এভাবেই রাঢ়ের জেলায় জেলায় হবে ভেনামি চাষ। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে জোগান দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশে চাহিদার কারণে, এ বার ব্যাপকভাবে ভেনামি চাষে উদ্যোগী হল রাজ্য মৎস্য দফতর।
ভেনামি হচ্ছে বাগদা জাতের চিংড়ি। পরীক্ষামূলক ভাবে নোনা জলে চাষ করে ইতিমধ্যেই সুফল পেয়েছে তারা। শুধু নোনা জলেই নয়, হরিয়ানার ‘রোহতক’কে মডেল করে মিষ্টি জলের এলাকাতেও এ বার পরীক্ষামূলক ভাবে ভেনামি চাষে নামছে তারা। রাজ্য মৎস্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘সব ঠিকঠাক থাকলে, শুধু মিষ্টি জলের এলাকাই নয় পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো কম জলের এলাকাতেও এই মৎস্য চাষ করতে সক্ষম হবে দফতর। রাঢ়বঙ্গের ওই সমস্ত জেলার আর্থ সামাজিক অবস্থার চিত্র দ্রুত বদলাবে।’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্যের সমুদ্র লাগোয়া জেলা যেমন পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা এবং উত্তর চব্বিশ পরগণা ও হাওড়ার একাংশে নোনা জলের কারণে ইতিমধ্যেই বাগদা চিংড়ি জাতের ভেনামি চাষে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য মৎস্য দফতর। মৎস্য দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে এবং সবুজ সংকেত পেয়ে আমরা ভেনামি চাষে উদ্যোগী হয়েছিলাম। নোনা জলপ্রবণ এলাকায় ওই চাষে আনুমানিক ৬০ হাজার ম্যাট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। ওই এলাকায় এ হেন বাগদা চাষে উৎসাহ দিতে মৎস্য দফতর আরও উদ্যোগী। ওই এলাকার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চিত্র অনেকটা বদলেছে। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্বছন্দে ফেরাতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছেন।”
সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে দ্বিতীয় বার সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কিছু আগে এবং পরে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে আগামি পাঁচ বছরে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মসূচি নিয়ে সুনির্দিস্ট করে জানতে চেয়েছেন। আর তাতেই উঠে এসছে নানা কর্মসূচির কথা। অবলুপ্তির পথে বসা মাছ চাষের পুনরুদ্ধারে যেমন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। তেমনই রাজ্যবাসীর পাতে ভরপুর জোগান দিয়ে, দেশে এবং বিদেশে চাহিদা থাকা মাছ চাষে বিশেষ উদ্যোগী হতে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজ্য মৎস্য দফতরের দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশ দেশে মাছ চাষ এবং উৎপাদনে প্রথম স্থানে রয়েছে। তার পরেই এ রাজ্য পশ্চিমবাংলার নাম। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে ওই বৈঠকের পরে তাই দফতরের আধিকারিকদের কাছেও কার্যত চ্যালেঞ্জ বেঁধে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী। মৎস্য চাষ, উৎপাদন এবং বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে অন্ধ্রপ্রদেশের কাছে প্রথম স্থান যাতে ছিনিয়ে নেওয়া যায়। মাছ চাষের একাধিক প্রকল্প নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রফতানির দিকেও গুরুত্ব দিতে আলোচনা চলে বিস্তর।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে, হরিয়ানার রোহতকে ভেনামি চাষের বিষয় উঠে আসে।
যে এলাকায় ওই বাগদা জাতের ভেনামি চাষ হয়েছে, তার অনেক দূরেও নেই কোনও সমুদ্র বা নোনা জল। মিষ্টি জলে এ হেন চাষ করে প্রায় ১০ হাজার ম্যাট্রিক টন উৎপাদন স্বাভাবিক ভাবেই নজর কেড়েছে রাজ্য মৎস্য দফতরের। এত দিন তারা নোনা জলে ওই ভেনামি চাষ করে এসেছেন। এই বার তাই পরীক্ষামূলক ভাবে ওই চাষে আগ্রহ দেখায় দফতর। সে বিষয় নিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পাওয়া মাত্রেই কাজ শুরু হয়।
দিন চারেক আগে অন্ধ্রপ্রদেশের কনসালটান্ট টিমের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মন্ত্রী ও তাঁর দফতরের আধিকারিকেরা। মাটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে স্লাইড শো। একে একে চলে প্রযুক্তিগত, বৈষয়িক আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর। সংশ্লিষ্ট চাষের উপযোগী নমুনা দেওয়া থেকে শুরু করে প্রাথমিক ভাবে কি ভাবে এগোনো যাবে সে নিয়েও আলোচনা হয়েছে বিস্তর। মন্ত্রী বলেন, “দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’
দফতর সূত্রের খবর, মৎস্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যেই বর্ধমানের মেমারির চৈতখণ্ড-এ থাকা রাজ্য মৎস্য দফতরের এসএফডিসি-তে শুরু হয়েছে উদ্যোগ। মাটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে মিষ্টি জলের ভেনামি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় আবহাওয়া এবং অন্যান্য উপযোগী বিষয় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালু করেছে দফতর। দফতরের এক কর্তার দাবি, সব ঠিক ঠাক থাকলে, বাঙালির পাতে শুধু বাগদা জাতের ভেনামি ভরপুর নয়, রাঢবঙ্গের পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম ও বর্ধমান এবং উত্তর বঙ্গেও দাপিয়ে চাষ করবে দফতর।
রাজ্য মৎস্য দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা তথা জেনারেল ম্যানেজার (প্রযুক্তি)বিজন কুমার মণ্ডল বলেন, “নোনা জলে তো আমরা ভেনামি প্রজাতি চাষ করেছি। এই বার মিষ্টি জলে চাষ করা নিয়ে অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আসা অনিল গানেকর মত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করার জন্য ইতিমধ্যেই আমরা মেমারির এস এফ ডি সি র প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy