Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Sundarbans

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় নিশ্চিন্ত বাঘ দেখা দিচ্ছে সপরিবারে

সোমবার সুন্দরবনের খাঁড়ির ভিতরে লঞ্চে ঘোরার সময়ে পর্যটকদের সামনে নদীর পাড়ে দুই বাচ্চা নিয়ে হাজির ৮-৯ বছরের বাঘিনী। সুন্দরবনে এত সুন্দর সপরিবার বাঘ দেখার সুযোগ সচরাসচর মেলে না।

নদীর পারে শাবক-সহ বাঘ। সোমবার সুন্দরবনে। ছবি নিত্যানন্দ চৌকিদারের সৌজন্যে।

নদীর পারে শাবক-সহ বাঘ। সোমবার সুন্দরবনে। ছবি নিত্যানন্দ চৌকিদারের সৌজন্যে।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩০
Share: Save:

লঞ্চ থেকে অপলক নয়নে একদল মানুষ দেখছে তাদের। আর নদীর পাড়ে গাছগাছালির ফাঁকে কাদায় বসে তারাও পাল্টা তাকিয়ে রয়েছে লঞ্চটার দিকে। উদ্দীপনা ঝরে পড়ছে বন-বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুন্ডুর গলায়, “বডি ল্যাঙ্গুয়েজটা দেখুন। কতটা রিল্যাক্সড দেখুন। সঙ্গে দু’টো শিশু নিয়েও চোখে-মুখে কোনও অস্বস্তি বা ভয়ের ছবি নেই।”

সোমবার সুন্দরবনের খাঁড়ির ভিতরে লঞ্চে ঘোরার সময়ে পর্যটকদের সামনে নদীর পাড়ে দুই বাচ্চা নিয়ে হাজির ৮-৯ বছরের বাঘিনী। সুন্দরবনে এত সুন্দর সপরিবার বাঘ দেখার সুযোগ সচরাসচর মেলে না। সেই ছবি ঘুরছে নেট দুনিয়ায়। মুহূর্তে ঝলকে উঠেছিল পর্যটকদের গাইড নিত্যানন্দ চৌকিদারের ক্যামেরা। ১৫ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ নিত্যানন্দ মঙ্গলবার ফোনে জানালেন, দু’টো নয়, তিনটে বাচ্চা ছিল।

এই বাঘিনীর আগের সন্তান ছিল যার বয়স প্রায় তিন বছর। যে দু’টোকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, যারা মায়ের কোল ঘেঁষে ঘুরছিল, তাদের বয়স ৪-৫ মাস। নিত্যানন্দের কথায়, “ইদানীং আরও একটা বাঘিনী তার সন্তানদের নিয়ে এ ভাবে নদীর পাড়ে চলে আসছে। পর্যটকদের দেখা দিচ্ছে।”

শুধু সংরক্ষণ নয়, সুন্দরবনের বাঘেদের নিরাপত্তা এখন জোরদার হয়েছে, দাবি নিত্যানন্দের। আগে যখন-তখন মাছ ধরা ও মধু সংগ্রহের নামে মানুষ তাদের এলাকায় ঢুকে পড়ত, সেটা অনেকটা কমানো গিয়েছে। শান্তি ফিরেছে বাঘেদের মনে। সময়ের সঙ্গে তারা বুঝেছে, এই পর্যটকদের লঞ্চ তাদের বিরক্ত করতে বা তাদের ক্ষতি করতে আসছে না। “আর তাই তো এত নিশ্চিন্তে নিজেদের বাচ্চাদের নিয়ে নদীর ধার পর্যন্ত চলে আসছে বাঘিনী”, বলছেন নিত্যানন্দ। তাঁর দাবি, পর্টকদের লঞ্চ তুলনায় বড়। জেলেদের বা মধু-সংগ্রহকারীদের নৌকা ছোট, সেই তফাতটুকুও বোধকরি বাঘেদের এখন নজরে এসেছে।

এর পিছনে বনকর্মীদের কৃতিত্ব দিচ্ছেন জয়দীপ। রাজ্য বনপ্রাণ উপদেষ্টামন্ডলীর এই সদস্যের যুক্তি, “বাঘেদের সঙ্গে মানুষের সীমানায় যে নাইলনের পাঁচিল তা সুরক্ষিত রাখতে বনকর্মীরা দিন-রাত কাজ করে চলেছেন। বদলেছে পর্যটকদের ধরণও। আগে লঞ্চে মাইক বাজিয়ে পিকনিক করা হত। তাতে বিরক্ত হত বাঘেরা। এখন সে সব অনেক কমানো গিয়েছে।” তাঁর মতে, বাঘ-সহ অন্য বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার নিয়মাবলী এখন বাইবেলের মতো করে মেনে চলা হচ্ছে। তাতেই সাফল্য এসেছে। তাতেই বদলেছে বাঘেদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজও।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিরেক্টর তাপস দাসের কথায়, “গত সুমারিতে সুন্দরবনে ৯৬-র বেশি বাঘ পাওয়া গিয়েছে। এ বার আবারও সুমারি করা হয়েছি। সঠিক সংখ্যা এখনও জানা না গেলেও আমাদের ধারণা বাঘ যথেষ্ট সংখ্যায় বেড়েছে। অনায়াসে ব্রিড করছে।“ কারণ হিসাবে তাপসের দাবি, ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বাঘেদের। তার জন্য জঙ্গলে ২১টা স্থায়ী ক্যাম্প এবং নদীবক্ষে সাতটা ফ্লোটিং ক্যাম্প করা হয়েছে। তিনি বলেন, “পুজোর সময়ে উৎসবেও নজরদারিতে এতটুকু ঢিলে দেওয়া হয়নি। ভিতরে যাতে বাইরের লোক ঢুকতে না পারে, সেই দিকে লক্ষ রাখা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans Royal Bengal Tiger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE