ভাঁড়ারে যে টান রয়েছে সে কথা কবুল করায় রাখঢাক নেই রাজ্য সরকারের। তবে বৈপরীত্য হল দান খয়রাতির প্রশ্নে সরকারের ‘উদার-নীতি’। সেই তালিকায় রয়েছে বিবিধ কর মকুবের ঘোষণা। কিন্তু, সেই কর আদায়ে নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তা-কর্মীদের সিংহভাগই ‘কার্যত’ কর্মহীন অবস্থাতেই নিয়মিত সরকারি বেতন ভোগ করছেন। কয়েকটি দফতরের বিভিন্ন শাখায় এমনই নজির মিলেছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনক্রমে সেচ ও জলপথ দফতর চাষিদের সেচসেবিত জল কর মকুবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’বছর আগে। কিন্তু রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি বাড়লেও জল কর আদায়ের জন্য সেচ দফতরের জলপথ শাখার ন’টি ডিভিশনের রাজস্ব আধিকারিক-সহ অন্তত ১০০ জন কর্মী রয়ে গিয়েছেন পুরনো বিভাগেই। যাঁরা কার্যত ‘কর্মহীন’। কিন্তু মাসান্তে তাঁদের বেতনে ঘাটতি নেই।
রাজ্যের বিভিন্ন বনাঞ্চল ও সাফারি পার্কেও রাতারাতি পর্যটকদের প্রবেশমূল্য মকুব হয়েছে। সেখানেও স্থায়ী বনকর্মীদের কয়েক জন প্রায় ‘কর্মহীন’ অবস্থায় সরকারি বেতন ভোগ করছেন বলে বন দফতর সূত্রের খবর। বন দফতরের বিভিন্ন সাফারি পার্কে প্রবেশমূল্য আদায়ের অস্থায়ী কর্মী এবং বন দফতর নিযুক্ত স্থানীয় গাইডরাও কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ।
সেচ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বোরো ধানের মরসুমে জমিতে জল সিঞ্চনের জন্য একর প্রতি ৫০ টাকা, রবি মরসুমে ২০ টাকা এবং খরিফ মরসুমে ১৫ টাকা— ১৯৫৮ সাল থেকে এই হারেই রাজ্যের সেচ দফতর জল কর আদায় করে আসছিল। দু’বছর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই নিয়ম বাতিল করা হয়।” ২০২৩-এর অগস্টে তদানীন্তন জলপথ বিভাগের সহ-সচিব বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন, ন’টি ডিভিশনের রাজস্ব আধিকারিক-সহ ১০০ জন কর্মীর বদলি কোথায় হবে তা তিন সদস্যের কমিটি আলোচনা করে জানিয়ে দেবে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জল কর আদায় বন্ধ হলেও ওই কর্মীদের বেতন, তাঁদের দফতরের বাড়ি ভাড়া, গাড়ি, বিদ্যুৎ বিল বাবদ এখনও বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় করে চলেছে সরকার। কেন? এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। উত্তর মেলেনি ওয়টস্যাপেও।
বিনা কাজে ‘বেতন ভোগের’ প্রশ্নে বিরোধীরা সরকারের ভোটমুখী জনমোহিনী রাজনীতিকেই কাঠগড়ায় তুলছেন। তৃণমূল সমর্থিত কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তীও বলছেন, “নুন আনতে পান্তা ফুরনো অবস্থা সরকারের। এই অবস্থায় সরকারি কর্মীদের বসিয়ে মাইনে দেওয়া তো বিলাসিতা!”
রাজ্যের বিভিন্ন সাফারি পার্কে পশু-পাখিদের খাবার, পথ্য, রক্ষণাবেক্ষণ ও বন-সাফারির পথ সুগম রাখা থেকে অস্থায়ী কর্মীদের বেতন— পর্যটকদের কাছে আদায় করা প্রবেশমূল্যেই এ যাবৎ সামাল দিত বন দফতর। কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওই প্রবেশমূল্য বন্ধ হয়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে বিপুল রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে দফতর। এক শীর্ষ বনকর্তার কথায়, “বিভিন্ন সাফারি পার্ক বা অভয়ারণ্যে ঢোকার প্রবেশমূল্য এ রাজ্যে ছিটেফোঁটা। তবু ওই টাকাতেই অভয়ারণ্য বা পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ এবং অস্থায়ী কর্মীদের বেতনটুকু দেওয়া যেত।” সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “সরকারি কর্মীদের একাংশকে বিনা কাজে মাইনে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী! তৃণমূলের জমানায় সবই সম্ভব!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)