Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্লাস্টিক-মুক্ত বটানিক্যালে প্লাস্টিক ফুল

অথচ বটানিক্যাল গার্ডেনে যাবতীয় প্লাস্টিকের প্রবেশই তো নিষিদ্ধ! কয়েক বছর আগে গোটা এলাকাকে ‘প্লাস্টিক-মুক্ত’ ঘোষণা করে বাগানের ভিতরে পানীয় জলের বোতল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছিলেন বটানিক্যাল গার্ডেন কতৃর্পক্ষ। 

সাজ: নকল ফুলে সেজেছে বটানিক্যাল গার্ডেন। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

সাজ: নকল ফুলে সেজেছে বটানিক্যাল গার্ডেন। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০৩:৫১
Share: Save:

‘নানা বরণের বনফুল’ ছিল হাতের কাছেই। অপর্যাপ্ত। তবু নকল ফুলের সাজ পরল দুই শতকের প্রাচীন বাগান।

নকল মানে প্লাস্টিকের ফুল। বুধবার কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরে শিবপুরের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বটানিক গার্ডেন পরিদর্শনে এলেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। তাঁর সেই সফর উপলক্ষে রবীন্দ্র জয়ন্তীতে বটানিক্যাল গার্ডেনের প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে মূল প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত রাস্তায় বসল রংবেরঙের প্লাস্টিকের ফুলের তোরণ। গোটা রাস্তা সাফ-সুতরো করে দু’পাশে পড়ল ব্লিচিং। বিভিন্ন ভবনের বহিরঙ্গও সাজানো হল প্লাস্টিকের ফুলে।

অথচ বটানিক্যাল গার্ডেনে যাবতীয় প্লাস্টিকের প্রবেশই তো নিষিদ্ধ! কয়েক বছর আগে গোটা এলাকাকে ‘প্লাস্টিক-মুক্ত’ ঘোষণা করে বাগানের ভিতরে পানীয় জলের বোতল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছিলেন বটানিক্যাল গার্ডেন কতৃর্পক্ষ।

এ দিন বাগানের কর্মী-অফিসারদের একাংশই তাই ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ এমন নিয়মটা শীর্ষ কর্তারা ভাঙলেন কেন? যে বাগানকে প্রাকৃতিক বাগান বলা হয়, যেখানে আলাদা ফুলের উদ্যান আছে— সেই ‘ফুলবনেই’ তো নিত্য প্লাস্টিক ফুল ফোটে নানা ফুল। ওই ফুল দিয়ে বাগান না সাজিয়ে ডেকরেটরের কাছ থেকে সস্তা প্লাস্টিকের ফুল ভাড়া করে আনা হল কেন? এক কর্মী বলেন, ‘‘এমন আগে কখনও ঘটেনি। খোদ কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রীর পরিদর্শনের সময়ে কর্তৃপক্ষ কী করে এটা করলেন, সেটাই প্রশ্ন।’’
গার্ডেনের জয়েন্ট ডিরেক্টর এম ইউ শরিফের যুক্তি, ‘‘কয়েক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক থেকে নির্দেশিকা দিয়ে জানানো হয়েছিল, কোনও অনুষ্ঠানে আসল ফুল, আসল ঘাস ব্যবহার করা যাবে না। ওই সব দিয়ে কোনও অনুষ্ঠানস্থল যেমন সাজানো যাবে না, আসল ফুল দিয়ে অতিথিদের পুষ্পস্তবকও দেওয়া যাবে না। তাই আমরা এ দিন প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে বাগান সাজিয়েছি।’’ ওই কর্তার দাবি, মন্ত্রী চলে যাওয়ার পরেই প্লাস্টিকের ফুলের যাবতীয় সাজ বার করে দেওয়া হয়েছে বাগানের বাইরে। হর্ষ বর্ধনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে অবাক হয়ে যান। তার পর বলেন, ‘‘এমন হলে আমি নিশ্চয়ই অফিসারদের সঙ্গে কথা বলব। তবে এগুলো ছোটখাটো ব্যাপার। গুরুত্ব না দেওয়াই ভাল।’’
হর্ষ বর্ধনের মন্ত্রকের নির্দেশকে তুলে ধরে প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহারের যুক্তি দিচ্ছেন বাগান-কর্তা। অথচ খোদ মন্ত্রীর সামনেই এ দিন লঙ্ঘিত হয়েছে সেই নির্দেশ। কারণ, বটানিক্যাল গার্ডেনের যে ভবনে এ দিন অফিসার ও কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মন্ত্রী, সেই বাড়িটির প্রবেশপথ থেকে দোতলা পর্যন্ত গোটা মেঝে জুড়ে ছিল ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি আলপনা। বাজার থেকে কেনা আসল ফুল! এবং... মন্ত্রীকে স্বাগত জানানোও হয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, জিনিয়ার তোড়ায়। আসল!
কার নিয়ম কে ভাঙলেন তা হলে? রহস্যের ছায়া ঘনাচ্ছে শিবপুরের ‘বনে’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BG Botanical Garden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE