Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ধর্ষণে এক নম্বরে উঠে এল পশ্চিমবঙ্গ! সংসদে তথ্য দিয়ে জানালেন মন্ত্রী

ধর্ষণে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে! অন্তত মামলার নিরিখে তো বটেই। সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে তেমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হরিভাই প্রতিভাই চৌধুরী। সেই তথ্য বলছে, গত দু’বছরে (২০১২-১৪) গোটা দেশের মধ্যে ধর্ষণের মামলায় এক নম্বরে স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৫:০৭
Share: Save:

ধর্ষণে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে! অন্তত মামলার নিরিখে তো বটেই। সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে তেমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হরিভাই প্রতিভাই চৌধুরী। সেই তথ্য বলছে, গত দু’বছরে (২০১২-১৪) গোটা দেশের মধ্যে ধর্ষণের মামলায় এক নম্বরে স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ১৬৫৬টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার। সেই রাজ্যে ওই সময়ে নথিভুক্ত ধর্ষণের ঘটনা ৪৮৪টি।

সম্প্রতি লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ধর্ষণ সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন করেছিলেন সাংসদ বি সেনগুত্তুভান। ঘটনাচক্রে নারী দিবসের দিনে সংসদে প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। সেখানেই তিনি ওই তথ্য জানিয়েছেন। যা শুনে তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের পাল্টা দাবি, ‘‘প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনাই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু মহিলারা এখন অন্তত অত্যাচারের ঘটনা নির্ভয়ে থানায় জানাচ্ছেন। যা আগে সম্ভব ছিল না। সেই কারণে সংখ্যাটা এত বড় লাগছে।’’ ডেরেকের মতে, ‘‘বিহার ও উত্তরপ্রদেশে প্রকৃত সংখ্যা হয়তো দশ গুণ বেশি হবে। কিন্তু সেখানে ভয়ে কেউ থানায় যায় না।’’

তবে তৃণমূল নেতার যুক্তিকে হাস্যকর বলেই মনে করেছেন সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, রিপোর্ট খুঁজেই দেখা যাক না, কত জন অপরাধী শাস্তি পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনায় ১৮৪৮ জন গ্রেফতার হলেও, দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন মাত্র ৫৭ জন। এ ক্ষেত্রে গোটা দেশে ২৮ তম স্থান পেয়েছে রাজ্য। ঋতব্রতের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এখন গোটা দেশে ধর্ষণের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। জঙ্গলের শাসন চলছে। মহিলারা সব চেয়ে অ-সুরক্ষিত।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে নিশানা করে সিপিএম সাংসদের মন্তব্য, ‘‘সরকার অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। কাটোয়ায় একজনও ধরা পড়েনি। অভিযোগ উঠেছে, পার্কস্ট্রিট কাণ্ডে মূল অভিযুক্তকে তৃণমূলই নাকি পালাতে সাহায্য করেছে। সরকার যেখানে সমাজবিরোধীদের প্রশয় দেয়, সেখানে এমন ফলই হয়।’’ অবশ্য বিরোধীদের যুক্তি খারিজ করে ডেরেক বলছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, তাপসী মালিকের পরিবার বিচার পায়নি, কিন্তু কামদুনি পেয়েছে।’’

এক সময়ে বানতলা বা ফুলবাগানের মতো ঘটনাগুলি পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে কালো আঁচড়ের দাগ হয়ে রয়েছে। ক্ষমতা বদলের পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। কিন্তু পার্কস্ট্রিট থেকে কামদুনি—মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, নারী নির্যাতন রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মনোভাব নিয়েও। এমন একটা সময়েই এই সরকারি তথ্য প্রকাশ্যে পেশ করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এমন দিনেই তারা এটা প্রকাশ্যে আনল, যে দিন আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে কলকাতার রাস্তায় হেঁটেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ সে দিন সকালেই সংসদের টেবিলে সাংসদদের প্রশ্নের যে জবাব জমা পড়েছে, তাতেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ধর্ষণের মামলায় এক নম্বরে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rape kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE