Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্রপতিকে ই-মেল, ইস্তফায় ইচ্ছুক সুশান্ত

অবশেষে বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন সুশান্ত দত্তগুপ্ত। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে একটি ই-মেল বার্তা পাঠিয়ে তিনি তাঁর এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০২
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত

অবশেষে বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন সুশান্ত দত্তগুপ্ত। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে একটি ই-মেল বার্তা পাঠিয়ে তিনি তাঁর এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

বুধবার রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে ই-মেলটি কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মতামত জানার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রক সূত্রে খবর, সুশান্তবাবুকে তাঁর পদত্যাগের ইচ্ছাপত্র চিঠির আকারে, তাঁর স্বাক্ষর-সহ পাঠাতে বলা হচ্ছে। সুশান্তবাবু সেটি পাঠালে তা গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, কেন্দ্রও চায় সুশান্তবাবু স্বেচ্ছায় সরে যান। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে সরাসরি পদত্যাগ করতে বলা হলে সেটা নজিরবিহীন ঘটনা হতো।

গত বৃহস্পতিবারই গভীর রাতে সুশান্তবাবু পুলিশি পাহারায় শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। তাঁকে আক্রমণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এই মর্মে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগও দায়ের করেন তিনি। তখনই বিশ্বভারতীতে জল্পনা শুরু হয় যে, উপাচার্য আর ফিরবেন না। কিন্তু তার পরেও রবিবার ক্যাম্পাসে ফিরে সোমবার রুটিনমাফিক কাজকর্ম করেছিলেন সুশান্তবাবু। কিন্তু বুধবার ফের বিশ্বভারতী ছাড়েন তিনি। বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীতে স্বাভাবিক কাজকর্মই হয়েছে। এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘উপাচার্যের ই-মেলের প্রতিলিপি আমরা পাইনি।’’

সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে জমা হওয়া একাধিক অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ মন্ত্রক। তার সুপারিশ অনুসারে গত জুন মাসে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে মন্ত্রক। উপাচার্য যে জবাব দেন, তাতে সন্তুষ্ট না-হয়ে তাঁকে সরানোর জন্য সুপারিশ পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। এ বিষয়ে আইন কী বলছে, তা স্পষ্ট করতে ফের ওই সুপারিশ মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেয় রাষ্ট্রপতির সচিবালয়। আইন মন্ত্রক এখনও এ বিষয়ে স্মৃতি ইরানির মন্ত্রককে কিছু জানায়নি। কিন্তু তার আগেই নিজেই ই-মেল করে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন সুশান্তবাবু। সূত্রের খবর, তিনি ই-মেলে অভিযোগ করেছেন যে, মানবসম্পদ মন্ত্রক-নিযুক্ত কমিটি তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেয়নি। তাঁর কার্যকালে বিশ্বভারতীর কী কী উন্নতি হয়েছে, তা-ও তিনি সবিস্তার জানিয়েছেন ই-মেলে। সুশান্তবাবুর দাবি, বিশ্বভারতী রাজনৈতিক নেতাদের এবং কায়েমি স্বার্থসম্পন্ন কিছু লোকের ক্রীড়াভূমি হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে পাঠভবন ও শিক্ষাসদনের ছাত্রদের জন্য আসন সংরক্ষণের বিরোধিতা করায় তাঁকে নিশানা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

মানবসম্পদ মন্ত্রকের বিরুদ্ধেও এত দিন রীতিমতো লড়াকু অবস্থানই নিয়ে আসছিলেন সুশান্তবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির বৈধতা এবং তাঁকে পাঠানো কারণ দর্শানোর চিঠির বিরোধিতা করে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তা হলে রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে কোনও পদক্ষেপের আগেই কেন ইস্তফা দিলেন? একটি সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইলটি যাওয়ার পরেই সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে ঘরোয়া ভাবে তাঁকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়। তা মেনেই তিনি ইস্তফা পাঠিয়েছেন। এমনিতে তাঁর কার্যকালের আরও এক বছর বাকি ছিল। বুধবার সুশান্তবাবু কলকাতায় বলেন, ‘‘আমি পুরো সময় কাজ করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশের জন্য কাজ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ভাবে চলতে পারে না। তাই ইস্তফা পাঠিয়েছি।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রেও খবর, বিশ্বভারতীতে সুশান্তবাবুর কাজ চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব ছিল না। কারণ যে পদস্থ আধিকারিকেরা উপাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁরাও এখন আর তাঁর কথামতো কাজ করতে রাজি নন। নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে নতুন পদ তৈরি, বিধি ভেঙে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ, কর্মসমিতির অনুমোদন ছাড়াই পছন্দের প্রকল্পে মোটা টাকা বরাদ্দের যে সব অভিযোগ উঠেছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে, সে সব কাজে এই আধিকারিকেরাই বরাবর তাঁর সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু হাওয়া ঘুরছে, বুঝতে পেরে মঙ্গলবার উপাচার্যের কিছু প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হননি ওই আধিকারিকেরাও। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলেও সমর্থন হারানোর পরে তিনি যে আর কাজ চালাতে পারবেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সুশান্তবাবুর কাছে।

গত বছর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন উপাচার্য। অভ্যন্তরীণ কোটা বাতিল করতে চেয়ে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের লাগাতার বিক্ষোভে তাঁকে কার্যত হার মানতে হয়। পছন্দের ব্যক্তিদের প্রতি পক্ষপাত এবং বিধি ভেঙে কিছু বিশেষ বিভাগে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর অভিযোগে ক্ষুব্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ। সেই সঙ্গে ‘ন্যাক’-এর মূল্যায়নে ‘বি’ গ্রেড পাওয়ার হতাশা, এবং তাঁর নানা ‘অনিয়ম’-এর জেরে আদালতে মামলা লড়তে গিয়ে বিপুল খরচ, এ সবই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়িয়েছে।

অন্য দিকে মন্ত্রকের কাছে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে মূলত দু’রকম অভিযোগ এসেছিল— আর্থিক গরমিল এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থা। প্রথম ক্ষেত্রে অভিযোগ, তিনি উপাচার্য হিসাবে বেতন নেওয়ার পাশাপাশি আগের সংস্থা থেকে পেনশনও নিয়ে যাচ্ছিলেন। যা নিয়মবিরুদ্ধ। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত খরচের বিল বিশ্বভারতীর টাকায় মেটানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অভিযোগ, পদের অপব্যবহার করে নিয়মের বাইরে গিয়ে কন্ট্রোলার অব এগজামিনেশন-সহ প্রায় ২৫টি পদে নিয়োগ করেন সুশান্তবাবু। নিয়োগে স্বজনপোষণের অভিযোগ ছাড়াও, অধিকাংশ পদে নিযুক্তদের আবশ্যিক যোগ্যতাও ছিল না বলে অভিযোগ। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মীকে বেতন হিসাবে বাড়তি অর্থ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও ছিল।

সুশান্তবাবুর কার্যকালে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্য ও যৌন হেনস্থার একাধিক নালিশ ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। যৌন হেনস্থার কারণে পড়া ছেড়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে হয় এক ছাত্রীকে। যা নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে একাধিক বার ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সংসদে সরব ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসার পরে প্রথমে তদন্ত কমিটি এবং পরে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই শো-কজ নোটিস পাঠানো হয়েছিল সুশান্তবাবুকে। মন্ত্রক জানিয়েছে, তাঁর জবাবে মন্ত্রক সন্তুষ্ট নয়। তাই তাঁকে সরানোর জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হয়।

তবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে মন্ত্রকের এমন পদক্ষেপ বিধিসম্মত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ বলেও অভিযোগ কিছু মহলের। যদিও মন্ত্রকের যুক্তি, যে ভাবে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসছিল, তার পরে মন্ত্রকের পক্ষে হাত গুটিয়ে বসে থাকা সম্ভব ছিল না।

abpnewsletters Visva Bharati santiniketan bolpur Sushanta Dattagupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy