Advertisement
E-Paper

একটি যুগলবন্দির অপমৃত্যু ও ছলনার তরজা

কিছু দিন আগে ভারতের অন্যান্য প্রান্তে যখন গুলাম আলিকে গাইতে দেওয়া হচ্ছিল না, ওই পাকিস্তানি গজলশিল্পীকে সাদরে কোল দিয়েছিল কলকাতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৪
গুলজার এবং শাহিদ রসম

গুলজার এবং শাহিদ রসম

কিছু দিন আগে ভারতের অন্যান্য প্রান্তে যখন গুলাম আলিকে গাইতে দেওয়া হচ্ছিল না, ওই পাকিস্তানি গজলশিল্পীকে সাদরে কোল দিয়েছিল কলকাতা।

এ বার সেই কলকাতায় মঞ্চ প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও বাতিল হয়ে গেল কবি গুলজার এবং পাকিস্তানি চিত্রশিল্পী শাহিদ রসমের যুগলবন্দি।

কথা ছিল, মঞ্চে মির্জা গালিব আর নিজের কবিতা পাঠ করবেন গুলজার। এবং তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই চলবে রসমের আঁকা ছবির প্রদর্শনী। সামগ্রিক আবহে থাকবে দুই পড়শি দেশের মধ্যে শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে শনিবারের বিকেলে এমন এক যুগলবন্দির অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হল কলকাতা। যাবতীয় আয়োজন সত্ত্বেও কেন শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠান বাতিল হল, তা নিয়েই শুরু হয়েছে শিল্পীর সঙ্গে ভিক্টোরিয়া-কর্তৃপক্ষের চাপান-উতোর।

রসমের প্রশ্ন, ‘‘গুলজার সাহেব কেন এলেন না, সেই সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই। তিনি আসবেন না বলে রাজ্যপালও না-আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, প্রদর্শনীটা বন্ধ করা হল কেন? দর্শকেরা তো আমার আঁকা ছবির প্রদর্শনীটা দেখতে পারতেন।’’ যা ঘটেছে, সেই বিষয়ে তিনি দিল্লিতে পাক হাই কমিশনারকে অবহিত করিয়েছেন বলে জানান রসম।

পাক শিল্পীর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন ভিক্টোরিয়া-কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনুষ্ঠানে গুলজারের আসা ও অসুস্থতা নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য দিয়েছেন ওই শিল্পীই। ‘‘এটা চরম বিশ্বাসঘাতকতা, যা অপরাধমূলক প্রতারণার অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত। এর পরে অনুষ্ঠান করলে ওঁর ছলনাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হতো,’’ বলছেন ভিক্টোরিয়া-কর্তৃপক্ষ।

কী রকম ছলনা?

অক্টোবরে প্রথমে লোক মারফত এবং পরে নিজেই ভিক্টোরিয়ায় এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রস্তাব দেন রসম। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সচিব ও কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত জানান, তাঁরা সেই প্রস্তাবে রাজি হন। নিয়মমাফিক আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয় গুলজারের কাছে। কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দেননি। নভেম্বরে রসম জানান, গুলজারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি আসছেন। তার পরেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে সম্মতি নেওয়া হয় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর।

ঘটনা আচমকা মোড় নেয় অনুষ্ঠানের আগের দিন। জয়ন্তবাবুর দাবি, অনুষ্ঠানের আগের দিন ই-মেল করে গুলজারের বিমানের টিকিটের প্রতিলিপি পাঠান রসম। অথচ অনুষ্ঠানের দিন সকালে তাঁর এক দূত জানান, অসুস্থতার জন্য গুলজার আসতে পারছেন না। কিউরেটরের কথায়, ‘‘বিষয়টি রাজভবনকে জানাই। রাজ্যপালকে অনুরোধ করি, গুলজার না-এলেও তিনি যেন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে আসেন। তিনি তাতে রাজিও হন।’’

তার পরে কলকাতায় গুলজারের এক পরিচিতকে ফোন করেন জয়ন্তবাবু। তাঁর দাবি, ওই ব্যক্তির ফোন থেকে তিনি সরাসরি গুলজারের সঙ্গে কথা বলেন। গুলজার তাঁকে জানান, কলকাতায় ওই অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না বলে অক্টোবরেই তিনি রসমকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তাঁর কাছ থেকে উড়ানের টিকিট পাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। অনুষ্ঠানের কার্ডে তাঁর নাম থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন গুলজার। তিনি অসুস্থ, এটাও সত্যি নয় বলে জানান ওই কবি ও গীতিকার। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘গুলজার আমাকে ঠিক এই কথাটাই বললেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে আমি থাকব কি না, তা জানতে চেয়ে কলকাতা থেকে অনেকে ফোন করছেন। কিন্তু একটা মিথ্যাকে চাপা দেওয়ার জন্য তো আমি হাজারটা মিথ্যা বলতে পারব না’।’’ কিউরেটরের বিস্মিত প্রশ্ন, ‘‘গুলজারকে টিকিট পাঠানোই হল না। অথচ আমাকে তাঁর নামে কাটা একটি টিকিটের প্রতিলিপি ই-মেল করা হল! কী ভাবে?’’

ভিক্টোরিয়া-কর্তৃপক্ষের দাবি অস্বীকার করে রসম জানাচ্ছেন, গুলজার কখনওই বলেননি যে, তিনি আসতে পারবেন না। তিনি আসতে না-পারার কথা জানান একেবারে শেষ দিনে। পাক শিল্পী মনে করেন, তাঁর প্রদর্শনী নিয়ে ভিক্টোরিয়া-কর্তৃপক্ষ আগ্রহী ছিলেন না। তাঁদের যাবতীয় উৎসাহ ছিল গুলজারকে নিয়ে। কিন্তু অনুষ্ঠান বাতিল করা উচিত হয়নি বলেই মনে করেন তিনি।

জয়ন্তবাবুর দাবি, অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জেনে রসম তাঁকে ই-মেলে লেখেন, ‘যা-ই ঘটুক, তার জন্য আমি আন্তরিক দুঃখিত। অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যে-খরচ হয়েছে, তা মিটিয়ে দিতে রাজি আছি।’ জয়ন্তবাবুর মন্তব্য, ‘‘এই কথাগুলোই প্রমাণ করে, সব কিছুর জন্য উনি দায়ী।’’

রসম অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি শিল্পী। আমি কিছু প্রশ্ন তুলেছি। মানুষ এটা কী ভাবে দেখবেন, সেটা তাঁদের বিষয়। আমি কাউকে অভিযুক্ত করছি না। আমি মানবতায় বিশ্বাসী।’’

victoria gulzar shahidrassam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy