Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Uttar Dinajpur

নাবালিকার মৃত্যু ঘিরে চাপানউতোর দুই কমিশনে

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফে শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে একটি বৈঠক আয়োজন করার কথা বলা হয়েছিল।

deadbody.

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উত্তর দিনাজপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০১
Share: Save:

নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগের ঘটনায় রবিবারও উত্তপ্ত উত্তর দিনাজপুর।

এ দিন আলাদা-আলাদা ভাবে মৃতার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন সরকারি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যেরা। জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো, জাতীয় এসসি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অরুণ হালদারের পাশাপাশি বিজেপির এসসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি সুদীপ দাস ওই মৃত নাবালিকার বাড়িতে যান। কিন্তু রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় এ বিষয়ে বৈঠক করা নিয়ে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সঙ্গে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চাপানউতোর প্রকাশ্যে চলে আসে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দোষারোপের পালাও শুরু হয়েছে।

প্রিয়ঙ্ক এ দিন বলেন, “ঘটনার পরে তিন দিন কেটে গেলেও, এখনও পুলিশ মৃত নাবালিকার পরিবারের লোকেদের জবানবন্দি নেয়নি। তাঁদের জবানবন্দি না নিয়ে পুলিশের কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক নয়।” রায়গঞ্জ পুলিশ-জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতারের বক্তব্য, “পুলিশ আইন মেনেই সব ব্যবস্থা নিয়েছে। বাকি দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফে শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে একটি বৈঠক আয়োজন করার কথা বলা হয়েছিল। ওই বৈঠকে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সদস্যদের পাশাপাশি মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার, জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তা, জেলা সমাজকল্যাণ ও শিশু সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক এবং মৃতদেহ ময়না-তদন্তের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ও চিকিৎসকদের উপস্থিত রাখতে বলা হয়েছিল। সেই মতো এ দিন এঁরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় কর্ণজোড়ায় জেলাশাসকের দফতরের সভাকক্ষে অপেক্ষা করে ফিরে যান।

প্রিয়ঙ্কের অভিযোগ, রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় সার্কিট হাউসে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্যের প্রতিনিধিরা সেখানে হাজির হননি। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় বলেন, “জেলাশাসকের দফতরের সভাকক্ষে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনকে প্রশাসনের তরফে সে কথা জানানোও হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা আসেননি।” প্রিয়ঙ্ক বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিষয়ে যথাযথ রিপোর্ট দেব।’’

মৃতের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে এ দিন জাতীয় এসসি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অরুণ হালদার বলেন, “প্রোটোকল মেনে ডিএম, এসপি ও তদন্তকারী পুলিশ অফিসার আমাদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে দেখা করেননি।’’ তিনি জানান, ডিএম, এসপি, আইজিপি, ডিজি ও মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে তিন দিনের মধ্যে তলব করা হবে।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ক্রমশ জোরালো হচ্ছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। তবে মেয়েটির মৃত্যু কেন হল, সেই তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কেন্দ্রের টিম দলদাসের মতো চলে এসেছে। পুলিশ যথাযথ তদন্ত করবে এবং তাতে রাজনৈতিক দল হিসেবে কারও কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন ‘‘শিশুর মৃতদেহকে কেন্দ্র করেও কুৎসিত রাজনীতি হচ্ছে। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনকে অকেজো করে রাখা হয়েছে। সেই সুযোগে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন চলে যাচ্ছে। শিশুমৃত্যুকে কেন্দ্র করে যা হচ্ছে, তাতে হাস্যস্পদ হচ্ছে বাংলা।’’ বিজেপির এসসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি সুদীপ দাস বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারের দাবি মতো সিবিআই তদন্তের দাবিতে আন্দোলনে নামব।’’

এরই মধ্যে ওই এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানো আটকাতে এ দিন ফের ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে ওই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেছে তৃণমূল। ওই নাবালিকার মৃত্যুর পরে প্রধান ও তাঁর স্বামী দু’পক্ষকে ঘটনাটি মিটমাট করে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের একাংশের। যদিও প্রধানের দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttar Dinajpur Crime NCPCR WBCPCR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE