Advertisement
০৩ মে ২০২৪
রামপুরহাটে পুড়ল বিজেপির অফিস

ফলের পরেই গুলি তৃণমূলের কর্মীকে

ফল ঘোষণা হতেই চেনা চেহারায় ফিরল নানুর। এক তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। রামপুরহাট, বোলপুরেও হামলা, কার্যালয় পোড়ানোর অভিযোগ সামনে এসেছে। রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের ভোটে জয়জয়কার তৃণমূলের। এক ধাক্কায় বেড়েছে আসন সংখ্যাও। জেলায় হার হয়েছে কেবল দু’টি আসেন— নানুর এবং হাঁসনে।

হাসপাতালে জখম নানুরের তৃণমূল কর্মী বুরহান শেখ। —নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে জখম নানুরের তৃণমূল কর্মী বুরহান শেখ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

ফল ঘোষণা হতেই চেনা চেহারায় ফিরল নানুর। এক তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। রামপুরহাট, বোলপুরেও হামলা, কার্যালয় পোড়ানোর অভিযোগ সামনে এসেছে।

রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের ভোটে জয়জয়কার তৃণমূলের। এক ধাক্কায় বেড়েছে আসন সংখ্যাও। জেলায় হার হয়েছে কেবল দু’টি আসেন— নানুর এবং হাঁসনে। নানুরের গত বারের বিধায়ক গদাধর হাজরা পরাজিত হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধানের কাছে। সেই ফল ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই নানুরে হামলার অভিযোগে নাম জড়াল সিপিএমের। রাজনৈতিক আক্রোশেই ওই ঘটনা বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি।

শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ নানুরের মোতিপুর কলোনির কাছে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে এক সঙ্গীর সঙ্গে কীর্ণাহারে সাইকেল মেরামত করাতে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সরডাঙ্গার বাসিন্দা বুরহান শেখ। মোতিপুর কলোনির কাছে মোটরবাইকে দুই যুবক তাঁর পথ আটকায়। বুরহানের পরিবারের দাবি, তাদের মধ্যে জায়দুল শেখ বুরহানকে গুলি করে। পেটে গুলি লাগে বুরহানের। প্রথমে তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

ওই ঘটনার পরেই পথে নামেন তৃণমূল কর্মীরা। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিনই নানুর থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিশ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বুরহানের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ শুরু হয়েছে। উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জেনেছে, অভিযুক্ত জায়দুলের আসল বাড়ি বর্ধমানের কাটোয়া থানা এলাকায়। পুলিশের খাতায় তার নামে একাধিক অভিযোগও রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে সে সরডাঙ্গায় বিয়ে করে বসবাস শুরু করে। সিপিএমের হয়ে ভোটের কাজও করে। সেই সূত্রেই বুরহান শেখদের সঙ্গে তার বিবাদ বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি। সেই বিবাদই সপ্তমে ওঠে স্থানীয় ক্লাব থেকে টিভি চুরি যাওয়ায় ঘটনায়। বুরহানও ওই ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। টিভি চুরিতে তার হাত রয়েছে বলে ক্লাব কর্তারা জায়দুলকে চেপে ধরেন। তারপর থেকেই গ্রাম ছাড়ে জায়দুল।

বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার পরে সে গ্রামে ফিরে তৃণমূল কর্মীদের শাসাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। আর শুক্রবার বুরহানকে গুলির অভিযোগ! তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য জানান, বুরহান দলের সক্রিয় কর্মী। দলের হয়ে ভোটের কাজ করেছিল বলে তাঁর উপরে সিপিএমের আক্রোশ তৈরি হয় বলেও সুব্রতবাবুর দাবি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সেই আক্রোশ মেটাতেই ওকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করা হয়।’’ সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘ওই গ্রামে এক জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে শুনেছি। তবে ওই ঘটনায় দলের কেউ জড়িত নয়।’’

বোলপুরের সিঙ্গি গ্রামের পূর্বপাড়ায় এক তৃণমূল কর্মীর স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ওই গ্রামের বাসিন্দা সৌখিন আলি মল্লিক তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাঁর দাদা মনসুর নানুরের সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরার নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। সৌখিনের অভিযোগ, ‘‘পরিবার তৃণমূল করে বলেই সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাকে খুনের হুমকি দিচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জনা দশেক লোক লাঠি রড়, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়। গালিগালাজ করে। বিপদ বুঝে পালিয়ে যাই। আমাকে বাড়িতে না পেয়ে স্ত্রী লুতফা বিবিকে মারধর করে।’’ খুনের হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর। লুতফা বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর হাতে, পায়ে চোট রয়েছে।

গোটা ঘটনা সবিস্তারে জানিয়ে শুক্রবার বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সৌখিন। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে নানুরের সিপিএম নেতৃত্ব। সদ্য জয়ী বিধায়ক সিপিএমের শ্যামলী প্রধানের দাবি, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা।’’

বিজেপি আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। রামপুরহাট পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা। বিজেপি-র রামপুরহাট মণ্ডল কমিটির সভাপতি শান্তনু মণ্ডলের কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার অনেক রাত পর্যন্ত তৃণমূল কর্মীরা এলাকায় বিজয় উৎসব পালন করছিলেন। আমাদের আশঙ্কা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।’’ গভীর রাতে দমকল পৌঁছে আগুন নেভায়। এ ব্যাপারে রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ ঘটনা খতিয়ে দেখছে। আগুন লাগানোর অভিযোগ মানতে চাননি এলাকার তৃণমূল নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE