Advertisement
E-Paper

আতঙ্কেই দার্জিলিং ছাড়লেন জোসেফরা

ফ্রান্স থেকে এসেছেন সেবাস্টিয়ান এবং জোসেফ। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্টনি। তিন বন্ধুই তাঁদের পরিচিতদের মুখে কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা শুনেছেন। শুনেছেন, এই পাহাড়ের চা বাগান, জঙ্গলের কথাও। কিন্তু এটাও জানতেন, ভরা মরসুমে গেলে দার্জিলিঙে ইচ্ছে মতো ঘোরাফেরা মুশকিল।

প্রতিভা গিরি

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০৩:৩৯
বিদায়: সমতলে নামার অপেক্ষায় দার্জিলিং বাসস্ট্যান্ডে। শুক্রবার। ছবি: সন্দীপ পাল।

বিদায়: সমতলে নামার অপেক্ষায় দার্জিলিং বাসস্ট্যান্ডে। শুক্রবার। ছবি: সন্দীপ পাল।

কাঞ্চনজঙ্ঘা একই রকম ঝকঝকে। কিন্তু দার্জিলিং যে এমন বদলে যাবে দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি।

ফ্রান্স থেকে এসেছেন সেবাস্টিয়ান এবং জোসেফ। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্টনি। তিন বন্ধুই তাঁদের পরিচিতদের মুখে কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা শুনেছেন। শুনেছেন, এই পাহাড়ের চা বাগান, জঙ্গলের কথাও। কিন্তু এটাও জানতেন, ভরা মরসুমে গেলে দার্জিলিঙে ইচ্ছে মতো ঘোরাফেরা মুশকিল। তাই তাঁরা বেছে নেন বর্ষার ঠিক মুখের সময়টা। যার পোশাকি নাম ‘মনসুন ট্যুরিজম’। সেবাস্টিয়ান বলছিলেন, ‘‘মেঘ জমবে পাহাড়ের গায়ে। তারপরে আস্তে আস্তে তা ডানা মেলে গোটা উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। চোখের সামনে জল ভরা মেঘে ঢেকে যাবে চারপাশ—এই দেখতেই এসেছিলাম।’’ জোসেফ বললেন, ‘‘মেঘ দেখলাম, তবে আতঙ্কের মেঘ।’’

তার বদলে শুক্রবার চকবাজারেই দাঁড়িয়ে রইলেন ৬ ঘণ্টা। আর তারপরে সরকারি বাস ধরে সমতলে নেমে যেতে হল। শুধু তাঁরাই নন। মোর্চার ডাকা অনির্দিষ্টকালের পাহাড় বন্‌ধে এ দিন সকাল থেকেই পাহাড় ছাড়ার হিড়িক। তাঁদের মধ্যে যেমন পর্যটকেরা রয়েছেন, তেমন ছিলেন পাহাড়ে কাজ করতে আসা যুবকেরাও। কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ বা শপিং মল, হোটেলে কাজ করেন। মোর্চার ফতোয়ায় পাহাড় ছাড়ছেন সকলেই। কিন্তু তাঁরা সকলে বাসও পাননি সকালে। চোপড়ার মহম্মদ সেলিম, ইশক খান, কালিয়াগঞ্জের মোহিত দাস, কমল বণিকেরা সকালে থেকে লাইন দিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাস না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

পরিস্থিতি আঁচ করে ভোর থেকেই অবশ্য চকবাজারে চলে এসেছিলেন সদর ডিএসপি সিদ্ধার্থ দোরজি। হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা করে পর্যটক, বয়স্ক, মহিলা ও শিশুদের আলাদা লাইন করে আগে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। দুপুর দু’টোয় প্রথম শিলিগুড়ি থেকে দু’টো বাস এসে ফিরে যায়। পরে আরও বাস আসে। কিন্তু যত জন নামতে চেয়েছিলেন, তত বাস ছিল না। শিবপুরের বাসিন্দা প্রশান্ত গঙ্গোপাধ্যায় প্রতি বছরই পরিবার নিয়ে পাহাড়ে আসেন। ঘণ্টা চারেক দাঁড়িয়ে থাকার পর বাস পান। অসুস্থ দাদার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা অরিজিৎ দাস। বললেন, ‘‘এমন ভোগান্তি যেন শত্রুরও না হয়।’’

গত কয়েকদিনে দু’টি সরকারি বাস পোড়ানো হয়েছে পাহাড়ে। তাই মোর্চার ডাকা বন্‌ধের দ্বিতীয় দিনে পুলিশ পাহারায় পাঠানো হয়েছে সব বাস। চকবাজারে সকালে ছিলেন জেলা পরিবহণ আধিকারিক রাজেন সুনদাস। কলকাতায় কথা বলে যত সম্ভব বাসের ব্যবস্থা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। দুপুরে লাইনে দাঁড়ানো সকলকে মারোয়াড়ি যুব মঞ্চ জল ও বিস্কুট খাওয়ায়।

এ ক’দিনের মতো শুক্রবারেও সকাল থেকেই শৈলশহর ছিল শুনশান। ম্যাল চৌরাস্তায় স্থানীয় লোকজন বসে সময় কাটান। স্কুল কলেজ, দোকান, বাজার বন্ধ। ঘুম থেকে সুখিয়াপোখরি, সোনাদা সর্বত্র রাস্তায় ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার দৃশ্য। সরকারি অফিস খোলা থাকলেও গাড়ির অভাবে আসতে পারেননি কর্মীরা। তাই এ দিন হাজিরাও ছিল কম।

অন্য দিকে, গয়াবাড়ি স্টেশনে আগুন লাগানোর পরে আপাতত টয় ট্রেন বন্ধ রাখাক কথা ঘোষণা করল রেল। শুক্রবার উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর দফতর থেকে একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত টয় ট্রেনের সব রাইড বাতিল করা হয়েছে। সোমবার থেকে পাহাড়ে বন্‌ধের আওতা থেকে পরিবহণকে ছাড় দেওয়া হলেও টয় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আগুন লাগানোর পরে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না রেল কর্তৃপক্ষ।

darjeeling Hill Strike Tourists সেবাস্টিয়ান জোসেফ Monsoon Tourism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy