হবিবুল হক এবং এনামুল মোল্লা
শুধু বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী তিন-চারটি জেলা নয়, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটার আড়াই-তিন বছর আগেই খাস কলকাতার দোরগোড়ায় বাসা বেঁধেছিল জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
বিষয়টি বেশ কিছু দিন ধরে আঁচ করেছিলেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দারা। এনআইএ এবং কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর যৌথ প্রচেষ্টায় জেএমবি-র দুই চাঁই হবিবুল হক ও এনামুল মোল্লা গ্রেফতার হওয়ার পরে মঙ্গলবার সেটাই প্রতিষ্ঠিত হল।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এনামুল কলকাতার মেটিয়াবুরুজ লাগোয়া গুলজারবাদের স্লটার হাউস রোডের বাসিন্দা। গোয়েন্দাদের দাবি, তাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় জেএমবি-র ‘আমির’ বা প্রধান করা হয়েছিল। এনামুল চার বছর ধরে সংগঠনে যুক্ত এবং তার অধীনে ২০ জন সদস্য কাজ করছিল। এনামুলের স্ত্রী আবার শিক্ষকতা করতেন বর্ধমানের সেই শিমুলিয়া মাদ্রাসায়, যাকে জেএমবি-র জেহাদি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এনআইএ।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আটক হওয়া অন্য জন বাদুড়িয়ার আঁকিপুরের দক্ষিণ পাড়ার হবিবুল হক ছিল উত্তর ২৪ পরগনার আমির। সে ছ’বছর ধরে় জেএমবি-তে রয়েছে এবং তার সঙ্গীর সংখ্যা
প্রায় ৪০।
তাঁদের দাবি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার ‘মোস্ট ওয়ান্টে়ড’, বর্ধমানের ইউসুফ গাজি-ই হবিবুল ও এনামুলকে নিয়োগ করে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর ইউসুফ তো বটেই, সেই সঙ্গে আবুল কালাম, হবিবুর শেখের মতো ওই মামলার অন্য অভিযুক্তদেরও লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছিল হবিবুল ও এনামুল।
এমনকী, শনিবার রাতে এনআইএ ও কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা যৌথ ভাবে মেটিয়াবুরুজের কাছে এনামুলের ডেরায় হানা দেওয়ার
মাত্র আধ ঘণ্টা আগে সেখান থেকে উধাও হয়ে যায় ইউসুফ। আবার ওই ডেরায় বৃহস্পতিবার রাতে শেষ বার এসেছিল খাগড়াগড় মামলার আর এক মোস্ট ওয়ান্টেড, কওসর ওরফে বোমারু মিজান— যে আদতে বাংলাদেশের নাগরিক।
এনামুল ও হবিবুলকে গ্রেফতার করার পর গোয়েন্দারা জেনেছেন, উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার আঁকিপুরে একটি ধর্মস্থানে জেএমবি-র জেহাদি প্রশিক্ষণ শিবির সংগঠিত করেছিল ইউসুফ। সেটা খাগড়াগড় বিস্ফোরণের আগে।
কিন্তু ২০১৪-র অক্টোবরে ওই বিস্ফোরণের পরেও দমে না-গিয়ে কিছু দিনের মধ্যে বাদুড়িয়ার নয়া বস্তিয়ার আর একটি ধর্মস্থানে ফের জেহাদি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে ইউসুফ। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, শিবিরে প্ররোচনামূলক ভিডিও ক্লিপিংস দেখানো ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের সূত্রে জেএমবি-র জাল যতটা ছড়িয়েছিল বলে আমরা জানতে পেরেছিলাম, এখন দেখছি সেটা আরও বেশি। কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy