রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজ শুধু সুষ্ঠু ভাবে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করাই নয়। ভোটের অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা করাও তাদের কাজের মধ্যে পড়ে। বর্তমান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহকে পরোক্ষে সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন তাঁর দুই পূর্বসূরী মীরা পাণ্ডে ও সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়।
রাজ্যের ৭টি পুরসভার ভোটে রবিবার সন্ত্রাসের চেনা ছবিই দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। পুলিশ ও কমিশনের বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী নেতারা। কিন্তু যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কার্যত শাসক-সুরেই কমিশনার মন্তব্য করেছেন, বিরোধীরা যদি এজেন্ট দিতে না পারে, কমিশন কী করবে! কমিশনকে শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলার আগে বিরোধীদের নিজেদের শক্ত হওয়া উচিত। অমরেন্দ্রের এই মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
কমিশনের প্রাক্তন দুই কর্তা অবশ্য অমরেন্দ্রের কথার উপরে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। কিন্তু ভোট-পরিচলনায় কমিশনার তথা কমিশনের কী ভূমিকা হওয়া উচিত, তা নিয়ে দু’জনেই সরব হয়েছেন। তাঁর সময়ে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মীরার সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরোধ তৈরি হয়েছে বারবার। সে বিরোধ গড়িয়েছে রাজভবন পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মীরাদেবী। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘সাধারণ ভাবে কমিশনের কাজ হল, ভোটারদের ভোট দিতে যাওয়ার ব্যাপারে সাহস জোগানো। তার মধ্যে দলীয় এজেন্টরাও রয়েছেন।’’
মীরাদেবীর মতোই সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন সুশান্তবাবু। বিধাননগরের পুরভোটে অশান্তির পরে কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজ্যের শীর্ষ মন্ত্রীরা তাঁর দফতরে গিয়ে ধর্না দেওয়ায় তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের মতো রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে অত ক্ষমতা নেই। কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ব্যাপারে চেষ্টা করা কমিশনের কাজ।’’ একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কমিশনের অবাধ নির্বাচন করার দিকে মনযোগী হওয়া উচিত। রাজনৈতিক দল কী করবে — তা নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই ভাল।’’ দুই পূর্বসূরীর মতামত নিয়ে অবশ্য এ দিন আর বর্তমান কমিশনারের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসের জবাব দেননি।
তবে কমিশনের ভূমিকা ও কমিশনারের মন্তব্যের প্রতিবাদে এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি। কমিশনের দফতরের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ায় তারা। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘একটা সময়ে তৃণমূলের সংগঠন সামলাতেন মুকুল রায়। তাঁর অভাব এখন পূরণ করছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার! পশ্চিমবঙ্গে আক্ষরিক অর্থেই তিনি এখন তৃণমূলের ত্রাতা।’’ একই সুরে সিপিএমের রাজ্য নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতাদের কথাই এখন কমিশনারের গলায়। পুলিশের মতো নির্বাচন কমিশনও এখন তৃণমূলের একটি অঙ্গে পরিণত হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy