Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫

অন্ধকার স্টেশন, আগুন-ভাঙচুর, ভয়ে সিঁটিয়ে রইলেন যাত্রীরা

বিকেলের মুখে ফের বন্ধ হয়ে গেল আমাদের কামরার বাতানুকূল যন্ত্র। ছুটলাম স্টেশন মাস্টারের কাছে। গিয়ে দেখি, কয়েকশো যাত্রী বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু অবরোধ তুলতে না রেল, না জেলা প্রশাসন, কারও হেলদোল নেই।

বেলদা স্টেশনে রেলকর্মীর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুরও চালানো হয়। ছবি: সংগৃহীত।

বেলদা স্টেশনে রেলকর্মীর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুরও চালানো হয়। ছবি: সংগৃহীত।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৬
Share: Save:

সোমবার সকাল পৌনে ন’টা। বেলদা স্টেশনে সবে ঢুকেছে ধৌলি এক্সপ্রেস। কানে এল রেলের ঘোষণা—অবরোধে ট্রেন এগোতে পারছে না। তাই বেলদাতেই দাঁড়িয়ে থাকবে ভুবনেশ্বরগামী ধৌলি ট্রেন।

মা, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে পুরী যাব বলে এ দিন সকালেই হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠেছি। হাওড়া ছাড়ার আগেই শুনেছিলাম পুরীতে রেললাইনে কাজের জন্য ট্রেন যাবে ভুবনেশ্বর পর্যন্ত। তারপর রেল কর্তৃপক্ষের বাস পুরীতে পৌঁছে দেবে। তাতে আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু সাতসকালে রেলের ঘোষণায় আশা-ভরসা ভেঙে গেল। খোঁজ নিয়ে জানলাম, নানা দাবিতে রেল অবরোধ করছেন আদিবাসীরা। কখন উঠবে জানে না কেউ।

এক সময় ট্রেনের বাতানুকূল যন্ত্র বন্ধ হয়ে গেল। গরমে হাঁসফাঁস দশা। শিশু ও বয়স্কদের প্রাণান্তকর অবস্থা। বাতানুকূল যন্ত্রের দেখভাল কর্মী জানালেন, ট্রেন না চললে ওই যন্ত্র আর কাজ করবে না। যোগাযোগ করলাম রেলের ঊর্ধ্বতন অফিসারের সঙ্গে। তাতে কাজ হল। স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে চালানো হল আমাদের সি-১ কামরার বাতানুকূল যন্ত্রটি। প্ল্যাটফর্মে তখন তীব্র গরমে একটু ছায়া খুঁজছেন স্লিপার শ্রেণির যাত্রীরা। তাঁদের কামরার পাখাও বন্ধ। ক্রমে ফুরোতে শুরু করে পানীয় জল। হাওড়া বালি-দুর্গাপুর পল্লিমঙ্গল স্কুলের কিছু ছাত্রছাত্রী পুরী যাচ্ছে। তারা রেল লাইনের পাশের কয়েকটি ঘর থেকে পানীয় জল বয়ে আনছে দেখলাম। কোনও ভাবে দুপুর কাটল।

আরও পড়ুন: কামরায় জল নেই, এসি বন্ধ, আদিবাসীদের অবরোধে বিধ্বস্ত রেলযাত্রীরা

বিকেলের মুখে ফের বন্ধ হয়ে গেল আমাদের কামরার বাতানুকূল যন্ত্র। ছুটলাম স্টেশন মাস্টারের কাছে। গিয়ে দেখি, কয়েকশো যাত্রী বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু অবরোধ তুলতে না রেল, না জেলা প্রশাসন, কারও হেলদোল নেই। স্টেশন মাস্টারও ঠারেঠোরে অসহায়তার কথা জানালেন। বললেন, ‘‘বাকি দু’টো কামরায় (সি-২ ও সি-৩) বাতানুকূল যন্ত্র চালাতে হচ্ছে। তাই সি-১ কামরায় বন্ধ করতে হয়েছে।’’ তিনি আরও জানালেন, গোটা ট্রেনের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরিকাঠামো বেলদা-র মতো ছোট স্টেশনে নেই।

সন্ধ্যায় একটি সূত্রে খবর, জেলা প্রশাসনের কয়েক জন কর্তা অবরোধকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। আশার আলো দেখলেও রেলের ঘোষণায় কিছু ক্ষণেই নিভে গেল। ঘোষণা হল, বেলদা স্টেশনেই দাঁড় করানো অবস্থায় বাতিল করা হল ধৌলি এক্সপ্রেস। এর পরই ক্ষুব্ধ যাত্রীদের একাংশ ভাঙচুর চালালেন স্টেশন মাস্টারের ঘরে। কিছু ক্ষণেই স্টেশনের সব আলো নিভে গেল। কারা যেন স্টেশন চত্বরে রাখা বাইকে আগুন ধরিয়ে দিল। সেখান থেকে ট্রেনে আগুন ছড়াতে পারে, এই ভয়ে নেমে পড়লেন প্রায় সব যাত্রী। শয়ে শয়ে যাত্রী তখন হতভম্ব। ভয়ে কান্নাকাটি জুড়েছেন বয়স্করা। শিশুরাও কাঁদছে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মেঘ ডাকছে, রাতও বাড়ছে। অবশেষে আমাদের জনা পনেরোর স্থান হল বেলদা থানার একটি ঘরে। আলো ফুটলেও দুর্ভোগ কাটবে কিনা জানি না। বয়স্কদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘এখন জগন্নাথ ভরসা!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fear Protestors Belda Vandalism Passengers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy