সাতসকালে পাড়ায় নতুন ফেরিওয়ালার হাঁকডাক দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে ঝোলাভর্তি মালপত্রের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ডাকাতির ছক। উত্তরপ্রদেশের ‘বদায়ুঁ’ গ্যাংয়ের কারসাজিতে এ বার চাঞ্চল্য ছড়াল মুর্শিদাবাদে। গত ২৯ নভেম্বর সুতি থানার মদনা এলাকার একটি সোনার দোকানে ডাকাতির কিনারা করতে গিয়ে এমনই তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। তদন্তে নেমে ঝড়খণ্ডের পাকুড় থেকে তিন মহিলা-সহ ওই গ্যাংয়ের মোট ছ’জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সুতি থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের নাম সুনীল, বিজয় সিংহ, শ্যামসুন্দর, সোনি, প্রিয়াঙ্কা এবং রুবি। এদের প্রত্যেকেরই বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই গ্যাংটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে অপরাধ ঘটায়। ভিন্রাজ্য থেকে এসে তারা প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এলাকায় যাতে কেউ সন্দেহ না করে, তাই সঙ্গে রাখা হয় পরিবারের মহিলা সদস্যদের। মহিলারা সঙ্গে থাকায় খুব সহজেই এলাকায় বাড়িভাড়া পেয়ে যেত এই দুষ্কৃতীরা। এর পরই শুরু হত ‘অপারেশন’—এর প্রস্তুতি। গ্যাংয়ের পুরুষ সদস্যেরা দিনেরবেলা ফেরিওয়ালা সেজে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরত এবং সম্ভাব্য দোকান বা বাড়ি ‘রেকি’ করে আসত।
আরও পড়ুন:
ঘটনার সূত্রপাত মাসখানেক আগে। ২৯ নভেম্বর দুপুরে মদনা এলাকার ওই সোনার দোকানে হানা দেয় ৭-৮ জনের একটি সশস্ত্র দল। দোকানের নৈশপ্রহরীকে বেঁধে রেখে চোখের পলকে বিপুল পরিমাণ সোনার গয়না লুট করে চম্পট দেয় তারা। তদন্তে নেমে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার অমিতকুমার সাউ জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে জানা যায় যে, এই দুষ্কৃতীরা বাংলার নয়। বরং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা এই ‘বদায়ুঁ’ গ্যাং সুতি এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঝড়খণ্ডের পাকুড় এলাকায় হানা দিয়ে অভিযুক্তদের পাকড়াও করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ধৃতদের কাছ থেকে লুট হওয়া অলঙ্কার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে ওই চক্রে আর কারা জড়িত রয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় এলাকায় নিরাপত্তা এবং ভাড়াটেদের পরিচয় যাচাই নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।