Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নদীর টানে দুই ঠিকানা

‘‘নদী নদী নদী/ সোজা যেতিস যদি/ সঙ্গে যেতুম তোর/ আমি জীবনভর।’’ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতোই নদীর সঙ্গে এমন যাওয়ার সাধ অনেক বাঙালিরই। তাঁদের সেই ইচ্ছেই এ বার খানিকটা পূরণ হতে চলেছে। নদীর সঙ্গে চলতে না পারলেও নদীর চলন সারারাত ভরে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে ডুয়ার্স। চেল আর মূর্তি, ডুয়ার্সের এই দুই নদীর তীরে হোম-স্টেতে থাকলেই এ বার সেই সুযোগ মিলবে।

রিসর্ট: পশ্চিম ডামডিমের পর্যটক আবাস। নিজস্ব চিত্র

রিসর্ট: পশ্চিম ডামডিমের পর্যটক আবাস। নিজস্ব চিত্র

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০১
Share: Save:

‘‘নদী নদী নদী/ সোজা যেতিস যদি/ সঙ্গে যেতুম তোর/ আমি জীবনভর।’’

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতোই নদীর সঙ্গে এমন যাওয়ার সাধ অনেক বাঙালিরই। তাঁদের সেই ইচ্ছেই এ বার খানিকটা পূরণ হতে চলেছে। নদীর সঙ্গে চলতে না পারলেও নদীর চলন সারারাত ভরে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে ডুয়ার্স। চেল আর মূর্তি, ডুয়ার্সের এই দুই নদীর তীরে হোম-স্টেতে থাকলেই এ বার সেই সুযোগ মিলবে।

ডুয়ার্সের পশ্চিম ডামডিমে চেল নদীর ধার ঘেঁষেই তৈরি হয়েছে কটেজ। নদী আর রিসর্ট এখানে মাখামাখি। যতটা দূরত্বে থাকলে পাহাড়ি নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা যায় মাত্র ততটা দূরত্বেই রয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্র। বর্ষায় তো নদীর আওয়াজও কটেজের ঘরে বসে পাওয়া যায়। শীতে সেই নদীই মৃদু নীল রেখা হয়ে বয়। নদীর ওপারে ঘন জঙ্গল। বৈকুণ্ঠপুর বন দফতরের কাঠামবাড়ির রেঞ্জ। আর নদীর এ পারে ডামডিম চা বাগান। সেই বাগানকে পাশে রেখেই জঙ্গল আর নদীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে কটেজগুলি। রাজ্যে নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে ডুয়ার্স জুড়ে যে পর্যটন কেন্দ্র তৈরির কাজ হয়েছে তারই অন্যতম এই পশ্চিম ডামডিম।

তৈরির পর স্থানীয় ভাবে মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির হাতেই এর পরিচালন ভার দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত সমিতি বেসরকারি সংস্থার কাছে শর্তসাপেক্ষে লিজ দিয়ে কেন্দ্রটি চালাবার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছর পুজো থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে খুলে দেওয়া হয় কেন্দ্রটি। আটটি কটেজ একটি বড় খাবার ঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এখানে। বাতানুকূল পরিষেবাও রয়েছে। পর্যটকমন্ত্রী গৌতম দেবের নির্দেশে কয়েকবিঘা জমি জুড়ে ফলের গাছ লাগাবার কাজ চলেছে। মন্ত্রী জানান, ‘‘একেই তো নদীর পাড়। তার উপর ফলের গাছ থাকলে পর্যটকেরা প্রচুর পাখি দেখার সুযোগও পাবেন।’’

চেল নদীর মতোই, ডুয়ার্সের আরেক বিখ্যাত নদী মূর্তিকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ দিচ্ছে আপার কুমাই। ধূপঝোরা থেকে গরুমারাকে গায়ে নিয়ে মূর্তিকে বইতে দেখেছেন অনেকেই। কিন্তু পাহাড় চিরে নেমে আসা মূর্তি বা পাহাড় চুড়োয় দাঁড়িয়ে অনেক নীচে মূর্তি নদীকে দেখা অন্য অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা নেওয়ারই সুযোগ করে দিচ্ছে আপার কুমাই। অর্গানিক চা বাগান কুমাইয়ের কারখানা থেকে চায়ের গন্ধ নিতে নিতেই আপার কুমাই পৌঁছে যাওয়া যায়।

এই গ্রামেরই বাসিন্দা বিজয় থাপা সেনা জওয়ান হিসেবে কাজ করতেন। রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল সিংহেরও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন তিনি। অবসরের পর একার চেষ্টাতেই অখ্যাত পাহাড়ি গ্রামটির খোলনলচে বদলে ফেলে হোম-স্টে পর্যটনের কেন্দ্র হিসাবে গ্রামকে গড়ে তুলছেন। নিজের বাড়িতেই তিনটি ঘর পর্যটকদের জন্যে ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বাহারি পাতাবাহার, টাটকা আনাজের ঘরোয়া রান্না রয়েছে পর্যটকদের অভ্যর্থনার জন্য। খাবার ঘর থেকেই দেখা যায় কয়েকশো মিটার নীচে মূর্তি নদীর বয়ে চলা। বাড়তি পাওনা একাধিক ভিউ পয়েন্ট ও দুশো বছরের বেশি পুরনো বৌদ্ধ স্তুপ।

নদীর টানে এই দুই নতুন ঠিকানাতেই আসবেন পর্যটকেরা। আশায় আছে পশ্চিম ডামডিম ও আপার কুমাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE