Advertisement
০৭ মে ২০২৪

টোল কর্মীদের মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র রাজ্য সভাপতি। সুতরাং ‘ভিআইপি’। অভিযোগ, এই নেতা অশোক রুদ্র দাবি করেন, টোল না দিয়েই তাঁর গাড়িকে সেতু পেরোতে দিতে হবে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র রাজ্য সভাপতি। সুতরাং ‘ভিআইপি’। অভিযোগ, এই নেতা অশোক রুদ্র দাবি করেন, টোল না দিয়েই তাঁর গাড়িকে সেতু পেরোতে দিতে হবে! কিন্তু টোল প্লাজার জনা কয়েক কর্মী আপত্তি করায়, তাঁর অনুগামীরা ওই কর্মীদের মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রনেতা অবশ্য এই অভিযোগ মানছেন না। টোল প্লাজার কর্মীরাও মুখ খুলতে নারাজ। পুলিশে কোনও অভিযোগও তাঁরা দায়ের করেননি।

অভিযোগ বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটেছে বালির নিবেদিতা সেতু টোল প্লাজায়। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ডানকুনির দিক থেকে কলকাতায় আসছিলেন অশোক। অভিযোগ, টোল প্লাজার এগজেমটেড লেন (টোল না দিয়ে ভিআইপি-দের গাড়ি যে লেন দিয়ে যায়) দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর গাড়িটি আটকান সেখানকার কর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, তখনই তাঁদের সঙ্গে বচসা বাধে অশোকবাবুর। তার পরে মারধরও করা হয় টোল প্লাজার কর্মীদের। গত মাসেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত টিএমসিপি কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন অশোক।

গত বছর ডিসেম্বরে ডানকুনি টোল প্লাজাতেও ভিআইপি লেন দিয়ে যাওয়ার সময় রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডলকে আটকেছিলেন টোল প্লাজার কর্মীরা। অভিযোগ, তখন ওই তৃণমূল নেতা গাড়ি থেকে নেমে জুতোপেটা করেছিলেন টোল প্লাজার কর্মীকে।

অশোক অবশ্য নিবেদিতা সেতুর ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমার সম্মানহানির চেষ্টা হচ্ছে। কোনও দিন টোল না দিয়ে কোথাও যাই না। বালিতেও তাই করেছি। টোল যে দিয়েছি তার প্রমাণও রয়েছে। এ রকম কিছু ঘটে থাকলে সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখানো হোক।’’ টোল প্লাজা কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। কর্মীরাও প্রকাশ্যে কোনও কথা বলতে চাইছেন না।

স্থানীয় সূত্রে অবশ্য খবর, ডানকুনির দিক থেকে কলকাতায় আসার জন্য নিবেদিতা সেতুর টোল-ছাড় লেনে এসে ঢোকে অশোকবাবুর গাড়ি। কিন্তু ব্যারিকেড সরিয়ে তাঁর গাড়ি অবাধে যেতে দিতে রাজি হননি সেখানকার কর্মীরা। শাসক দলের ছাত্রনেতা এতে বিরক্ত হন। জানতে চান, কেন ব্যারিকেড সরানো হবে না। কর্মীরা জানান, কেবল ভিআইপি-দের গাড়িই ওই লেন দিয়ে বিনা টোলে যেতে পারে। এই নিয়ে বচসা বাধে।

এ বার নিজের পরিচয় দেন অশোক। জানান, তিনি রাজ্যের

শাসক দলের ছাত্র শাখা টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি। টোল প্লাজার ওই কর্মীরাও পাল্টা জানান, তাঁরাও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক। এতে আরও চটে যান অশোক। অভিযোগ, এর পরে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে মমতা দেখিও না। আমিই সব থেকে বড় ভিআইপি!’’ কিন্তু তাতেও টোল প্লাজার কর্মীরা অশোকের গাড়ি ছাড়তে রাজি হননি।

টোল প্লাজার কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, এর পরেই অশোকবাবুর ফোন পেয়ে বেলুড়ের একটি কলেজ থেকে বেশ কিছু ছেলে নিবেদিতা সেতুতে চলে আসেন। টোল প্লাজার দুই কর্মী তাদের হাতে প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। এর মধ্যেই ঘটনাস্থল ছেড়ে যান অশোক।

টোল প্লাজার একাংশ কর্মী এবং স্থানীয় সূত্রে শনিবার তৃণমূল ছাত্রনেতার ওই অভব্য আচরণের কথা প্রকাশ্যে আসে। যদিও হেনস্থার ভয়ে কেউই প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না। স্থানীয় মানুষদের কারও কারও মতে, শাসক দলের নেতা বলেই প্রকাশ্যে অশোকের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। টোল প্লাজা কর্তৃপক্ষও কথা বলতে চাননি।

এ দিনই এই সংক্রাম্ত খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে এবিপি আনন্দের সাংবাদিক প্রকাশ সিংহ মারধর খান বলে অভিযোগ। তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর সঙ্গী চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরা টোল প্লাজার কর্মীরা মাটিতে আছড়ে ভেঙে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। এ কথা অস্বীকার করে নিবেদিতা সেতু টোল প্লাজার চিফ অপারেশন অফিসার সুমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও সাংবাদিককে মারধর করা হয়নি। অনুমতি না-নিয়ে ছবি তুলছিলেন, তাই কর্মীরা আটকেছিলেন। উনিই প্রথমে আমাদের এক অফিসারকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। তখন অন্য কর্মীরা প্রতিবাদ করেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE