Advertisement
E-Paper

‘অবনী বাড়ি আছো?’ পুরনোদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে নতুনেরা, ২৩ বছর আগের বুথচিত্র বুঝতে শাসক তৃণমূলের মধ্যে অন্য এসআইআর

কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, গত এক সপ্তাহে মাঠে-ময়দানে তৃণমূলের এখনকার অনেক কর্মীকে ‘ঠোক্কর’ খেতে হয়েছে। সেই বাধা ডিঙোতেই পুরনো কর্মীদের দুয়ারে কড়া নাড়ছেন নতুন কর্মীরা।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১০:০৮
Today\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s young TMC workers are reaching out to the inactive workers of the past through the SIR process

নবীন তৃণমূল কর্মীরা যাচ্ছেন প্রবীণদের দুয়ারে। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

২৩ বছর আগে যখন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) হয়েছিল, তখন তৃণমূলের বয়স চার বছর। সে দিনের ‘চারাগাছ’ এখন ‘বটবৃক্ষ’। ২৩ বছর পর যখন ফের এসআইআর হচ্ছে, তখন তা তৃণমূলের সংগঠনে ভিন্ন অর্থ নিয়ে হাজির হয়েছে— ‘স্পেশ্যাল ইন্টেনসিভ রিলেশন’ (বিশেষ নিবিড় সম্পর্ক)।

সম্পর্ক পুরনোদের সঙ্গে নব্যদের। প্রবীণদের সঙ্গে নবীনদের। বিরোধী তৃণমূলের ঘাম-ঝরানো কর্মীদের সঙ্গে শাসক তৃণমূলের কর্মীদের।

২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ‘সূচক’ করে গত ৪ নভেম্বর থেকে বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন কমিশন নিযুক্ত বুথ লেভেল আধিকারিকেরা (বিএলও)। গোটা সংগঠনকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে তৃণমূলও। বিএলও-দের ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকছেন বুথস্তরের তৃণমূলকর্মীরা। কিন্তু কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, গত এক সপ্তাহে মাঠে-ময়দানে তৃণমূলের এখনকার অনেক কর্মীকে ‘ঠোক্কর’ খেতে হয়েছে। সেই বাধা ডিঙোতেই পুরনো কর্মীদের দুয়ারে কড়া নাড়ছেন নতুন কর্মীরা। কারণ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকা বোঝা লোকেরা সাহায্য না-করলে বহুলাংশেই দলের কাজ বাধা পাচ্ছে।

জেলায় জেলায় এক ছবি। যে কর্মীরা নানাবিধ কারণে বসে গিয়েছেন বা বয়ঃজনিত কারণে নিষ্ক্রিয়, তাঁদের কাছে ‘মার্গদর্শন’ চাইছেন আজকের কর্মীরা। নানা কারণে এখনকার নেতাদের সঙ্গে যাঁদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তাঁদের কাছেও পৌঁছোতে হচ্ছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার ব্যাপারে বিশদ জানতে। ২৩ বছর আগের সেই ভোটার তালিকা কমিশনের ওয়েবসাইটে রয়েছে। কিন্তু তার বিন্যাস সম্পর্কে তখনকার সংগঠনের লোক ছাড়া এখনকার তৃণমূলের অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। সেই সময়ে এমন অনেক বুথ ছিল, যা এখন নেই। বিলুপ্ত হওয়া কোন ভোটকেন্দ্রের ভোটারের নাম নতুন কোন বুথে সংযোজিত হয়েছে, তা পুরনোদের পক্ষে ছাড়া জানা সম্ভবও নয়। ফলে পুরনো দিনের ‘অবনী’দের দুয়ারে পৌঁছে এখনকার কর্মীরা জানতে চাইছেন, ‘বাড়ি আছো?’

তৃণমূল সূত্রের খবর, বহু জায়গায় পুরনো কর্মীরা নতুন করে বার হচ্ছেন। দলের তরফে যে সহায়তা শিবিরগুলি খোলা হয়েছে, সেখানে সকাল-বিকাল নিয়ম করে বসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ কটাক্ষমিশ্রিত প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, কাজ ফুরোলেই আবার ‘পাজি’ আখ্যা দেওয়া হবে না তো? অভিমান ভাঙাতে আজকের অনেক উঁচুতলার নেতাও পুরনো দিনের কর্মীদের বাড়িতে পৌঁছোচ্ছেন।

২৩ বছর কম সময় নয়। কতটা সময়, বুঝতে গেলে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দিকে তাকালেই হবে। তৃণমূলে এখন সংগঠনের বেশির ভাগ বিষয় দেখেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ বার যখন এসআইআর হয়েছিল, তখন অভিষেকের বয়স ছিল ১৫ বছর। অর্থাৎ, তখন তিনি ভোটারও হননি। অভিষেক প্রথম ভোট দিয়েছিলেন ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। ২৩ বছরে বঙ্গ রাজনীতির সমীকরণও বদলে গিয়েছে। সে দিনের শাসক সিপিএম এখন প্রান্তিক শক্তি। সে দিনের বিরোধী তৃণমূল এখনকার শাসক। আবার প্রায় আড়াই দশক আগে বঙ্গে যে বিজেপির ‘ব’ ছিল না, তারা এখন প্রধান বিরোধী দল।

এই পুরনোদের কাছে পৌঁছোনোর বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারাও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ যেমন বলছেন, ‘‘এ বার ভোটের আগেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটের লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘পুরনোরা এ ব্যাপারে অনেক বেশি জানেন। নতুনেরা উদ্যম নিয়ে কাজ করছেন, পুরনোরা অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করছেন। এই লড়াই নতুনদের পুরনোদের কাছে পৌঁছোনোর সুযোগ করে দিয়েছে।’’ হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইনের বক্তব্য, ‘‘এটা বাস্তব যে, নতুনদের পক্ষে সবটা জানা সম্ভব নয়। তাঁরা পুরনোদের কাছে যাচ্ছেন আর পুরনো দিনের কর্মীরাও দলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।’’

বাস্তব হল, পশ্চিমবঙ্গে আসন পুনর্বিন্যাস (ডিলিমিটেশন) হওয়ার পরে ভোটার তালিকার ছবি বদলে গিয়েছে। বুথের অদলবদল তো বটেই, বিধানসভারও ওলটপালট হয়েছে। জেলাওয়াড়ি সংখ্যার বদলের পাশাপাশি বিন্যাসগত বদলও বিস্তর। ফলে এখনকার তরুণ কর্মীদের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। তৃণমূল এমন অনেক বিএলএ নিয়োগ করেছে, যাঁদের জন্মই হয়তো ২০০২ সালে। তাঁদেরও খানিক ‘বিড়ম্বিত’ হতে হচ্ছে।

সেই বিড়ম্বনা কাটাতেই পুরনো দিনের ‘অবনী’দের দুয়ারে যাচ্ছেন এখনকার কর্মীরা। কড়া নাড়ছেন। ‘বাড়ি আছো?’ অনেকাংশে সাড়াও পাচ্ছেন। নিঃশব্দে তৃণমূলের অন্দরে চলছে অন্য এসআইআর । স্পেশ্যাল ইন্টেনসিভ রিলেশন। বিশেষ নিবিড় সম্পর্ক। পুরনোদের সঙ্গে নব্যদের। প্রবীণদের সঙ্গে নবীনদের। বিরোধী তৃণমূলের ঘাম ঝরানো কর্মীদের সঙ্গে শাসক তৃণমূলের কর্মীদের।

Special Intensive Revision West Bengal Politics TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy