েক।

gas bank uttar pradesh west bengal HP BP delhi kolkata Premangsgu Chowdhury Debapriyo Sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy