Advertisement
০১ মে ২০২৪
9 years of Narendra Modi Government

সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপের জন্য ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে সভা ভাগ করে দিল বিজেপি, কে ক’টা পেলেন

তিন মাস ধরে রাজ্যের সব বিধানসভা এলাকায় মোট হাজার সভা করবে বিজেপি। ইতিমধ্যেই সেগুলি শুরুও হয়ে গিয়েছে। কোন নেতা কোথায় যাবেন, তার তালিকাও তৈরি করে ফেলেছে গেরুয়া শিবির।

Sukanta Majumder, Dilip Ghosh and Suvendu Adhikari

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ— কোন সভায় কোন নেতা থাকবেন? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩ ১০:৩৭
Share: Save:

চলতি জুন মাসে রাজ্যের ২৯৪ বিধানসভা এলাকার একটি করে সভা করবে বিজেপি। কোন সভায় কোন নেতা থাকবেন, তার তালিকাও তৈরি হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি— ৬৯টি সভা করবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর পরেই সভার সংখ্যা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। তাঁর জন্য ধার্য করা হয়েছে মোট ২৩টি সভা। তার মধ্যে চাকদহ, কাকদ্বীপ ও বলাগড়ের সভায় শুভেন্দুর সঙ্গে সুকান্তও থাকবেন। রাজ্য বিজেপির তৃতীয় মুখ হিসাবে গুরুত্ব পান প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে ১০টি বিধানসভা এলাকার জন্য।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের ন’বছর পূর্ণ হয়েছে। এই সময়কালে কেন্দ্র কোন কোন ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে, তা নিয়ে দেশ জুড়ে প্রচারে নেমেছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি। দলের লক্ষ্য এর মধ্য দিয়েই আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দেওয়া। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সেই মতো এই রাজ্যেও কর্মসূচি শুরু হয়েছে বিজেপির। ঠিক হয়েছে, রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক ১৩০৯ মণ্ডলের মধ্যে এক হাজারটিতে একটি করে সভা করা হবে। রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় তিন বা চারটি করে মণ্ডল রয়েছে বিজেপির। দল ঠিক করেছে, প্রথম পর্বে বিধানসভা পিছু একটি করে সভা হবে জুন মাসে। সেই মতোই সুকান্ত, শুভেন্দু এবং দিলীপের মধ্যে সভার সংখ্যা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।তবে রাজ্যের প্রধান তিন নেতার মধ্যে সভার সংখ্যায় এত ফারাক কেন, তা নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতারা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। সকলেরই বক্তব্য, ‘‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ ও সাংগঠনিক বিষয়।’’

মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তি পালনের এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহা জনসম্পর্ক অভিযান’। তারই অঙ্গ হিসাবে হাজার সভা করার পরিকল্পনা। এ ছাড়াও প্রতিটি মণ্ডলে মিছিল, শিল্পী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে গেরুয়া শিবির। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে হাজার সভার উপর। ঠিক হয়েছে জুন, জুলাই এবং অগস্ট মাস ধরে চলবে এই সভা। প্রতি মাসেই প্রত্যেক বিধানসভায় একটি করে সভা হবে। এর পরেও যেগুলি বাকি থাকবে, সেগুলি দুর্গাপুজোর আগে পর্যন্ত চলতে থাকবে।

আগে জানা গিয়েছিল এই কর্মসূচিতে সুকান্ত, শুভেন্দু এবংদিলীপকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে। রাজ্য দলের প্রধান তিন মুখ ১০০টি করে সভা করবেন। বাকি ৭০০টি সভা করবেন বাকি রাজ্য নেতা, সাংসদ, বিধায়করা। এ ছাড়াও দলের পরিচিত মুখ যাঁরা, তাঁদের এই কর্মসূচিতে কাজে লাগানো হবে। সেই কর্মসূচির প্রথম পর্বের তালিকা আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপ মোট ৯৯টি সভা করবেন প্রথম পর্বে। বাকি ১৯৫টি সভার জন্য এই রাজ্যের সাংসদ হিসাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, শান্তনু ঠাকুর যেমন রয়েছেন, তেমনই বাকি পরিচিত সাংসদ, বিধায়কেরাও রয়েছেন। তালিকায় জায়গা পেয়েছেন রাজ্যসভায় দলের প্রাক্তন সাংসদ তথা অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষেরাও।

প্রশ্ন উঠেছে, তিন নেতা সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপের সভার সংখ্যা সমান থাকবে বলে আগে ঠিক হলেও পরে তা বদলাল কেন?এই কর্মসূচি পালনের জন্য বিজেপি একটি কমিটিও তৈরি করে। সুকান্তের তৈরি সেই কমিটির শীর্ষ রয়েছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কার ক’টা সভা রয়েছে, তার সংখ্যা আমি বলতে পারব না। তবে সবটাই করা হয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে। এর মধ্যে কোনও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নেই।’’ একই সঙ্গে সৌমিত্র বলেন, ‘‘এটাই শেষ তালিকা নয়। এর পরেও দু’টি পর্বে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে সভা হবে। তা ছাড়াও বড় মাপের মিছিল এবং জনসম্পর্ক কর্মসূচি রয়েছে। দলে যেখানে যাঁকে দেওয়া দরকার, সেটা ভেবেই তালিকা বানানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্য ‘গন্ধ’ খোঁজার কোনও কারণ নেই।’’

ওই কমিটির সদস্য বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও জানিয়েছেন, এই তালিকা চূড়ান্ত নয়, প্রাথমিক। এতে কিছু রদবদল হবে।যদিও রাজ্য বিজেপির আর এক নেতার বক্তব্য, ‘‘বিজেপি অন্য দলের মতো নয়। দলীয় সংবিধান মেনেই সব হয়। দলের সাংগঠনিক প্রধান রাজ্য সভাপতি। তাই তাঁর সভা বেশি হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। পরিষদীয় নেতাকে আরও অনেক কাজ করতে হয়। তুলনায় সংগঠনের দায়িত্ব অনেকটাই কম। সেই কারণেই তিনি কম সভা করবেন।’’ দিলীপের জন্য বরাদ্দ সভার সংখ্যা এত কম কেন? ওই নেতা বলেন, ‘‘দিলীপদা দীর্ঘ সময় রাজ্য সভাপতি থেকেছেন। গোটা রাজ্য ঘুরেছেন। এখন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়ার পরেও নিয়মিত তাঁর সফর চলে। এই পর্বেও দিলীপদাকে যতটা সম্ভব বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি অনেক সাংগঠনিক বৈঠক নিচ্ছেন বিভিন্ন মণ্ডলে গিয়ে।’’ তবে রাজ্য বিজেপিতে আরও একটি প্রশ্ন ঘুরছে— কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে হাজার সভা করার ঘোষণা হলেও আদতে কি তা পূর্ণ করে উঠতে পারবেন রাজ্য নেতৃত্ব?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Sukanta Majumdar Suvendu Adhikari Dilip Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE