রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে ‘সতর্কবার্তা’ ইতিমধ্যেই দিয়েছে নীতি আয়োগ। বুধবার পেশ হওয়া আগামী আর্থিক বছরের জন্য (২০২৫-২৬) বাজেটের যে তথ্য রাজ্য সরকার প্রকাশ করেছে, তাতে কোষাগারের পরিস্থিতি সেই সতর্কবার্তাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে। রাজস্ব এবং রাজকোষ ঘাটতি ঊর্ধ্বমুখী। পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণও বাড়তির দিকে। সমান্তরালে ধার শোধের বোঝা আরও বেশি চাপতে চলেছে রাজ্যের উপর। এই অবস্থায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পে বরাদ্দ তুলনায় কিছুটা কমানো এবং কিছু দফতরের বরাদ্দ তেমন একটা না বাড়ার ইঙ্গিতকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আগামী বছরেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে এই পূর্ণাঙ্গ বাজেটে গ্রামীণ উপভোক্তা (আবাস প্রকল্পের মাধ্যমে) এবং মহিলাদের খাতে অর্থ বরাদ্দ করতে গেলে কিছুটা কাটছাঁটের পথে হাঁটতেই হত রাজ্যকে। আবাসে বরাদ্দ হয়েছে ১৫,৪৫৬ কোটি টাকা, লক্ষ্মীর ভান্ডারে ২৬,৭০০ কোটি টাকা। সেই সূত্রে পঞ্চায়েত দফতরের বরাদ্দ বিপুল বেড়ে হয়েছে ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি ও নারী-শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা।
রাজ্যের বাজেট তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেটের তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, রাজস্ব কাঙ্ক্ষিত হারে আসেনি। রাজকোষ ঘাটতিও প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেড়েছে। আগামী বছর (২০২৫-২৬) রাজস্ব ঘাটতি অনেকটা কমানোর আশা রাখা হলেও, রাজকোষ ঘাটতি কিছু বাড়বে, মনে করছে অর্থ দফতর। পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। তার পরেও আগামী বছর প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা ধার করার পথ খোলা রেখেছে রাজ্য।
যদিও, পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র বলেন, “রাজ্যস্ব, জিএসডিপি এবং সব ক্ষেত্রে বৃদ্ধি রয়েছে। কেন্দ্রের ঋণ রয়েছে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। জিডিপি-র নিরিখে তা ৫৬.১%।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র প্রাপ্যের টাকা দিচ্ছে না। ৮০ হাজার কোটি টাকা ধার শোধ করতে হচ্ছে।” অমিতের দাবি, “১১.৯৪% জিডিপি বৃদ্ধি কোনও রাজ্যে নেই।”
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “রাজ্যের নিজস্ব করের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে রাজ্য-জিএসটি বাবদ। জমি-বাড়়ির রেজিস্ট্রেশন বাবদ ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আবগারি ক্ষেত্রে রাজ্য প্রায় ২২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা পেতে চাইছে। বিক্রয় করের (পেট্রল-ডিজ়েল-সহ কিছু উপাদান) থেকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা আসবে বলে অনুমান রাজ্যের।”
বাজেট ভাষণে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিএসডিপি) ২০২৪-২৫ বছরে ৬.৮০% বেড়ে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। জাতীয় বৃদ্ধির হার সেখানে ৬.৩৭%। গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রের বেকারত্বের হার ছিল ৮%, সেখানে রাজ্যের তা ৪.১৪%। দারিদ্র থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১.৭২ কোটি মানুষ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)