Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
মুড়িগঙ্গা সংস্কারে উদ্যোগ

বর্ষায় তাঁত বন্ধ থাকবে না, আশা বাসিন্দাদের

বছরভরের মরা নদী যে বর্ষায় এমন ভয়াল হতে পারে তা প্রতিবারই হাড়হাড়ে টের পান সুবল, তপতীরা। বাড়িঘর ভেঙে, তাঁত বসে ভাত জোগান দেওয়ায় মুশকিল হয়ে পড়ে। তবু বর্ষার দিনকটা পার করে আবার ঘরে ফেরত আসেন তাঁরা। ফেরত আসেন তাঁদের মতোই পূর্বস্থলী ১ ব্লক ও নদিয়ার বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দারাও। এ দিকে বারবার নানা আবেদন, অভিযোগের পরেও মুড়িগঙ্গা পড়ে থাকে বেহাল দশাতেই।

মজে যাওয়া মুড়িগঙ্গা।—নিজস্ব চিত্র।

মজে যাওয়া মুড়িগঙ্গা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

বছরভরের মরা নদী যে বর্ষায় এমন ভয়াল হতে পারে তা প্রতিবারই হাড়হাড়ে টের পান সুবল, তপতীরা। বাড়িঘর ভেঙে, তাঁত বসে ভাত জোগান দেওয়ায় মুশকিল হয়ে পড়ে। তবু বর্ষার দিনকটা পার করে আবার ঘরে ফেরত আসেন তাঁরা। ফেরত আসেন তাঁদের মতোই পূর্বস্থলী ১ ব্লক ও নদিয়ার বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দারাও। এ দিকে বারবার নানা আবেদন, অভিযোগের পরেও মুড়িগঙ্গা পড়ে থাকে বেহাল দশাতেই।

তবে এ বার সেই গিঁট খুলতে চলেছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সরকারি কর্তারা। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২৯ এপ্রিল নদিয়ায় সভা সেরে পূর্বস্থলীর হেমায়েতপুর হয়ে কলকাতা ফিরছিল মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। তখনই হেমায়েতপুর মোড় লাগোয়া পূর্ত দফতরের বাংলোতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, জেলার মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ তখনই মুড়িগঙ্গা সংস্কারের আবেদন জানান তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে মুড়িগঙ্গার হাল দেখেন। দ্রুত জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট দেওয়ারও নির্দেশ দেন। সেই মতো দিন কয়েক আগে সেচ দফতরের কর্তারা এলাকা ঘুরেও গিয়েছেন।

পূর্বস্থলী ১ ব্লকের জাহান্নগর পঞ্চায়েতের মাধাইপুর থেকে সমুদ্রগড়ের জালুইডাঙা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটারের এই জলাশয় মুড়িগঙ্গা বা ছাড়িগঙ্গা নামে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মুড়িগঙ্গা আসলে ভাগীরথীর অংশ। পরে নদী গতিপথ পরিবর্তন করায় পুরনো নদীখাতটি মুড়িগঙ্গা নামে পরিচিত হয়। তবে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় কচুরিপানা, আগাছায় ভরা জলাশয়টিই এখন এলাকাবাসীর মাথাব্যাথার কারণ। তাঁদের অভিযোগ, ভারী বৃষ্টি হলেই মুড়িগঙ্গা উপচে যায়। জলমগ্ন হয়ে পড়ে দোলগবিন্দপুর, দক্ষিণ শ্রীরামপুর, মধ্যশ্রী রামপুর-সহ বেশ কিছু এলাকা। মূলত তাঁত শিল্পপ্রধান এই এলাকাগুলির বাড়ি ও দোকানের ভিতরেও জল ঢুকে যায়। ব্যাহত হয় তাঁত শিল্পের কাজ। স্থানীয় বাসিন্দা সুবল কুণ্ডু, তপতী অধিকারীদের অভিযোগ, জল ঢুকলে বের হতে অনেক সময় লেগে যায়। তখন অনেককেই তাঁত বন্ধ করে বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়ি অথবা নবদ্বীপ স্টেশনে গিয়ে রাত কাটাতে হয়। অনেক সময়ে বাড়িঘর নষ্ট হয়ে যায় জমা জলে। তাছাড়া আর্থিক ক্ষতি তো রয়েইছে।

পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের মাঝামাঝি একশো দিনের প্রকল্পে মুড়িগঙ্গার প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা সংস্কার করা হয়েছিল। বিধানসভায় সংস্কারের বিষয়টি তুলেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জানানো হয়েছিল সেচ দফতরে। পঞ্চায়েতের দাবি, মুড়িগঙ্গার পাশ দিয়ে রাস্তা ও বসার জায়গা তৈরি, বাহারি গাছ ও আলো লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়। ছোট ছোট করে এলাকা ভাগ করে সংস্কারের কাজ শুরু হয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই অর্থের অভাবে কাজ আটকে যায়। তবে এ বার মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আশা দেখছেন তাঁরা। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিকের আশা, ‘‘সংস্কার শেষ হলে কয়েক হাজার মানুষ বন্যা থেকে রক্ষা পাবেন। পূর্বস্থলীতে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির এবং প্রাণী সম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন বাবুর আশ্বাস, ‘‘সংস্কার শেষ হলে মৎস্যজীবীরা সুবিধা পাবেন। মুড়িগঙ্গার জমা জল চাষের কাজে লাগানো যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nadia loom rain monsoon purbasthali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE