Advertisement
E-Paper

স্কুলের গেট থেকে বেপাত্তা দুই খুদে, রাতে উদ্ধার হাওড়া থেকে

রাত পৌনে ১১টা নাগাদা জিআরপি হাওড়া স্টেশনে ওই দুই শিশুর খোঁজে জোরদার তল্লাশি শুরু করে। বিভিন্ন ট্রেনের কামরা, টিকিট কাউন্টার ও প্ল্যাটফর্মে খোঁজ শুরু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৭
গৌরব ও ঋদ্ধি। —নিজস্ব চিত্র।

গৌরব ও ঋদ্ধি। —নিজস্ব চিত্র।

প্রতিদিনের মতোই বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলগাড়িতে উঠেছিল দ্বিতীয় শ্রেণির দুই পড়ুয়া। কিছু ক্ষণ পরে তাদের অভিভাবকদের ফোন করে জানানো হল, ওই দু’জন স্কুলে না ঢুকে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে!

মঙ্গলবার সকালে এ ভাবেই বেলুড়ের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল দুই ছাত্র। ঋদ্ধি মুখোপাধ্যায় (৮) এবং গৌরব দে (১০)। ঋদ্ধি বালির পঞ্চাননতলা এবং গৌরব বালির নিশ্চিন্দার দেওয়ানচক বিদ্যাসাগর সরণির বাসিন্দা। দিনভর হন্যে হয়ে খোঁজার পরে রাতে হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয় তাদের।

পুলিশ জানিয়েছে, রাত পৌনে ১১টা নাগাদা জিআরপি হাওড়া স্টেশনে ওই দুই শিশুর খোঁজে জোরদার তল্লাশি শুরু করে। বিভিন্ন ট্রেনের কামরা, টিকিট কাউন্টার ও প্ল্যাটফর্মে খোঁজ শুরু হয়। হঠাৎ দেখা যায়, এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনে যে টিকিট কাউন্টারগুলি রয়েছে, সেখানে দুই থামের আড়ালে দু’টি বাচ্চা ছেলে মুখ গুঁজে বসে আছে। কিন্তু গায়ে স্কুলের ইউনিফর্ম নেই। জিআরপি-র সন্দেহ হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখা যায়, ছবির সঙ্গে মুখ মিলে যাচ্ছে। শিশু দু’টিকে হাওড়া জিআরপি থানায় নিয়ে আসা হয় এবং জানা যায়, তারা পরিকল্পনা করেই বাড়ি থেকে অন্য পোশাক নিয়ে এসেছিল।

আরও পড়ুন:কুপিয়ে খুন মাকে, দুধের মেয়েকে গলা টিপে

দুই স্কুলপড়ুয়ার খোঁজে পুলিশের বড় ভরসা ছিল সিসিটিভি-র ফুটেজ। পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে ওই দুই পড়ুয়াকে হাত ধরাধরি করে হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথ ধরে কলকাতার দিকে যেতে দেখা যায় সেতুর সিসিটিভি ফুটেজে। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ তখন বলেছিলেন, ‘‘শিশু দু’টি কলকাতার দিকেই গিয়েছে।’’

গত ফেব্রুয়ারিতেও বাড়ির ছাদ টপকে পালিয়ে ইলাহাবােদ চলে গিয়েছিল গৌরব। চার মাস পরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাকে উদ্ধার করে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়।

স্কুল সূত্রের খবর, বেলুড়ের ওই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে একই সঙ্গে পড়ে ঋদ্ধি ও তার যমজ দিদি তৃষিতা। দু’জনে প্রতিদিন একই স্কুলগাড়িতে যায়। এ দিন স্কুল শুরু হওয়ার পরে শিক্ষিকা তৃষিতার থেকে জানতে চান, তার ভাই আসেনি কেন? তখন তৃষিতা জানায়, ঋদ্ধি কোনও কথা না শুনে আর এক পড়ুয়া গৌরবের সঙ্গে জিটি রোডের দিকে পালিয়েছে। তখনই ওই দুই ছাত্রের বাড়িতে খবর পাঠান স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষিকারা জানান, ইদানীং গৌরবের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয় ঋদ্ধির। সোমবার টিফিনের সময়ে দু’জন
লুকিয়ে গেটের বাইরে থেকে চিপ্‌স কিনে খেয়েছিল। সে জন্য দু’জনের বাড়িতেই অভিযোগ জানানো হয়।

খবর পেয়েই স্কুলে ছুটে আসেন ঋদ্ধির বাবা দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়, মা লক্ষ্মী মুখোপাধ্যায় ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভাস্করগোপাল চট্টোপাধ্যায়। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘পুলিশের পাশাপাশি আমরা স্থানীয়েরাও দু’টি দলে ভাগ হয়ে কলকাতা ও হাওড়ায় খোঁজ চালাচ্ছি।’’ গৌরবের মা গৌরীদেবী বলেন, ‘‘গৌরবকে আমরা ২০০৮ সালে দত্তক নিয়েছিলাম। পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে বলে ওকে ডাক্তারও দেখানো হচ্ছে।’’

পুলিশ জানায়, দুপুর আড়াইটে নাগাদ হাওড়া স্টেশনের এক নম্বর সাবওয়ের সিঁড়ি থেকে দু’টি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করে জিআরপি-তে জমা দেন গোলাবাড়ি থানার এক কনস্টেবল। ব্যাগে থাকা পরিচয়পত্র দেখে জানা যায়, সেগুলি ঋদ্ধি ও গৌরবের। অন্য দিকে, বেলুড় থানার পুলিশ রাস্তার সিসিটিভি দেখে জানতে পারে, ওই দুই খুদে টোটোতে চেপে বেলুড় স্টেশনের দিকে গিয়েছে।

আবার স্কুলের সিসিটিভি-তে দেখা যায়, বেলা ১১টা ১৯ মিনিটে গৌরব স্কুলগাড়ি থেকে নামে। পিছনে ঋদ্ধিকে আসতে দেখে সে এগিয়ে যায়। এর পরে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এগিয়ে যায় গৌরব। সবাই স্কুলে ঢুকে যেতেই দু’জন কাঁধে হাত দিয়ে জিটি রোডের দিকে চলে যায়। জিটি রোডের সিসিটিভি-তে দেখা গিয়েছে, কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ার দু’জনকে রাস্তা পার করে দিলে তারা ছুটে বেলুড় বাজারের দিকে যাচ্ছে। এ দিন দুপুরে হাওড়া স্টেশন চত্বরে ব্যাগ ছাড়াই দু’জনকে ঘুরতে দেখা যায় বলে সিসিটিভি দেখে জানায় পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই পরে রাতের দিকে ওই স্টেশনে তল্লাশি শুরু হয়। যার জেরে উদ্ধার হয় দুই খুদে।

স্কুল চত্বরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে

Riddhi Mukherjee Gaurab Dey গৌরব দে ঋদ্ধি মুখোপাধ্যায় Belur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy