Advertisement
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
অনাস্থার পাল্টা

মার্কিন সফরে মমতাকে ডাক, দাবি অমিতের

মার্কিন শিল্প-মানচিত্রে ঠাঁই না-পাওয়ার অস্বস্তি কাটাতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-পরিবেশ নিয়ে আরও এক দফা ঢাক পেটালেন রাজ্যের অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

মার্কিন শিল্প-মানচিত্রে ঠাঁই না-পাওয়ার অস্বস্তি কাটাতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-পরিবেশ নিয়ে আরও এক দফা ঢাক পেটালেন রাজ্যের অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মার্কিন শিল্প-প্রতিনিধিদলের গুরুত্বকে কিছুটা খাটো করে দেখিয়ে দাবি করলেন, যে ফোরামের তরফে প্রতিনিধিরা আসছেন, তাদের খোদ কর্তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমেরিকা যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। অর্থমন্ত্রীর মতে, মার্কিন মুলুকে লগ্নি নয়, বরং এ রাজ্যে মার্কিন লগ্নি আকর্ষণই তাঁদের আসল লক্ষ্য।

দিল্লির মার্কিন দূতাবাসের কমার্শিয়াল অফিসার পল ফ্রস্ট সোমবার জানান, ভারতীয় বিনিয়োগ টানতে অক্টোবরে তাঁরা দিল্লি-মুম্বই-চেন্নাইয়ে রোড-শো করবেন তাঁদের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা। কলকাতায় দাঁড়িয়ে এ কথা ঘোষণার সময়ে ফ্রস্ট কিন্তু এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, ওই প্রতিনিধিদল পশ্চিমবঙ্গে পা দেবে না।

এতে আশ্চর্যেরও কিছু দেখছে না রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য মহলের বড় অংশ। এঁদের বক্তব্য: চার বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ‘শিল্প-বন্ধু’ কোনও ভাবমূর্তি গড়ে তো ওঠেইনি, উল্টে শিল্প সহায়ক জমি-নীতির অভাব, লালফিতের ফাঁস, সিন্ডিকেট-রাজ বা তোলাবাজির রমরমা— এমন নানা বাধায় এ রাজ্যে লগ্নির পথ দুর্গম।

লগ্নি টানতে দিল্লি-মুম্বই তো বটেই, ঢাকা, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, চিন, ভিয়েতনাম-সহ পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশে মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়েছেন, বা প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। অমিতবাবু লন্ডন-লাস ভেগাসেও পাড়ি দিয়েছেন। তবু লগ্নির দেখা মেলেনি। ‘‘যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী তেলেভাজাকে শিল্প মনে করেন, সেখানে কোন সংস্থা শিল্প গড়তে আসবে!’’— কটাক্ষও করেছেন এক শিল্প-কর্তা।

এমতাবস্থায় মার্কিন-অনাস্থার বার্তা পেয়ে রাজ্য বিলক্ষণ বিড়ম্বনায়। আর তা মোকাবিলা করতেই বুধবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অমিতবাবু দাবি করেছেন, ওই মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরসূচিতে কলকাতার নাম না-থাকাটা মোটেই তাৎপর্যপূর্ণ নয়। ‘‘ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসআইবিসি)-এর প্রতিনিধি হয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁরা ততটা নামজাদা নন।’’— পর্যবেক্ষণ অর্থমন্ত্রীর। তাঁর এ-ও মন্তব্য, ‘‘ওঁরা আসছেন ভারত থেকে মার্কিন মুলুকে লগ্নি নিয়ে যেতে। কিন্তু আমরা তো এ রাজ্যে মার্কিন লগ্নি চাইছি! দু’টোর উদ্দেশ্য আলাদা।’’

এ প্রসঙ্গে অমিতবাবু জানান মুখ্যমন্ত্রীর মার্কিন সফরে আমন্ত্রণ লাভের কথা। তাঁর দাবি মোতাবেক, ভারত ও মার্কিন মুলুকের বাণিজ্যিক যোগসূত্র তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হল এই ইউএসআইবিসি, যার চেয়ারম্যান অজয়সিংহ বাঙ্গা নিজেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ওই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘মার্কিন লগ্নিকারীরা বুঝেছেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বদলেছে।’’

অমিতবাবু জানান, অজয় বাঙ্গা লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গেও বিনিয়োগের সুযোগ আছে। এরঅন্যতম কারণ, বাংলাদেশ ও আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে ভৌগোলিক নৈকট্য। প্রশিক্ষিত মানবসম্পদও যথেষ্ট।’ অমিতবাবু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি পুরো বদলে গিয়েছে। ইউএসআইবিসির চেয়ারম্যানও তা উপলব্ধি করেছেন। অতীতে ওঁরা দেশের বিশিষ্ট কিছু নেতানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেই তালিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের নামও যুক্ত হল।’’ মুখ্যমন্ত্রী কি আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন?

স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে জানাব।’’— বলেছেন অমিতবাবু। তবে তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী আমন্ত্রণে সাড়া দিলে কাউন্সিলই মার্কিন শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেবে। ওয়াশিংটন ছাড়াও আমেরিকার নানা শহরে আলোচনাসভার বন্দোবস্ত করার প্রতিশ্রুতি বাঙ্গার চিঠিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, এর আগে তদানীন্তন মার্কিন বিদেশ-সচিব হিলারি ক্নিন্টন কলকাতা এসে মুখ্যমন্ত্রীকে আমেরিকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। তারও আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মমতা আমন্ত্রিত হয়েছেন। বারাক ওবামার আমন্ত্রণপত্র তাঁর হাতে দিয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল। কোনও ক্ষেত্রেই মমতা সাড়া দেননি। তবে এ বার অমিতবাবুর কথা শুনে প্রশাসনের একাংশের ধারণা, জুলাইয়ের লন্ডন সফর সেরেই হয়তো মুখ্যমন্ত্রী মার্কিন সফরের তোড়জোড় শুরু করে দেবেন!

অন্য বিষয়গুলি:

US USIBC Amit Mitra Finance Minister Mamata Banerjee Chief Minister
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy