Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রেলে চাকরির নামে প্রতারণা, গ্রেফতার দুই

হাতে এসে গিয়েছিল রেলের নাম লেখা ‘নিয়োগপত্র’। মিলেছিল ‘স্টাইপেন্ড’। শুধু নিয়োগপত্রে লেখা দিনে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়েই জানা গেল, সব ভুয়ো। রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে বুধবার রাতে দু’জনকে ধরেছে রেল পুলিশ।

প্রতারণা চক্রে জড়িত সন্দেহে ধৃত সৌমিত্র দাস ও সন্তোষ তিওয়ারি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

প্রতারণা চক্রে জড়িত সন্দেহে ধৃত সৌমিত্র দাস ও সন্তোষ তিওয়ারি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

হাতে এসে গিয়েছিল রেলের নাম লেখা ‘নিয়োগপত্র’। মিলেছিল ‘স্টাইপেন্ড’। শুধু নিয়োগপত্রে লেখা দিনে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়েই জানা গেল, সব ভুয়ো। রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে বুধবার রাতে দু’জনকে ধরেছে রেল পুলিশ। তাদের দাবি, ধৃতদের কাছে থেকে বেশ কিছু ভুয়ো ‘অফার লেটার’, ‘ট্রেনিং লেটার’, ‘পোস্টিং লেটার’ মিলেছে। বৃহস্পতিবার বারাসত জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতদের ন’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

মাসকয়েক আগে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতর, কলকাতার গার্ডেনরিচ থেকে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করার অভিযোগে চার জনকে ধরা হয়েছিল। এ বার পূর্ব রেলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে রেল পুলিশ জেনেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাকরিপ্রার্থী যুবক-যুবতীদের সঙ্গে এজেন্ট মারফত যোগাযোগ করত প্রতারকেরা। ১০-১১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে রেলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হতো।

এক রাজ্যে ‘শিকার’ জোগাড় করে প্রতারকেরা তাদের অন্য রাজ্যের ‘সেন্টার’-এ যোগাযোগ করতে বলতো। সেখানে গিয়ে টাকা দিলেই হাতেহাতে মিলত ‘নিয়োগপত্র’। তাতে এক মাস পরের ‘জয়েনিং ডেট’ লেখা। ওই এক মাসে চাকরিপ্রার্থ়ীদের রেল সংক্রান্ত নানা বিষয়, সাধারণ জ্ঞান এবং চাকরিতে কাজে লাগতে পারে এমন অঙ্কের পাঠ দিতেন শিক্ষকেরা। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে ক’টি ট্রেন আসছে-যাচ্ছে, তা গোনানো হতো। তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা হতো রেলের হাসপাতালে। প্রশিক্ষণ শেষে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ‘স্টাইপেন্ড’
ধরানো হতো।

ধাক্কা লাগতো এর পরেই। ‘জয়েনিং লেটার’ নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে কাজে যোগ দিতে গিয়ে চাকরিপ্রার্থী বুঝতে পারতেন, প্রতারিত হয়েছেন। কিন্তু ‘সেন্টার’-এ গিয়ে আরও বড় ধাক্কা লাগত তাঁদের। কারণ, তত ক্ষণে সেখানে তালা ঝুলিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে লোকজন।

প্রতারিত কয়েকজনের থেকেই এই চক্রের খবর পায় পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশন। রেল পুলিশের গোয়েন্দারা এবং ভিজিল্যান্স বিভাগ যৌথ ভাবে হানা দেয়, অশোকনগর স্টেশন লাগোয়া একটি ওষুধের দোকানের দোতলায় ওই প্রতারণা চক্রের ‘সেন্টার’-এ। সপ্তাহ তিনেক আগে ওই ‘সেন্টার’টি খোলা হয়। সেখানে ওড়িশা এবং অন্ধ্রের জনা দশেক যুবক প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ‘সেন্টার’-এ কাউকে না পেলেও অশোকনগর স্টেশন থেকে সৌমিত্র দাস এবং সন্তোষ তিওয়ারি নামে দু’জনকে ধরা হয়।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, বছর ছাব্বিশের সৌমিত্রের বাড়ি বাঁকুড়ার সদর থানার শালবনিতে। রেল পুলিশের কাছে সে নিজেকে সফ‌্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বলে দাবি করেছে। জানিয়েছে, এক সময় সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত। সেই সংস্থা বন্ধ হওয়ার পরে, ওই ‘সেন্টার’-এ মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে যোগ দেয়। অঙ্ক এবং সাধারণ জ্ঞান পড়াত। কিন্তু সংস্থাটি যে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোক ঠকাত, তা তার জানা ছিল না। তবে সৌমিত্রর দাবি ঠিক কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় রেল পুলিশ। অন্য ধৃত সন্তোষের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায়। বছর একচল্লিশের সন্তোষ ভাড়া থাকত বারাসতে। তার কাজ ছিল, ভিন্-রাজ্য থেকে আসা চাকরিপ্রার্থীদের ‘সেন্টার’-এ নিয়ে যাওয়া।

রেল পুলিশের এক কর্তার দাবি, কিছু প্রতারিতের কাছ থেকে তাঁরা জেনেছেন, প্রশিক্ষণের পরে তাঁদের ডাক্তারি-পরীক্ষা হয় কাঁচরাপাড়া রেল হাসপাতাল এবং বিআরসিংহ হাসপাতালে। ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘রেলের লোক জড়িত না থাকলে এমন হওয়া সম্ভব নয়। ধৃতদের জেরা করে চক্রে কারা রয়েছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE