Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষার নির্ঘণ্ট বদলাবে না, অনড় বিশ্ববিদ্যালয়

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য পরীক্ষা পিছনোর বিষয় নিয়ে অনড় দু’পক্ষই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকস্তরের পার্ট-৩ পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পড়ুয়ারা। কিন্তু শুক্রবারও অনড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কোনওমতেই পরীক্ষার নির্ঘণ্টের বদল করা হচ্ছে না। এ দিনই ওই বিষয়ে নতুন করে ইন্ধন দিয়েছেন রাজ্যপাল এবং শিক্ষামন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ২০:৪৮
Share: Save:

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য পরীক্ষা পিছনোর বিষয় নিয়ে অনড় দু’পক্ষই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকস্তরের পার্ট-৩ পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পড়ুয়ারা। কিন্তু শুক্রবারও অনড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কোনওমতেই পরীক্ষার নির্ঘণ্টের বদল করা হচ্ছে না। এ দিনই ওই বিষয়ে নতুন করে ইন্ধন দিয়েছেন রাজ্যপাল এবং শিক্ষামন্ত্রী। আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা এ দিন মিছিল করে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান। একটি দল যায় নির্বাচন কমিশনের কাছেও। দেখা না পেয়ে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে অবস্থানে বসে পড়েন তাঁরা। রাজ্যপাল দেখা তো করলেনই না, উল্টে এক অনুষ্ঠানে নিজের মনোভাব স্পষ্ট করলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন না পরীক্ষা, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা ঠিক করুক পড়ুয়ারাই।’’

বৃহস্পতিবারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান এক দল পড়ুয়া। সেখানে কলকাতার থেকে যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সির বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরই বেশি সংখ্যায় দেখা গিয়েছিল। এ দিন সেই কথা তুলে ধরেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা নয়, বিশেষ করে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুরের পড়ুয়ারাই আন্দোলন করছে। এবং এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এর পিছনে একটা রাজনীতি কাজ করছে। শিক্ষায়তনে অচলাবস্থা আয়োজনের চেষ্টা চলছে।’’ এর পিছনে যে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই রয়েছে সেটাও জানান মন্ত্রী।

আরও পড়ুন- প্রার্থী নিয়ে বেনজির বিক্ষোভ সিপিএমে, ঘেরাও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

গত ৪ মার্চ নির্বাচন কমিশন এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে। সেখানে দেখা যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের দু’টি পরীক্ষা পড়েছে প্রথম দুই দফার নির্বাচনের দিনেই। যে পরীক্ষার নির্ঘণ্টের অদলবদল ঘটে। কিন্তু তার পর থেকেই পড়ুয়ারা দাবি করতে থাকেন, রাজ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই পরীক্ষা নিতে হবে। কিন্তু অনড় থাকেন কর্তৃপক্ষ। এরই দাবিতে গত বৃহস্পতিবারের আন্দোলনে ফটকের বাইরে ঘেরাও করা হয় উপাচার্যকে। তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের এবং শিক্ষাকর্মীরা উপাচার্যকে আগলে ধরে বাইরে বের করেন। পরে জোড়াসাঁকো থানার গাড়িতে বাড়ি ফেরেন উপাচার্য সুগত মারজিত। তবে টিএমসিপি-র এই ভূমিকায় অন্যায় কিছু দেখছেন না শিক্ষামন্ত্রী। ‘‘এর মধ্যে কোনও বিতর্ক নেই। আমি দৃশ্যটি দেখেছি। সেখানে যারা ছিল তারা প্রত্যেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তারা যখন দেখছে গুরুজনদের অন্যায় ভাবে আটকে রাখা হয়েছে তারা তার প্রতিবাদ করেছে। আমার মনে হয় না এর মধ্যে কোনও অন্যায় হয়েছে।’’ মন্তব্য পার্থবাবুর।

ওই দিনই দেখা গিয়েছিল যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পড়ুয়া ছিলেন। আন্দোলনের সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল যাদবপুরের সেই পড়ুয়া ত্রিপর্ণা সরকারকে। সম্প্রতি জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে পথে নেমে ফেসবুকে যিনি হুমকির মুখে পড়েছিলেন। তিনি তো যাদবপুরের বাংলার স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তা হলে তিনি কী করছেন?

উত্তরে ত্রিপর্ণা বলেন, ‘‘আমি আন্দোলনের সমর্থনে এসেছি।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৌরভ অধিকারী বলেন, ‘‘এর আগেও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যার আন্দোলনকে ঘিরে মেয়েদের অন্তর্বাস পরে উপাচার্যের ঘরের ভিতরে ঢুকেছিল যাদবপুরের এক পড়ুয়া। এটাই ওদের কালচার।’’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে যে আখেরে তাঁদেরই ক্ষতি তা কিন্তু বুঝতে পারছেন পড়ুয়ারা। আন্দোলনকারীদেরই একাংশ মনে করছেন এই অনিশ্চয়তায় তাঁদের পড়াশোনার সময় অনেকটাই নষ্ট হচ্ছে।

এমন অবস্থায় উপাচার্যকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জোড়াসাঁকো থানায় অঙ্কিতা দাস নামে এক পড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ, উপাচার্য সুগত মারজিতের উদ্দ্যেশে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন ওই ছাত্রী। ‘‘উপাচার্য আজ বেঁচে ফিরতে পারবেন না’’, এই ভাষাতেই আক্রমণ করা হয় উপাচার্যকে।

এর পরে অবশ্য উপাচার্য সুগত মারজিত বলছেন, ‘‘আচার্যের কথা থেকে শিক্ষা নিন পড়ুয়ারা। তাঁরাই ভেবে নিন কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৪ এবং ১১ এপ্রিল যে সমস্ত জায়গায় ভোট হবে তাঁরা বেশির ভাগই কলকাতায় থাকেন। তাঁরা কোনও মতেই চান না পরীক্ষার দিন অদলবদল ঘটুক। এটা নিয়ে অন্য কয়েক জন ধুয়ো তুলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cu universities wont change exam schedule
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE