ধৃত দুই জওয়ান।—নিজস্ব চিত্র
হাতকড়া পরানো দু’জনকে দেখিয়ে ওসি জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এরা?’’
মাত্র কয়েক মুহূর্তের স্তব্ধতা। তার পর চোখমুখ বদলে গেল তার। তর্জনী তুলে চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘এরাই, এরাই। এরাই আমাকে...।’’
পুরোটা বলতে পারল না। হাঁপাতে হাঁপাতে মায়ের গায়ে নেতিয়ে পড়ল অমৃতসর এক্সপ্রেসে গণধর্ষিত কিশোরী।
শনিবার সকাল ১০টা। হাওড়া রেল পুলিশের থানায় ওসি-র ঘরে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অত্যাচারিত কিশোরী। তাকে ধরে আছেন বাড়ির লোকজন। ওসি ওই কিশোরী ও তার মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁরা তৈরি কি না। ইতিবাচক জবাব পেয়ে ওসি নির্দেশ দিলেন, ‘‘নিয়ে এসো ওদের।’’
ওরা মানে ওই দু’জন। বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দুই জওয়ান পবন কুমার ও বালকরাম যাদব। ২৬ ডিসেম্বর অমৃতসর এক্সপ্রেসের কামরায় কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় যে দু’জনকে শুক্রবার সন্ধ্যায় গুয়াহাটিতে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পর দিনই অভিযুক্তদের অন্যতম, সেনাবাহিনীর জওয়ান মঞ্জরীশ ত্রিপাঠীকে সেই কামরা থেকে গ্রেফতার করা হলেও পবন আর বালকরাম এতদিন পালিয়ে ছিলেন।
শুক্রবার রাতেই বালকরাম ও পবনকে গুয়াহাটি থেকে বিমানে কলকাতায় নিয়ে আসে হাওড়া রেল পুলিশ। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জিআরপি থানায়। আর সেখানেই এ দিন ওই দু’জনকে শনাক্ত করার জন্য ধর্ষিত কিশোরীকে তার বাড়ির লোকজন-সহ ডেকে পাঠায় রেল পুলিশ।
কিশোরীকে নিয়ে তার মা-বাবা পৌঁছনোর পর তাদের ওসি-র ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। ধৃত পবন ও বালকরামকে ঘরে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন ওসি। দু’জনকে দু’দিক থেকে দু’জন কনস্টেবল হাতকড়া ধরে নিয়ে ঘরে ঢোকেন। দরজার সামনেই তাঁদের দাঁড় করানো হয়। ফুট আষ্টেক দূরত্ব থেকেই তাঁদের ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করে ওই কিশোরী। কিন্তু ওই দু’জনকে দেখেই সাময়িক উত্তেজনার জেরে সে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ওই দুই অভিযুক্তকে তড়িঘড়ি ঘর থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিন ওই দুই ধৃতকে হাওড়া আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তাঁদের টিআই প্যারেডের নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক। সেই সঙ্গে তিনি ওই দুই জওয়ানের শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন।
জিআরপি সূত্রের খবর, পবনের বাড়ি বিহারের বৈশালীতে আর বাবলু উত্তপ্রদেশের ফরিদাবাদের বাসিন্দা। দু’জনই বিএসএফের আগরতলা ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত। তদন্তকারীরা জানান, ঘটনার পর ওই দুই জওয়ান যে যাঁর বাড়ি চলে যান। কয়েক দিন বাড়িতে ছুটি কাটাবার পর শুক্রবার যখন তাঁরা বিএসএফের আগরতলায় ইউনিটে কাজে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য গুয়াহাটি বিমান বন্দরে পৌঁছন, তখনই তাঁদের আটক করে সিআইএসএফ। তদন্তকারীদের দাবি, দু’জনই স্বীকার করে নিয়েছেন, ট্রেনে তারা ওই কিশোরীর ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে মদ মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, দমদমের বাড়ি থেকে পালানো ওই কিশোরী হাওড়া স্টেশনে গিয়ে অমৃতসর এক্সপ্রেসে সেনাদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় না বুঝে উঠে পড়ে। আর ওই কামরাতেই তিন জওয়ান ছ’বার ধর্ষণ করে ওই কিশোরীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy