Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাগের মা গঙ্গা পেলেন না, দেহ নিয়ে ধস্তাধস্তি

তাঁর ইচ্ছা ছিল গঙ্গাপ্রাপ্তি হবে। কিন্তু ভাগের মা গঙ্গা পেলেন না। বিস্তর টানাপড়েনের পরে পেলেন বিদ্যাধরী!

কল্পনা রাহা। নিজস্ব চিত্র

কল্পনা রাহা। নিজস্ব চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

তাঁর ইচ্ছা ছিল গঙ্গাপ্রাপ্তি হবে। কিন্তু ভাগের মা গঙ্গা পেলেন না। বিস্তর টানাপড়েনের পরে পেলেন বিদ্যাধরী!

সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাস্তার মধ্যে মায়ের দেহ নিয়ে ভাইবোনদের সেই টানাপড়েন, বচসা, এমনকী ধস্তাধস্তিরও সাক্ষী থাকলেন উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার কার্তিকপুর এলাকার বাসিন্দারা। শেষমেশ বিকেলের পরে পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে দেহ সৎকার হয়। তবে, গঙ্গার ধারের কোনও শ্মশানে নয়। বেলিয়াঘাটায় বিদ্যাধরী নদীর পাশে।

মৃত কল্পনা রাহা (৭৩) আদতে কার্তিকপুরেরই বাসিন্দা। স্বামী কৃষ্ণপদ রাহার মৃত্যু হয়েছে এক যুগ আগে। তাঁদের চার মেয়ে, দুই ছেলে। কয়েক মাস আগে ছেলেরা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। কল্পনাদেবী ছিলেন বিলেবাড়ি এলাকায় ছোট মেয়ে কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সেখানেই এ দিন সকালে মারা যান। কল্পনাদেবীর ইচ্ছা ছিল, গঙ্গার ধারের কোনও শ্মশানে তাঁর দেহ যেন সৎকার করা হয়। সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে দুপুর ১২টা নাগাদ মেয়েরা একটি ম্যাটাডরে মায়ের দেহ সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন পানিহাটি শ্মশানে। বারাসত-টাকি রোড ধরে কল্পনাদেবীর দেহ নিয়ে গাড়িটি কার্তিকপুর বাজারের কাছে পৌঁছতেই পথ আটকান তাঁর দুই ছেলে সাধন, ভজন এবং তাঁদের কিছু লোকজন। দেহ তাঁরাই দাহ করবেন বলে জেদ ধরেন। শুরু হয় গোলমাল।

রাস্তার মধ্যে ভাইবোনদের বচসা, ধস্তাধস্তি দেখে চমকে যান সকলেই। থমকে যায় যানবাহন। বোনেরা ভাইদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘‘মাকে মেরে তাড়িয়েছিস তোরা। সব কেড়ে নিয়েছিস। মা আমাদের।’’ ভাইয়েরাও পাল্টা দাবি করতে থাকেন, ‘‘মা, আমাদেরই!’’ বচসার বহর দেখে পথচলতি লোকজনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ভাগের মায়ের দেহ নিয়ে এমন টানাটানি বেনজির!

ততক্ষণে অবশ্য পুলিশ হাজির। তারা দু’পক্ষকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে গোলমাল মেটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সেই ফাঁকেই গাড়ি থেকে কল্পনাদেবীর দেহ নামিয়ে কিছু লোক সাধন-ভজনদের বাড়িতে ঢুকিয়ে দেয়। বাধা পেয়ে শেষমেশ কল্পনাদেবীর মেয়েরা বাড়ি ফিরে যান। সাধন-ভজন এবং তাঁর পড়শিরা এর পরে দেহ নিয়ে বেলিয়াঘাটা শ্মশানে যান। কিন্তু সেখানে আর এক বিপত্তি। কল্পনাদেবীর ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ রয়ে গিয়েছে মেয়েদের কাছে। ফলে, আবার ঘণ্টাখানেকের অপেক্ষা। কৃষ্ণাদেবীর বাড়িতে ছুটল পুলিশ। সেখানে থেকে ওই সার্টিফিকেট এনে দেহ যখন সৎকার হল, তখন বিকেল গড়িয়ে গিয়েছে। মুখাগ্নি করেন ছেলেরাই। মেয়েরা আর আসেননি। রাত পর্যন্ত কার্তিকপুর এলাকার লোকজনের মুখে মুখে ফিরেছে মায়ের দেহ নিয়ে ভাইবোনদের এই ‘কীর্তি’র কথা।

কল্পনাদেবীর মেয়েদের অভিযোগ, বাবার দোকান ভাইয়েরা হাতিয়ে নিয়েছিল। বাড়ি-সহ সব সস্পত্তি লিখিয়ে নিয়ে মাকে তাড়িয়ে দেয় তারা। বড় মেয়ে সুধা সাহা বলেন, ‘‘মৃত্যুর আগে মা আমাদেরই মুখাগ্নি করতে বলেছিল। দেহ সৎকার করতে বলেছিল গঙ্গার ধারের শ্মশানে। মায়ের ১ বিঘের বেশি জমি রয়েছে। সেটা হাতানোর জন্যই ভাইয়েরা এ সব করল।’’ অভিযোগের উত্তর দেননি ভজনবাবু। তিনি শুধু বলেন, ‘‘এটা পারিবারিক ব্যাপার।’’

কিন্তু পারিবারিক ব্যাপার যে ভাবে রাস্তায় নামল, তাতে ছি ছি করেছেন এলাকার অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cremation Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE