Advertisement
০১ মে ২০২৪
Bhangar

অশান্তির আঁচ আনাজ-খেতে

বিশ্ব বাংলা গেট ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে নিউ টাউনের শেষ, ভাঙড়ের শুরু। তার পরে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়বে দিগন্তবিস্তৃত আনাজখেত। মাঝে মাঝে রং-বেরঙের ফুলের বাগান।

Bhangar

খেত থেকে তোলা চালকুমড়ো। ভাঙড়ের সাতুলিয়াতে। —নিজস্ব চিত্র।

সমীরণ দাস 
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৭:৫৯
Share: Save:

খেতের মাঝে কিছুটা জায়গায় মাটি কুপিয়ে যত্ন করে বাঁধাকপির দানা বসাচ্ছিলেন বছর পঞ্চাশের ওহিদুল শেখ।

কবে ফলবে এই বাঁধাকপি? ওহিদুল বলেন, ‘‘দানা থেকে অঙ্কুর বেরোবে কয়েক দিনেই। তার পর অঙ্কুর তুলে নিয়ে গিয়ে বসাতে হবে খেতে। সব মিলিয়ে মাস তিনেক লাগবে।’’ কিন্তু...। প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘ততদিনে আশা করি ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট থিতিয়ে যাবে।’’ তার পরে কিছুটা থেমে বললেন, ‘‘যা চলছে ক’দিন! বাজারে যেতেই ভয় লাগছে। শীতের আনাজটা ভাল বিক্রি না হলে সারা বছর খেতে পাব না।”

কিছুটা দূরে তখন মাচা থেকে চালকুমড়ো তুলে জড়ো করছিলেন বছর চল্লিশের হান্নান মোল্লা। চিন্তিত তিনিও। তাঁর কথায়, ‘‘এই সময় অন্য আনাজ তেমন নেই। এই চালকুমড়োই হয়েছে। অন্য সময় পাঁচটা ১০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করি। এই ক’দিন ৪০-৫০, যা দামে পেরেছি, দিয়ে চলে এসেছি।’’ কেন? তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি ভাল নয়। কখন আবার কী হয়!”

বিশ্ব বাংলা গেট ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে নিউ টাউনের শেষ, ভাঙড়ের শুরু। তার পরে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়বে দিগন্তবিস্তৃত আনাজখেত। মাঝে মাঝে রং-বেরঙের ফুলের বাগান। বর্ষার টলটলে জল নিয়ে বয়ে চলা খাল আর পাশে অনন্ত সবুজ। মনেই থাকবে না, এর কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে সম্প্রতি বোমা-গুলির লড়াই চলেছে। যার আঁচ পড়ছে ওই সবুজ খেতেও। ভাঙড়ে প্রচুর আনাজ চাষ হয়। গোটা রাজ্য, এমনকি, ভিন্‌ রাজ্যেও যায় এখানকার আনাজ। কিন্তু গোলমালের জেরে আনাজের বিক্রিবাটায় প্রভাব পড়েছে বলেই জানাচ্ছেন চাষিরা।

হাতিশালা থেকে কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে সাতুলিয়া সেতুর পাশেই আনাজ খেতে কাজ করছিলেন ওহিদুল, হান্নানেরা। এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চরম বিরক্তি তাঁদের গলায়। ওহিদুল বলেন, “ভোটে এক জন জিতবে, এক জন হারবে। তা নিয়ে কিসের এত গোলমাল বুঝি না। এর জন্য কয়েক দিন বাজারে ব্যবসায়ী আসেনি। সামান্য যেটুকু আনাজ হয়েছে, বিক্রি করতে সমস্যায় পড়েছি।” হান্নান বলেন, “এমনিতে ব্যবসায়ী কম। তা ছাড়া এই গোলমালে আমরাও যত তাড়াতাড়ি পারি, বেচে বাড়ি ফিরতে চাইছিলাম। তাই যেমন দাম পেয়েছি, দিয়ে দিয়েছি।”

সাতুলিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মাঝেরাইট গ্রামে ছবিটা আরও করুণ। অভিযোগ, সন্ত্রাসের ভয়ে গ্রামের অনেক পুরুষই ঘরছাড়া। এ দিকে এই সময়টাতেই শীতকালীন আনাজ চাষ শুরু করার কথা। ছেলেরা না থাকায় অনেক জায়গাতেই চাষ শুরু হয়নি এখনও। গ্রামেরই এক মহিলার কথায়, “এই সময়ই কপির দানা বসাতে না পারলে দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু বাড়ির পুরুষেরা তো সব বাইরে। করবে কে?”

কবে ঠিক হবে সব? ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী বলেন, “আমি চাই, এলাকায় শান্তি ফিরুক। এ ব্যাপারে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। আমাদের ঘরছাড়া কর্মীদের ঘরে ফেরানো হোক।” তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের দাবি, “এলাকা ধীরে ধীরে অনেকটাই শান্ত হয়েছে। প্রশাসন সজাগ রয়েছে। চাষিদের যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয়, সে দিকে আমরা খেয়াল রাখব।”

কিন্তু চাষিরা স্বস্তি পাচ্ছেন কোথায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE