Advertisement
E-Paper

ভোল্টেজ বাড়াতে সাবস্টেশন হবে ১২০টি, চিন্তা শুধু জমিই

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ ভোল্টেজে ঘাটতির (লো ভোল্টেজ) সমস্যা সুরাহায় রাজ্য জুড়ে ১২০টি সাবস্টেশন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কিন্তু সাবস্টেশন তৈরির জমি কোথা থেকে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংস্থার অন্দরেই সংশয় দানা বেঁধেছে। বণ্টন কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারের হাতে যে সব ‘খাস’ জমি রয়েছে, অধিকাংশ সাবস্টেশন সেখানেই গড়ে তোলার চেষ্টা হবে। বাকি জমি মালিকদের থেকে কিনে নেওয়া হবে, বাজারদরে। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যের জমি-নীতির সুবাদে বিভিন্ন প্রকল্পের জমি জোগাড় করতে গিয়ে যে ভাবে প্রশাসনকে অপদস্থ হতে হচ্ছে, তা দেখে বিদ্যুৎ-কর্তারাও শঙ্কিত।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৩

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ ভোল্টেজে ঘাটতির (লো ভোল্টেজ) সমস্যা সুরাহায় রাজ্য জুড়ে ১২০টি সাবস্টেশন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কিন্তু সাবস্টেশন তৈরির জমি কোথা থেকে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংস্থার অন্দরেই সংশয় দানা বেঁধেছে।

বণ্টন কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারের হাতে যে সব ‘খাস’ জমি রয়েছে, অধিকাংশ সাবস্টেশন সেখানেই গড়ে তোলার চেষ্টা হবে। বাকি জমি মালিকদের থেকে কিনে নেওয়া হবে, বাজারদরে। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যের জমি-নীতির সুবাদে বিভিন্ন প্রকল্পের জমি জোগাড় করতে গিয়ে যে ভাবে প্রশাসনকে অপদস্থ হতে হচ্ছে, তা দেখে বিদ্যুৎ-কর্তারাও শঙ্কিত।

বিদ্যুৎ দফতরের খবর: লো ভেল্টেজের সমস্যা মেটাতে যে সব সাবস্টেশন তৈরির পরিকল্পনা, সেগুলি হবে মূলত ৩৩ কেভি’র। এর প্রতিটিতে জমি লাগে এক একরের মতো। সেই হিসেবে ১২০টি সাবস্টেশনের জন্য মোটামুটি ১২০ একর প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হল, যেখানে সাবস্টেশন তৈরি হবে, সেখানে খাস জমি না-ও থাকতে পারে। আবার ওই তল্লাটে জমি কেনার ক্ষেত্রেও নানা অন্তরায় থাকাও অস্বাভাবিক নয়। বস্তুত বণ্টনের অভিজ্ঞতা বলছে, সাবস্টেশনের জন্য জমি কিনতে গেলে বহু জায়গায় মালিকদের অনেকে জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দর হাঁকছেন। কেউ কেউ সরকারি চাকরির দাবিও তুলছেন।

এমতাবস্থায় নতুন ১২০ সাবস্টেশনের পরিকল্পনা কত দূর বাস্তবায়িত করা যাবে, সে সম্পর্কে দফতরের একাংশই ধন্ধে রয়েছেন। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জমি জটের কারণে রাস্তা দিয়ে হাই ভোল্টেজ লাইন টানা যাচ্ছে না। টাওয়ার বসাতেও বাধা আসছে। এর আগে অনেক জায়গায় সাবস্টেশন তৈরি শুরু করেও বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’’

বণ্টন কর্তৃপক্ষের একাংশ অবশ্য আশাবাদী। তাঁদের বক্তব্য: ৮০-৯০টি সাবস্টেশন তৈরির জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ জেলায় খাস জমি নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। খাসের বাইরে যা দরকার পড়বে, বাজারদরে দাম মিটিয়ে কেনা হবে। বণ্টন-কর্তাদের এই অংশের এ-ও দাবি, জমি-মালিকদের অধিকাংশ এখন বাজারদরে জমি দিতে রাজি হচ্ছেন। ‘‘কারণ ওঁরা বুঝেছেন, সাবস্টেশন, টাওয়ার, হাইটেনশন লাইন ইত্যাদি না-হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া যাবে না। কিংবা বিদ্যুৎ গেলেও লো ভোল্টেজের কারণে পরিষেবা ব্যাহত হবে।’’— মন্তব্য এক বণ্টন-কর্তার। জমি কিনতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিও সর্বতো ভাবে সাহায্য করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশে গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি পরিবারের কাছে সফল ভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে। এই ভাবে সাবস্টেশন তৈরির কাজও সেরে ফেলতে পারব।’’

প্রসঙ্গত, গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্প রূপায়ণের ময়দানে পশ্চিমবঙ্গ দেশে প্রথম সারিতে। আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে ফেলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছলেও লো ভোল্টেজ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। যে প্রসঙ্গে বণ্টন সংস্থার এক সূত্রের ব্যাখ্যা, ‘‘গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আগে অনেক সাবস্টেশন তৈরি হয়েছে বটে। তবে চাহিদা দিন দিন বাড়ায় পুরনো ব্যবস্থায় এখন আর কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।’’

এবং এই সঙ্কটের কিছুটা হলেও নিরসনের লক্ষ্যে এক সঙ্গে এতগুলো নতুন সাবস্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত। এর পিছনে খরচ হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা, যার ৬০% জোগাবে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকার ও বণ্টন সংস্থাকে বাকি টাকার সংস্থান করতে হবে। খাতায়-কলমে কাজ শেষের সময়সীমা ধরা হয়েছে দু’বছর। যদিও বণ্টনের এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘সব জমি যতক্ষণ হাতে না-আসে, ততক্ষণ ঠিকঠাক সময়সীমা বাঁধা যাচ্ছে না।’’

পাশাপাশি বয়সের ভারে জীর্ণ বিভিন্ন ট্রান্সফর্মারের শক্তিবৃদ্ধির পরিকল্পনা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নতুন ট্রান্সফর্মারও বসানো হবে। বণ্টন-কর্তারা জানিয়েছেন, কোন জেলায় কতগুলো ট্রান্সফর্মার বসবে, আপাতত তা চিহ্নিত করা হচ্ছে।

State Power distribution company West bengal transformer pinaki bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy