Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ইঁদুর-বাদুড় খেয়েই দিন কাটছে রসার বাসিন্দাদের!

জঙ্গলে শিকার করে পাওয়া ইঁদুর, বাদুড় বা কোনও পাখির মাংস আর ভিক্ষা করে পাওয়া চালের ভাত। জীবনধারনের জন্য মূলত এ সবের উপরেই নির্ভর করতে হতো খয়রাশোলের রসা গ্রামের  ‘যাযাবর’  বেদ সম্প্রদায়ের পাঁচ হতদরিদ্র পরিবারকে। 

অনটন যেন নিত্যসঙ্গী। খয়রাশোলের রসা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

অনটন যেন নিত্যসঙ্গী। খয়রাশোলের রসা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৩
Share: Save:

জঙ্গলে শিকার করে পাওয়া ইঁদুর, বাদুড় বা কোনও পাখির মাংস আর ভিক্ষা করে পাওয়া চালের ভাত। জীবনধারনের জন্য মূলত এ সবের উপরেই নির্ভর করতে হতো খয়রাশোলের রসা গ্রামের ‘যাযাবর’ বেদ সম্প্রদায়ের পাঁচ হতদরিদ্র পরিবারকে।

অপুষ্টি, অভাবের দোসর ছিল যক্ষ্মাও। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যক্ষ্মায় মৃত্যুও হয়েছিল ওই পরিবারগুলির এক সদস্যের। ভুগছিলেন আর এক জন। মাসপাঁচেক আগে সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পরে কিছুটা তৎপর হয় প্রশাসন।

রসা গ্রামে ঘুরে জানা গেল এমনই কথা। ওই পরিবারের সদস্যরা জানান, অভাব এখনও রয়েছে। শিকার ও ভিক্ষাবৃত্তি এখনও তাঁদের খিদে মেটানোর প্রধান উপায়। তবে কিছুটা হলেও পরিবারগুলির পাশে থাকার চেষ্টা করেছে প্রশাসন। পুজোর আগেই পরিবার পিছু ৩০ কিলোগ্রাম করে গম দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে মিলেছে কিছু টাকা, কম্বল, জামাকাপড়, ত্রিপল, চাল।

আরও পড়ুন: ট্রেনের জানালা দিয়ে উড়ে এল কাচের বোতল! হাতে-মুখে ক্ষত নিয়ে তীব্র আতঙ্কে তরুণী

স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক দশক আগে বেদ সম্প্রদায়ের অর্জুন বেদ সপরিবার খয়রাশোলের রসা গ্রামে এসে থাকতে শুরু করেন। বর্তমানে অর্জুনের চার ছেলেমেয়ে আলাদা ভাবে পাশাপাশি থাকেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল— বছর তিনেক আগে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড পেয়েছেন। রয়েছে রেশন কার্ডও। কিন্তু তাঁদের মতো হতদরিদ্র পরিবারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে এপিএল কার্ড। তাই ২ টাকা দরে নয়, চাল কিনতে হয় প্রতি কিলোগ্রাম ১৩ টাকা দরে। অত টাকা দিয়ে চাল কেনার ক্ষমতা নেই তাঁদের। নেই জবকার্ড, ঘর, আলো। তাই বাধ্য হয়েই ভিক্ষা আর বনে শিকার ভরসা।

গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, সাতসকালে আলু-বেগুনের ঝোল দিয়ে ভাত খাচ্ছেন মায়া বেদ, লাল্টু বেদ ও তাঁদের সন্তানেরা। মাটির জীর্ণ কুটিরের সামনে খড় কুটো জ্বালিয়ে রান্না করেছেন। মায়া বলেন, ‘‘শিকারে বের হবো এ বার।’’ একই ভাবে সামান্য কিছু মুখে দিয়ে রসদ সংগ্রহে ব্যস্ত মায়ার আত্মীয়েরাও।

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, মায়ার দাদা লোহা বেদ যক্ষ্মায় মারা গিয়েছেন। আক্রান্ত মায়ার স্বামীও। খাদ্যের অভাবে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে।

এ দিনের ছবিও খুব একটা আলাদা নয়। তবে যক্ষ্মার ওষুধ খেয়ে এখন অনেকটা ভাল লাল্টু বেদ। তিনি বললেন, ‘‘মাত্র এক পাতা ওষুধ বাকি।’’ মায়া, তাঁর ভাইয়ের বৌ নিশা, বৌদি কণিকা বেদ জানান, প্রশাসন কিছুটা সাহায্য করেছে। চাল, গম, টাকা, জামাকাপড় দিয়েছে। কিন্তু ওতে বেশি দিন চলে না। তাই ভিক্ষায় বের হতে হয়। তবে রেশন কার্ডগুলি বিপিএল-ভূক্ত করা গেলে পরিবারের জবকার্ড তৈরি হলে অবস্থা শোধরাবে।

আরও পড়ুন: ঠাকুরের ভূত যেন ভর করেছে গোটা গ্রামে, কুটিয়ার চাষির ঘরে ঘরে ‘পঞ্জা’ ছাপ

ওই সংসদের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য বিদ্যুৎ ঘোষ বলেন, ‘‘যাতে ওঁরা দু’বেলা খেতে পায় সে দিকে প্রশাসন নজর রেখেছে।’’ তবে মূল সমস্যা হল, আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত সমীক্ষায় ওই পরিবারগুলির নাম না থাকা। ওই কারণেই আবাস যোজনায় ঘর এবং খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আসার সুযোগ মিলছে না। বিষয়টি দেখেছে প্রশাসন।

খয়রাশোলের বিডিও প্রশান্ত রাজ শুক্লা বলছেন, ‘‘বিষয়টি জানার পরে জেলা প্রশাসন আমাকে রিপোর্ট করতে বলেছিল। সেই অনুযায়ী রিপোর্ট পাঠিয়েছি। ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে ওই পরিবারগুলিকে। ওদের জন্য দ্রুত জব কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। রেশনকার্ডের বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Starvation Rasa Khoyrasol Villagers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE