বিনা পরীক্ষাতেই রাজ্যে মন্ত্রীদের সহকারীদের জন্য সরকারি চাকরির দরজা খুলে গিয়েছে। তাঁদের পদোন্নতিও হচ্ছে নিয়মমাফিক। ফলে কিছুটা হলেও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে সরকারি কর্মচারী শিবিরে।
বিশেষত যাঁরা পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা এই পদ্ধতি সমর্থন করছেন না। ফলে চাপ বাড়ছে শাসক দলের সরকারি কর্মচারী সংগঠনের উপরে। পদোন্নতিতে যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া বাধ্যতামূলক করার পক্ষেই সওয়াল করছে সংগঠন। বেতন কমিশনের কাছে কিছু পদক্ষেপের আর্জিও জানিয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সচিবালয় শাখা।
চলতি রেওয়াজ অনুযায়ী পাঁচ বছরে ১৫ জন সহকারী নিয়োগ করতে পারেন এক জন মন্ত্রী। বছরখানেকের মধ্যেই সেই সহকারী গ্রুপ-ডি বা চতুর্থ শ্রেণির পদে কাজ করার ‘যোগ্যতা’ অর্জন করেন। কয়েক বছর গ্রুপ-ডি পদে কাজ করলে চাকরি স্থায়ী হয়। তিনি মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলে তবেই শুরু হয় পদোন্নতি। সরকারি কর্মী-আধিকারিক মহলের ব্যাখ্যা, গ্রুপ-ডি পদে বছর তিনেক কাটানোর পরে লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বছর ঘুরতে না-ঘুরতে আপার ডিভিশন ক্লার্ক পদেও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। বছর দশেকের মাথায় হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট হতে পারেন সেই ব্যক্তি। তার পরে সেকশন অফিসার এবং বয়স থাকলে যুগ্মসচিব স্তর পর্যন্ত পদোন্নতিরও সুযোগ রয়েছে।
এই পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছে শাসক দলের কর্মচারী সংগঠন। বেতন কমিশনের কাছে সংগঠনের অনুরোধ, সেকশন অফিসার থেকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি) পদে উন্নীত হওয়ার আগে যোগ্যতা নির্ণায়ক বিভাগীয় পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক। ওএসডি-র যত পদ প্রতি বছর ফাঁকা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ পদে এই পরীক্ষা নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। বাকি পদ ফাঁকা রাখা হোক অভিজ্ঞতার নিরিখে যাঁরা প্রোমোশন পাবেন, তাঁদের জন্য। আপার ডিভিশন ক্লার্ক পদে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর পরীক্ষায় কৃতীদের সরাসরি নিয়োগের আর্জি জানিয়েছে সংগঠন। এই পরীক্ষায় ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক করার পক্ষেও সওয়াল করা হয়েছে। পিএসসি-র অধীনে পৃথক ভাবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট এগজাম’ চালুর আবেদনও জানিয়েছে কর্মচারী সংগঠন।
ফেডারেশনের এক নেতার কথায়, ‘‘এই সব পদের অফিসারদের উপরে সরকারি কাজের গুণগত মান নির্ভর করে অনেকটা। তা ছাড়া ছাঁকনি না-থাকলে যাঁরা পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বিনা পরীক্ষায় চাকরি পাওয়া ব্যক্তির কী পার্থক্য থাকবে?’’ এই সব দাবি সমর্থন করছেন ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের অনেকে। তাঁদের যুক্তি, বর্তমান রীতিতে বহু যোগ্যতর কর্মীর ন্যায্য পদোন্নতির সুযোগ কমতে থাকে। আইএএস মহলের অনেকে এক কদম এগিয়ে জানাচ্ছেন, যোগ্যতা নির্ধারণের পরীক্ষা সর্বস্তরের কর্মীদের জন্যই চালু করা প্রয়োজন। এক অফিসারের কথায়, ‘‘পরীক্ষার পরিবর্তে বয়স ও অভিজ্ঞতার নিরিখে পদোন্নতি চলে আসছে বাম আমল থেকেই। তাতে আখেরে কর্মীদের একটি অংশের দক্ষতা কমছে ক্রমশ। কেউ কেউ এমন রয়েছেন, যাঁরা একটা নির্ভুল নোটশিট তৈরি করতেও অক্ষম। এই রীতির পরিবর্তন ঘটানো জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy