উপাচার্য ঠিক করেছিলেন, খাতা দেখা হবে কেন্দ্রীয় ভাবে, সল্টলেকে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনে বসে। পরীক্ষকেরা এ রাজ্যের হতে পারেন, ভিন্ রাজ্য থেকেও আসতে পারেন।
রাজ্যে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার (এমডি, এমএস) খাতা দেখার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এই ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস। কিন্তু সে জন্য যে তাঁকে এমন ভাবে হেনস্থা হতে হবে, তা ভাবতে পারেননি উপাচার্য। স্বাস্থ্য ভবন থেকে ভবতোষবাবুকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, জেলায়-জেলায় মাল্টি স্পেশ্যালিটি, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না পাওয়ায় সে সব চালু করা যাচ্ছে না। পরের ধাপে আরও মেডিক্যাল কলেজ খোলার কথা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না পেলে সমস্যা হবে সেখানেও। তাই খাতা দেখার ক্ষেত্রে এত কড়াকড়ি চলবে না। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার কথায়, ‘‘১১০০ এমডি-এমএস পরীক্ষার্থীর সবাইকে পাশ করিয়ে দিলে আদতে যে রাজ্যেরই লাভ হবে, উপাচার্যকে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়।’’ স্বাস্থ্য ভবনের চাপে পিছু হটে অগত্যা চালু ব্যবস্থাতেই ফিরে যেতে হয়েছে উপাচার্যকে।
কী সেই ব্যবস্থা? স্বাস্থ্য ভবনের খবর, এখনকার চালু ব্যবস্থায় কোনও পরীক্ষার্থীর খাতা দেখবেন সেই কলেজের দু’জন এবং বাইরের দু’জন প্রফেসর। খাতা দেখা হবে পরীক্ষার্থীর কলেজে বসেই। এতে কার কাছে কার খাতা রয়েছে, দু’পক্ষই তা অনায়াসে জানতে পারবেন। খাতা দেখা হবে প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার দিন। আর সেই প্র্যাক্টিক্যাল হবে পরীক্ষার্থীদের নিজেদের মেডিক্যাল কলেজে। এই পদ্ধতিতে যে স্বজনপোষণ ও কারচুপির আশঙ্কা থেকে যায়, তা অনেকেই মেনে নিচ্ছেন। তবু স্বাস্থ্য ভবন তা পাল্টাতে নারাজ।
উপাচার্য কিন্তু চেয়েছিলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রীয় ভাবে খাতা দেখার ব্যবস্থা হলে স্বজনপোষণ ও কারচুপির আশঙ্কা যেমন প্রায় থাকেই না, তেমনই দ্রুত খাতা দেখার কাজ শেষ করা যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের তাতে ঘোর আপত্তি। তাই পিছিয়ে যেতে হয়েছে উপাচার্যকে।
হতাশ উপাচার্য ঘনিষ্ঠ মহলে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘কোনও বিতর্কে যেতে চাই না। এটুকু বলব, এমডি-এমএসের খাতা দেখার যে ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম, তা পারলাম না। কারণ, এটা হলে অনেকের অসুবিধা হতো।’’ পশ্চিমবঙ্গে যে পদ্ধতিতে এমডি-এমএসের খাতা দেখা হচ্ছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। অভিমানী ভবতোষবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অধিকাংশ রাজ্যে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তরে এই ভাবে খাতা দেখা হয় না। এই পদ্ধতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অসম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মান যাতে ভাল থাকে, তার জন্য ন্যূনতম ছাকনি থাকা উচিত।’’
কেন আগের পদ্ধতিতেই আটকে থাকতে চাইছে স্বাস্থ্য ভবন? স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘এটা মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা। সাধারণ বাংলা-ইতিহাস পরীক্ষার সঙ্গে উপাচার্য একে গুলিয়ে ফেলেছেন। এমডি-এমএস-এ ৬০% নম্বর হল প্র্যাক্টিক্যাল। অনেকে লিখিত পরীক্ষা খারাপ দিয়েও প্র্যাক্টিক্যাল খুব ভাল দেন। তার ভিত্তিতেই ভাল ভাবে পাশ করে যান ওই পরীক্ষার্থী। তাই নিজের কলেজেই প্র্যাক্টিক্যালের দিন তাঁদের খাতা দেখার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এতে কারচুপির কী আছে?’’ সুশান্তবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষার্থীরা সারা বছর হাসপাতালে কী ভাবে কাজ করেছেন, সেটাও তো নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচ্য হয়। তাই শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষকদের দিয়ে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খাতা দেখানোর কোনও মানেই হয় না।’’
প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভবতোষবাবু অবশ্য পুরনো নিয়মের পরিবর্তন চাইছেন না। অর্থাৎ নিজের কলেজেই প্র্যাক্টিক্যাল দেওয়ার পক্ষে তিনি। তা হলে কি শুধু লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাইছেন ভবতোষবাবু? এই প্রশ্নটা কিন্তু উঠছে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে এমডি-এমএস পরীক্ষা শুরু হয়েছে ৫ জুলাই। চলবে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। অগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে চাইছে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এই আকালের বাজারে এমডি-এমএস পরীক্ষায় কেউ অকৃতকার্য হন, তা চায় না স্বাস্থ্য ভবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy