Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
COVID 19

ক্যানসারকে বুড়ো আঙুল, অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটছে উদয়ের গাড়ি

স্থানীয়েরা। উদয়বাবু বলেন, ‘‘যত দিন না গাড়ি চলাচল পুরো স্বাভাবিক হয়, দিন-রাত তৈরি আছি।’’

উদয় পালুই

উদয় পালুই —নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২১ ০৫:২১
Share: Save:

নিজে ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু খরচের পরোয়া না করে নিজের গাড়িতে বিনা মূল্যে অন্তঃসত্ত্বাদের পৌঁছে দিচ্ছেন ডাক্তারদের কাছে। পশ্চিম মেদিনীপুর সীমানা লাগোয়া বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পিয়ারডোবা গ্রামের উদয় পালুইয়ের এই উদ্যোগে অনেকটা নিশ্চিন্ত স্থানীয়েরা। উদয়বাবু বলেন, ‘‘যত দিন না গাড়ি চলাচল পুরো স্বাভাবিক হয়, দিন-রাত তৈরি আছি।’’

বছর সাঁইত্রিশের উদয়ের বাড়িতে রয়েছেন বাবা, মা, দাদা, স্ত্রী এবং প্রাথমিকের পড়ুয়া দুই ছেলেমেয়ে। বছর পনেরো আগে উদয় ডেকরেটর্সের ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৯ সালে জিভে ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। উদয় বলেন, ‘‘ক্যানসার একেবারে প্রথম স্তরে ছিল। মুম্বইয়ের ডাক্তারেরা আশ্বস্ত করেছিলেন। তবে তখনই আমার চোখ খুলে গিয়েছিল।’’ উদয়বাবুর স্ত্রী বকুল পালুই বলেন, ‘‘স্বামীকে নিয়ে ছোটাছুটি করার সময় মনে হত, গাড়ি-বাড়ি-টাকা কিছুই না। সব থেকে দরকার, পাশে দাঁড়ানোর মতো মানুষের।’’ গত দু’বছর মু্ম্বই যেতে পারেননি। বাঁকুড়া মেডিক্যালেই চিকিৎসা করাচ্ছেন উদয়। ক্যানসারে অনেক খরচের চিন্তা থাকে। কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়াতে ছেলে পুঁজি ভাঙলেও আপত্তি করেন না উদয়বাবুর মা বিদ্যাবতীদেবী। তিনি বলেন, ‘‘রোজগার যা করে, তা থেকে অন্যের জন্য অনেকটা খরচ করে।’’

পিয়ারডোবা গ্রামের কাছ দিয়ে দিনে গোটা পাঁচেক বাস চলে। এখন তা বন্ধ। বিষ্ণুপুর হাসপাতাল গ্রাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। এলাকায় ডাক্তারের চেম্বার আছে। তবে করোনা-পরিস্থিতিতে নিয়মিত খোলে না। সপ্তাহখানেক ধরে গাড়িতে অন্তঃসত্ত্বাদের বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বারে পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছেন উদয়। পোস্টারও দিয়েছেন। চালক রেখে গাড়ি চালাচ্ছেন। পড়শি তাপস দণ্ডপাট ও সূর্য মাহাতো জানান, এর আগে, বিনা খরচে গাড়িতে গ্রামের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন উদয়।

শুক্রবার সে গাড়িতে বিষ্ণুপুরে ডাক্তারের কাছে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন পিয়ারডোবার প্রতিভারঞ্জন নায়েক। তিনি বলেন, ‘‘কড়াকড়ির জন্য গাড়ি সহজে মেলেও না। খুব উপকার হল।’’ ওই গাড়িতেই স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে এনেছেন গড়বেতার নাচনজাম গ্রামের সঞ্জয় সিংহ। তিনি জানান, সেখানকার অনেকেই পিয়ারডোবা স্টেশনের কাছে বাজার করেন। পোস্টার থেকে উদয়বাবুর উদ্যোগের কথা জেনেছেন।

উদয় জানান, নিখরচার অ্যাম্বুল্যান্সও চালু করার ইচ্ছা রয়েছে। এসডিও (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, ‘‘অতিমারির সময়ে অনেকেই আপনজন হারিয়েছি। আবার নিঃস্বার্থ ভাবে পাশে দাঁড়ানো অনেক আপনজনকে পেয়েওছি। উদয়বাবু তেমনই এক জন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE