Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদা দিতে না পারায় বন্ধ ধোপা-নাপিত

নুন-মুড়িতেও ফতোয়া জারি হয়েছে তাঁর উপরে।মাস আটেক ঘুরে গিয়েছে, ধোপা-নাপিত বন্ধ। মুদির দোকানে নুন আর মুড়ি আনতে গিয়ে গোবিন্দপুরের নিতাই বিশ্বাসকে শুনতে হয়েছে— ‘‘দোকানে পা রেখো না নিতাইদা, মাতব্বরদের কানে গেলে আমার দশাও তোমার মতোই হবে!’’

নিতাই বিশ্বাস

নিতাই বিশ্বাস

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

নুন-মুড়িতেও ফতোয়া জারি হয়েছে তাঁর উপরে।

মাস আটেক ঘুরে গিয়েছে, ধোপা-নাপিত বন্ধ। মুদির দোকানে নুন আর মুড়ি আনতে গিয়ে গোবিন্দপুরের নিতাই বিশ্বাসকে শুনতে হয়েছে— ‘‘দোকানে পা রেখো না নিতাইদা, মাতব্বরদের কানে গেলে আমার দশাও তোমার মতোই হবে!’’

ফতোয়াটা জারি হয়েছে আট মাস আগে। মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক গ্রাম গোবিন্দপুর। সে গ্রামেই থাকেন নিতাই। গত জৈষ্ঠ্যে গ্রামের শিব মন্দিরে বাৎসরিক কীর্তনের আসরে তাঁর ভাগে ধার্য হয় ১৩০০ টাকা চাঁদা।

গা পুড়ে যাচ্ছে দেখলে, ভুল বানানে ‘প্যারাসেটমল’ কিংবা পেটের ব্যাথায় ‘ড্রটিন’ এর বড়ি লিখে হাতুড়ে চিকিৎসা করে দিন গুজরান তাঁর। গ্রামের মুরুব্বিদের রায় শুনে নিতাই তাই জানিয়েছিলেন, নগদ তেরশোটা বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছে। বড় জোর সাতশো টাকা, সঙ্গে কেজি তিনেক চাল দিতে পারেন তিনি। চোখ পাকিয়ে মুরুব্বিরা জানিয়ে দিয়েছিলেন— তা হওয়ার নয়। অনেক কাকুতি মিনতি করেও ফল হয়নি। দিন কয়েক অপেক্ষায় নিতাই ভেবেছিলেন ‘জুলুম’ কিঞ্চিৎ কমবে। ফল হয়েছিল উল্টো। গ্রামের মাতব্বরেরা এক জোট হয়ে রায় দিয়েছিলেন— শিব মন্দিরের ‘পুণ্য-অনুষ্ঠানে’ টাকা না দেওয়ায় সামাজিক-বয়কট করা হবে তাঁকে। পরের দিন থেকেই বন্ধ হয়েছিল ধোপা-নাপিত।

কোনওরকমে চালিয়ে যাচ্ছিলেন নিতাই। সমস্যা পাকল দিন কয়েক আগে তাঁর শাশুড়ির মৃত্যুতে। ঘরে পড়ে রয়েছে দেহ, অথচ শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য লোক নেই। নিতাই বলেন, ‘‘রাত বিরেতে রোগী দেখতে কখনও না করিনি। তারাই কিনা আমার শাশুড়ির দেহটা নিয়ে যেতে চাইল না!’’ প্রতিবাদ করতে গিয়ে পড়শিদের কাছেই মিলেছে চপেটাঘাতও। বাধ্য হয়ে পাশের গ্রাম থেকে বন্ধু-স্বজনদের ডেকে প্রায় জোর করেই বৃদ্ধার দেহ নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

মাতব্বরদের অন্যতম মিন্টু প্রামাণিক রাখঢাক না করেই বলছেন, ‘‘ছোট গ্রামে একটা বাৎসরিক কীর্তন হয়। সকলে চাঁদা না দিলে তা বন্ধ হয়ে যাবে। তার উপর নিতাই ডাক্তারি করে। ওর স্ত্রী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ১৩০০ টাকা না দেওয়ারই বা কী আছে! ওই টাকা চাঁদা না দিলে গ্রামের লোকের সহযোগিতা পাবেন না।’’

এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানাননি? নিতাই বলছেন, ‘‘আমার তো তেমন সম্বল নেই যে অন্য গ্রামে গিয়ে ঘর বাঁধব। তাই নালিশ জানিয়ে আর শত্রুতা বাড়াতে চাইনি। তবে বিষয়টি জানতে পেরে নিতাইবাবুর সঙ্গে কথা বলেছেন হরিহরপাড়ার বিডিও সুশান্ত বালা। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের মানুষকে বয়কট তুলতে বলা হয়েছে। সমস্যা মেটাতে মঙ্গলবার ব্লক দফতরে দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসব। তারপরেও সমস্যা না মিটলে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হবে।’’

হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের নিত্যগোপাল রায় বলেন, ‘‘ওই নামসংকীর্তন কমিটির দায়িত্বে আছি। এই বিষয়টি জানা ছিল না। চাঁদা না পেলে কাউকে এ ভাবে বয়কট করা যায় নাকি? এটা অপরাধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gobind Biswas Hariharpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE