Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জাল পাসপোর্টেই অভিবাসন পেরিয়ে বিমানের দরজায়

জামাকাপড় ময়লা। সঙ্গের কাপড়ের তৈরি হাতব্যাগও বেশ পুরনো। হাবভাব মোটেই বিজনেস শ্রেণির বিমানযাত্রীর মতো নয়। হাতে কিন্তু ৬০ হাজারেরও বেশি টাকার বিজনেস শ্রেণির টিকিট। অথচ কলকাতা থেকে দুবাই যাওয়ার জন্য সাধারণ শ্রেণির টিকিট পাওয়া যায় ৩০ হাজার টাকাতেই। সাধারণত বিজনেস শ্রেণির যাত্রীদের ‘প্রোফাইল’ যেমনটা হয়, দুই যুবক যাত্রীর পোশাক, হাতের ব্যাগ আর হাবভাব তার সঙ্গে মিলছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

জামাকাপড় ময়লা। সঙ্গের কাপড়ের তৈরি হাতব্যাগও বেশ পুরনো। হাবভাব মোটেই বিজনেস শ্রেণির বিমানযাত্রীর মতো নয়। হাতে কিন্তু ৬০ হাজারেরও বেশি টাকার বিজনেস শ্রেণির টিকিট। অথচ কলকাতা থেকে দুবাই যাওয়ার জন্য সাধারণ শ্রেণির টিকিট পাওয়া যায় ৩০ হাজার টাকাতেই।

সাধারণত বিজনেস শ্রেণির যাত্রীদের ‘প্রোফাইল’ যেমনটা হয়, দুই যুবক যাত্রীর পোশাক, হাতের ব্যাগ আর হাবভাব তার সঙ্গে মিলছিল না। এমিরেটসের বিমানে ওঠার জন্য অপেক্ষমাণ দুই যুবককে দেখে তাই সন্দেহ হয় কলকাতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ)-র অফিসারদের। তত ক্ষণে পাসপোর্ট ও ভিসা পরীক্ষা করিয়ে দুই যুবক পৌঁছে গিয়েছেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে। সঙ্গে বিজনেস শ্রেণির বোর্ডিং কার্ড। কিন্তু দু’জনকে দেখে কোনও ভাবেই বিজনেস শ্রেণির যাত্রী মনে হয়নি অফিসারদের।

তখনও বিমান ছাড়তে দেরি ছিল কিছুটা। সিআইএসএফ অফিসারেরা নজর রাখতে শুরু করেন ওই দুই যুবকের উপরে। কিছু পরে দু’জনকে ধরে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। পাসপোর্ট দেখেও সন্দেহ হয় সিআইএসএফ অফিসারদের। একটি পাসপোর্ট কলকাতা থেকে দেওয়া হয়েছে, অন্যটি অন্য চণ্ডীগড় থেকে। দু’জনকে অভিবাসন দফতরে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে পাসপোর্ট পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, দু’টি পাসপোর্টই জাল! গ্রেফতার করা হয় দু’জনকেই। ধৃতদের নাম জাভেদ খান এবং মহম্মদ নাসিম। দু’জনেরই বয়স প্রায় ২৩ বছর। তল্লাশি চালিয়ে দু’জনের কাছে পাওয়া যায় সাকুল্যে ২০ টাকা! ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার সকালের।

জাল পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণের চেষ্টা এবং ধরা পড়া অভিনব কিছু নয়। প্রায়ই এমনটা ঘটে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে বিমানবন্দরের অভিবাসন বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে। জাল পাসপোর্ট নিয়েই অভিবাসন কাউন্টার পেরিয়ে ওই দুই যুবক পৌঁছে গিয়েছিলেন নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে। কী করে? তা হলে কি তাঁদের পাসপোর্ট পরীক্ষা না-করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে? যদি তেমনটাই হয়, তা হলে বিমান-সফরের নিরাপত্তাই প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়!

আকাশ থেকে রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার পরে মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের এমএইচ-৩৭০ বিমানের যাত্রী-তালিকা থেকেও খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এমন দুই যাত্রীকে, যাঁরা জাল পাসপোর্ট নিয়ে বিমানে উঠেছিলেন। সেই দুই যাত্রীর সঙ্গে নাশকতার যোগ থাকতে পারে বলেও সন্দেহ হয়েছিল। তার পরে বিশ্ব জুড়ে পাসপোর্ট পরীক্ষায় আরও কড়া সতর্কতা জারি হয়েছে। সেই ঘটনার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই কলকাতায় কী করে ঘটে গেল এত বড় গাফিলতি? উত্তর মেলেনি কলকাতা বিমানবন্দরে অভিবাসনের দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার শাকিল আহমেদের কাছে। ফোন ধরেননি তিনি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি।

বৃহস্পতিবার ধৃত দুই যুবককে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। আদালত তাঁদের পাঁচ দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু জাভেদ ও নাসিম জাল পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করছিলেন কেন?

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দুই যুবক মায়ানমারের বাসিন্দা। জেরায় জানা গিয়েছে, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ ঘুরে তাঁরা সম্প্রতি বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকেন। কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় এক দালালের কাছ থেকে পাসপোর্ট ও টিকিট পান। উদ্দেশ্য ছিল, মক্কাবাসী আত্মীয়ের কাছে গিয়ে কোনও কাজকর্ম জোগাড় করা।

সাধারণত যাঁরা এ ভাবে জাল পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে চাকরি করতে যান, তাঁরা জমি-বাড়ি বিক্রি করে বা বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করে তা দিয়েই জাল পাসপোর্ট ও টিকিট কেনেন। জাভেদ-নাসিম দ্বিগুণেরও বেশি টাকা দিয়ে কেটেছিলেন বিজনেস শ্রেণির টিকিট। কেন?

ধৃতদের জবাবে ধন্দ কাটছে না। জেরায় জানা গিয়েছে, টিকিট ও পাসপোর্টের জন্য তাঁরা দালালকে দেড় লক্ষ করে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। দালাল বলেছিলেন, ‘ভাল আসনের টিকিট দিলাম। ভাল খাবার দেবে। আপনাদের কিনতে হবে না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE