এক একটা খবরই এমন হয়, দিনের রংটাই পাল্টে যায় আমূল।
এটা ঠিক, দিনভর কত খারাপ খবরের মধ্যে বসবাস আমাদের। কলকাতার মেয়ে জুডিথকে কাবুলে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে জঙ্গিরা। এন্টালির বাড়িতে উদ্বেগের প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ক্রমশ। বাংলাদেশে আরও এক জন সংখ্যালঘু হিন্দুকে কুপিয়ে হত্যা করল দুষ্কৃতীরা, ভারী হয়ে আসছে বাতাস। বিহারে ভাড়াটে বন্দুকবাজ এনে হত্যা করা হচ্ছে দুশোরও বেশি নীলগাইকে। খুন-ধর্ষণ-অত্যাচার-সন্ত্রাস-অপহরণের এই সব খবরের সঙ্গে সহবাস যখন নিত্যনৈমিত্তিক ও অপরিহার্য বলেই ধরে নিচ্ছি আমরা, তখনই রাঢ় বঙ্গের প্রান্ত থেকে একটা খবর এসে পৌঁছল। দিনের রংটাই পাল্টে দিয়ে গেলেন সুচিত্রা মুখোপাধ্যায়।
বাঁকুড়া শহরের পঁয়তাল্লিশ বছরের গৃহবধূ সুচিত্রা মুখোপাধ্যায় কোনও খবর নন। এ রাজ্য, এ দেশ, এ বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার অন্য নাম হিসাবেই থেকে যাবেন। সংসার চালানোর জন্য, ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই বয়সে এসে টোটো চালাতে শুরু করছেন বাঁকুড়ার এক মহিলা, এই ঘটনার মধ্যে কী অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের কাহিনি আছে, বাস্তবভূমির সম্পর্কে সম্যক ধারণা যাঁদের সামান্য কিছুও আছে, তাঁরাই বুঝবেন। অবিশ্বাস্য আরও ঠেকবে, যদি বোঝা সম্ভব হবে যে সংসার প্রতিপালন অথবা সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করার পরেও এ কাহিনি আসলে এক নারীর নিজেকে চিনে নেওয়ার। প্রত্যন্ত বাঁকুড়ার এক নিম্নবিত্ত প্রান্তে।
এতটাই অবিশ্বাস্য, চোখ কচলে নিতে ইচ্ছা করে। তার পরেও যখন টোটোর চালকের আসনে ওই দৃঢ় প্রত্যয়ী মুখটাকে দেখি, তখনই রং পাল্টে যায় আমার পৃথিবীর। সব নেতি গিয়ে নতজানু হতে বাধ্য হবেই এই ইতির কাছে।
সুচিত্রা, আপনি নিজেও জানেন কি, নিজে বাঁচতে চেয়ে কত মানুষের বাঁচার অর্থ জোগালেন আপনি?